• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শত গোল অথচ বিশ্বকাপে গোলশূন্য!


পার্থ প্রতীম রায়
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২২, ০৬:১৯ পিএম
শত গোল অথচ বিশ্বকাপে গোলশূন্য!

ক্লাবে ভালো খেলার পর জাতীয় দলে ভালো খেলতে না পারার অপবাদ কিংবদন্তি ফুটবলারদের জন্য নতুন কিছু নয়। তবে এর ব্যতিক্রম হিসেবে উচ্চারণ করা যেতে পারে ইরানের ফুটবলার আলি দাইয়ের নাম। ক্লাব ক্যারিয়ারের চেয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক ফুটবলকে। সাফল্য স্বরুপ হয়েছিলেন আন্তর্জাতিক ফুটবলের সর্বোচ্চ গোলদাতা। যদিও শেষ পর্যন্ত ওই রেকর্ড হারিয়েছেন আরেক কিংবদন্তি ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর কাছে। হয়তো এটা নিয়ে তার মধ্যে কোনো আক্ষেপ কাজ করবে না। তবে দুইবার বিশ্বকাপ মঞ্চে খেলে গোল করতে না পারার বেদনা নিশ্চয় সারা জীবনই তাকে পোড়াবে।

প্রথম ফুটবলার হিসেবে আন্তর্জাতিক ফুটবলে শত গোলের রেকর্ড ছুঁয়েছিলেন আলি দাই। ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় ছিলেন জাতীয় দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ। তাই তো ক্লাব ফুটবলে তার কোনো সাফল্য নেই বললেও চলে। ক্লাবকে সাফল্য এনে দিতে না পারায় কিছুদিন পর পরই তাকে বদল করতে হয়েছে ক্লাব।

এশিয়া এবং ইউরোপ, দুই মহাদেশের লিগে খেলার অভিজ্ঞতা পেয়েছেন আলি দাই। বার বার ক্লাব বদল করলেও কখনই নির্দিষ্ট কোনো দলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি। তবে এ নিয়ে তার মধ্যে নিশ্চয় কোনো আক্ষেপ কাজ করে না। কারণ তিনি যে আন্তর্জাতিক তারকা।

মেসি-নেইমার কিংবা রোনালদোরা ক্লাব ফুটবলে ভুরি ভুরি গোল করলেও আন্তর্জাতিক ফুটবলে কেন যেন তাদেরকে খুঁজে পাওয়াটা একটু কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। তবে এই জায়গাটাতেই ব্যতিক্রম ছিলেন আলি দাই। শুধু ব্যতিক্রম নয়, তাদের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন আলি দাই। কারণ তার হাত ধরেই যে ফুটবল বিশ্ব প্রথম দেখেছিল ব্যক্তিগত শত গোলের রেকর্ড।

এশিয়ান কাপ, বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে দারুণ ফুটবল খেলা আলি দাই সুযোগ পেয়েছিলেন বিশ্বকাপ খেলারও। সেখানে ছয় ম্যাচ খেললেও একবারও প্রতিপক্ষের গোল পোস্টে বল ছোঁয়াতে পারেননি তিনি।

প্রথমবার ১৯৯৮ বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ মিলেছিল আলি দাইয়ের। সেবার দূর্দান্ত ফর্মে থাকা আলি দাইকে কেন্দ্র করেই গড়া হয়েছিল ইরানের বিশ্বকাপ স্কোয়াড। তবে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত সেই বিশ্বকাপে নিজেদের প্রত্যাশামাফিক পারফর্ম করতে পারেনি ইরান।

তবে সাফল্য যে ছিল না, সেটা বলা যাবে না। কারণ ভূ-রাজনৈতিক শত্রু মার্কিনদের বিপক্ষে উত্তেজনাকর ম্যাচে ২-১ গোলের জয় পেয়েছিল ইরান। এই জয়ে বড় অবদান রেখেছিলেন আলি দাই। কিন্তু দুই গোলের একটিও তার পা থেকে আসেনি।

গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেওয়া ইরানের হয়ে নিজের প্রথম বিশ্বকাপে গোল করতে পারেননি আলি দাই। বিশ্বকাপের মঞ্চে একটি গোলের জন্য তার অপেক্ষাটা বেড়ে দাঁড়ায় আরও চার বছর।

কিন্তু দূর্ভাগ্য, কোরিয়া-জাপান বিশ্বকাপে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের বাঁধা পেরুতো ব্যর্থ ইরান। সেবার নিজ ঘরের ড্রইং রুমে বসে বিশ্বকাপ দেখা আলি দাই হয়তো পণ করছিলেন, পরের বিশ্বকাপে নিজের গোলখরা ঘোচাবেন।

২০০৬ জার্মান বিশ্বকাপের আগে ইরানের হয়ে দারুণ ছন্দে ছিলেন আলি দাই। ইরানকে বিশ্বকাপে আনতে সবচেয়ে বড় ভূমিকাটা ছিল এই ফুটবলারের। বাছাইপর্বে তার করা চার গোলে ভিত্তি করেই বিশ্বকাপ মঞ্চে নাম লেখায় ইরানিরা।

জার্মানিতে আলি দাই বিশ্বকাপে নিজের গোলখরা কাটাবেন, এটাই হয়তো প্রত্যাশা ছিল ইরানের ফুটবল সমর্থকদের। তবে সেটা আর হলো কই? বাছাইপর্বের প্রভাব বিস্তার করা এই স্ট্রাইকার বিশ্বকাপ মঞ্চে যে পুরোটা সময়ই ছিলেন নিষ্প্রভ। আর এই নিষ্প্রভতার কারণে বিশ্বকাপ মঞ্চে করতে পারেননি কোনো গোল।

বিশ্বকাপে গোল না করার হতাশা নিয়েই ২০০৭ সালে ৩৭ বছর বয়সে ফুটবল ক্যারিয়ারকে বিদায় জানিয়েছিলেন তিনি। পেশাদার ক্যারিয়ারকে বিদায় জানানোর সময় তার নামের পাশে ছিল ১৪৯ ম্যাচ ১০৯ গোল। তবে তার একটি গোলও আসেনি বিশ্বকাপের মঞ্চে।

Link copied!