কোটি কোটি ভক্তের চোখ ছিল আজেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস এইরেসে। কারণ ঘরের মাঠে আর্জেন্টাইন মহাতারকার শেষ ম্যাচ। ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে ম্যাচটা ছিল বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ঘরের মাঠে আর্জেন্টিনার শেষ ম্যাচ। কনমেবল অঞ্চল থেকে সবার আগে বিশ্বকাপের মূল পর্ব নিশ্চিত করেছিল বলে লিওনেল স্কালোনির দলের জন্য এ ম্যাচের গুরুত্ব খুব একটা ছিল না।
তবে এরপরও ম্যাচটা নিয়ে কয়েকদিন আগে থেকে আলোচনার কমতি ছিল না। সে আলোচনার মূল কারণ লিওনেল মেসি! জাতীয় দলের জার্সিতে ঘরের মাঠে এটাই হতে পারে আর্জেন্টাইন মহাতারকার শেষ ম্যাচ! সব ছাপিয়ে তাই ম্যাচটা বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছিল ঘরের মাঠে মেসির ‘বিদায়ী’ ম্যাচ বলে। আর সে ম্যাচে স্কোরলাইনে কী বা আসে যায়!
তবে ঘরের দর্শকদের থেকে মেসি বিদায়টা নিয়েছেন নিজস্ব ঢঙে। ‘নিজের আঙিনায়’ শেষবার খেলতে নেমে জোড়া গোল করেছেন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি। মেসির জোড়া গোলের সঙ্গে লওতারো মার্তিনেসের দারুণ এক হেডে শেষ পর্যন্ত ‘মেসিময়’ ম্যাচটা আর্জেন্টিনা জিতেছে ৩-০ ব্যবধানে।
বুয়েনস এইরেসের স্তাদিও মনুমেন্তালে ম্যাচের আগে আবেগঘন দৃশ্যের দেখা মেলে। ওয়ার্মআপের সময় মেসির কান্নাভেজা চোখ ক্যামেরা এড়ায়নি। জাতীয় সংগীতের গাওয়ার সময় তিন সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন মেসি। এ সময়কার মেসির ভারাক্রান্ত মুখাবয়ব আবেগি করবে যেকোনো আর্জেন্টিনা সমর্থক তথা ফুটবলপ্রেমীকেই।
সব আবেগ একদিকে সরিয়ে মনুমেন্তালের সবুজ ঘাসে শেষবারের মতো খেলতে নামেন মেসি। আট বারের বালন দ’র জয়ী তারকা যতবার বল পেয়েছেন, ততবারই দর্শকদের উচ্ছ্বাসে ভেসেছেন! সে উচ্ছ্বাসের মধ্যেই চতুর্থ মিনিটে মাস্তানতুয়োনোর সঙ্গে বল দেওয়া নেওয়া করে আক্রমণে ওঠেন মেসি। আক্রমণের শেষভাগে বল পান হুলিয়ান আলভারেস। আতলেতিকো মাদ্রিদ তারকা জোরালো শট নিয়েছিলেন বটে। তবে সেটি ঠেকিয়ে দিয়েছেন ভেনেজুয়েলা গোলকিপার রাফায়েল রোমো।
পরের মিনিটে ক্রিস্তিয়ান রোমেরোর হেড ভেনেজুয়েলার জাল খুঁজে নিয়েছিল। কিন্তু হেডের আগে পরিষ্কার ব্যবধানে অফসাইড পজিশনে থাকায় রোমেরোর গোলটি বৈধতা পায়নি।
শুরুতেই এমন আক্রমণাত্মক খেলা দেখে আর্জেন্টাইন সমর্থকেরা স্বস্তি পেলেও দ্রুতই সে স্বস্তি উবে যেতে থাকে! এমন নয় যে স্কালোনির দল আক্রমণাত্মক খেলেনি। আর্জেন্টিনা বল পায়ে দাপট দেখিয়েছে ঠিকই, গতিময় ফুটবলও খেলেছে। কিন্তু সেটা ছিল মধ্যমাঠ থেকে ভেনেজুয়েলা বক্সের আশপাশ অঞ্চলে। বক্সের ভেতর যেন কোনোভাবেই ঢুকতে পারছিলেন না মেসি-আলদামা-আলভারেসরা।
২৯ মিনিটে বক্সের বাইরে মেসিকে ফাউল করলে ফ্রি কিক পায় আর্জেন্টিনা। এমন জায়গা থেকে এর আগে অনেকবারই বল জাল জড়িয়েছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। কিন্তু এবার ২৬ মিটার দূর থেকে বল পোস্টেই রাখতে পারলে মেসি। তাঁর শট ভেনেজুয়েলার মানবদেয়ালে বাধাগ্রস্ত হয়।
তবে সমর্থকদের হতাশ করেননি ৩৮ বছর বয়সী এ কিংবদন্তি। ১০ মিনিট পর মেসির গোলেই এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। মধ্যমাঠ থেকে প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে পায়ের বাইরের অংশ নিয়ে লম্বা করে বল বাড়ান লেয়ান্দ্রো পারেদেস। দারুণ ক্ষিপ্রতায় সেটি নিয়ন্ত্রণে নেন আলভারেস। একজনকে ড্রিবল করে পজিশনও তৈরি করেছিলেন আতলেতিকো স্ট্রাইকার। কিন্তু নিজে শট না নিয়ে পাশে দাঁড়ানো মেসির সামনে বল দেন আলভারেস। বক্সের ভেতর থেকে মেসিও সুযোটগটা হাতছাড়া করেননি। দারুণ এক চিপে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে (১-০) দেন মেসি।
৬১ মিনিটে বক্সের ভেতর ঢুকে বাঁপ্রান্ত শট নিয়েছিলেন মেসি। আর্জেন্টাইন অধিনায়কের শট ভেনেজুয়েলা গোলকিপারের শরীরে লেগে ফেরত গেলে আবারও বল পান মেসি। ততক্ষণে জটলা তৈরি হয়ে যায় মেসির সামনে। মেসির ফিরতি শট সে জটলায় বাধাগ্রস্ত হয়। পরের মিনিটে আলমাদার সঙ্গে বল দেওয়া নেওয়া করে বক্সের বাইরে থেকে মেসির নেওয়া শট প্রতিপক্ষ এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে বেরিয়ে যায়।
৬৬ মিনিটে বক্সের ডান প্রান্ত থেকে ঢুকে পড়ে কাট-ইন করেছিলেন মেসি। সে বল ভেনেজুয়েলার এক ডিফেন্ডার হয়ে সামনে পান আলদামা। কিন্তু তরুণ এ উইঙ্গার লক্ষ্যে শট রাখতে পারেননি।
আক্রমণ চালালেও কোনোভাবেই ব্যবধান বাড়াতে পারছিল না আর্জেন্টিনা। ৭৪ মিনিটে আলভারেসেরে বদলি হিসেবে লওতারো মার্তিনেসকে নামান স্কালোনি। মাঠে নেমে দুমিনিটের মধ্যেই গোলের দেখা পান লওতারো। মেসির বাড়ানো থ্রু বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বক্সের বাঁপ্রান্ত থেকে ক্রস করেন আরেক বদলি নামা নিকো গনসালেস। সে ক্র ক্রসে বক্সের ভেতর উড়ন্ত হেড করে স্কোরলাইন ২-০ করেন লওতারো।
৪ মিনিট পর আবারও আর্জেন্টিনাকে উদযাপনের উপলক্ষ্য এনে দেন মেসি। এবার বক্সের ডান প্রান্ত থেকে আলমাদার বাড়ানো বলে দারুণ ফিনিশিংয়ে স্কোরলাইন ৩-০ করেন মেসি।