বাংলাদেশ দলের হেড কোচের পদ থেকে রাসেল ডোমিঙ্গো পদত্যাগ করেছেন, সেটাও এক মাসের বেশি হতে চললো। তবে এই প্রোটিয়া কোচ যাওয়ার অনেক আগে থেকেই সাবেক কোচ চান্ডিকা হাথুরুসিংহের টাইগারদের কোচের পদে ফেরার গুঞ্জন চলছে।
ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের বর্তমান যুগে সারাবছরের জন্য কোচ পাওয়া যে কতটা কঠিন সেটা একাধিকবারই বোর্ড কর্তাদের মুখে শোনা গিয়েছে। কয়েকজনকে প্রস্তাব দিলেও তারা বছরের নির্দিষ্ট সময় কাজ করার শর্তে আসতে চেয়েছিলেন, তবে বিসিবি তাতে রাজি নয়।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি দলের দায়িত্বে ছিলেন শ্রীধরণ শ্রীরাম। এক পর্যায়ে তাকেই সব ফরম্যাটের কোচের দায়িত্ব দেওয়ার খররও পাওয়া গিয়েছিল। বিপিএল চলাকালীন শ্রীরামের সঙ্গে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ও সাকিব আল হাসানের বৈঠকও তখনও গুঞ্জনের পালে হাওয়া দিয়েছিল।
তবে হাথুরুসিংহের আসার গুঞ্জন তাতেও থেমে থাকেনি। দেশের শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম ফলাও করেই শ্রীলঙ্কান কোচের ফেরার খবর প্রকাশ করেছিল। যদিও বোর্ড থেকে এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে খোলাসা করে কিছু বলা হয়নি।

এরই মাঝে কিছুদিন আগে খবর বের হয়, বিসিবিকে ব্যবহার করে নিউ সাউথ ওয়েলসে নিজের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে নিয়েছেন বিসিবি। বোর্ড সভাপতির ম্যাসেজের জবাবও দিচ্ছেন না এমন খবরও বের হয়েছিল।
তবে সব গুঞ্জনের অবসান বোধহয় এবার ঘটেই গেলো। কেননা, অস্ট্রেলিয়ান ক্লাব নিউ সাউথ ওয়েলসের সহকারী কোচের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন হাথুরুসিংহ। এই খবর তার বাংলাদেশে ফেরার বিষয় প্রায় শতভাগ নিশ্চিতই করে দিয়েছে।
এর আগে বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বে বোর্ডের অন্যতম পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজনও হাথুরুসিংহের ফেরা নিয়ে বেশ পজিটিভ বক্তব্য দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ হাথুরুর অধিনে আগে ভালো করেছে, সে এখন আরও পরিণত বলেও মন্তব্য করেছিলেন সুজন। তখনই কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল হাথুরুর ফেরার ব্যাপারে।
এরপর সোমবার (৩০ জানুয়ারি) বিসিবি সভাপতির বক্তব্যে হাথুরুর আসার বিষয়ে আর সংশয় ছিল না বললেই চলে। বিসিবি যে ধরণের কোচ চায়, হাথুরুর ঠিক সেরকম বলেই উল্লেখ করেছিলেন তিনি।
সিলেটে বিপিএলে দেখতে গিয়ে পাপন বলেন, “আমরা যে ধরণের কোচ খুঁজছি, ফুল টাইম ওটাতে ও (হাথুরুসিংহে) আছে। অন্য কেউ ফুল টাইম না। কেউ হয়তো দুই শ দিন। কেউ হয়তো এক শ দিন। কাউকে আবার আইপিএলে ছেড়ে দিতে হবে। এটা আবার হাথুরুসিংহের নেই। সেদিক থেকে মনে হয় যে ওর সম্ভাবনা বেশি।”
বোর্ড প্রধানের এমন বক্ত্যবের ঠিক পরের দিনই নিউ সাউথ ওয়েলসের চাকরি ছাড়লেন হাথুরুসিংহ। একই দিনে ক্লাবের পক্ষ থেকেও এল আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। ফলে এখন দুইয়ে দুইয়ে চার মেলানো যে খুব একটা অবাস্তব কাজ হবে সেটাও কিন্তু নয়।

এখন আরও নিশ্চিত হয়েই বলা যায়, নতুন কোচ খোঁজার কাজটা তলেতলে অনেক দিনই চলছিল। সেটা ডোমিঙ্গো কোচ থাকাকালীন সময় থেকেই। আর হাথুরুর সঙ্গে খেলোয়াড়দের দ্বন্দ্বের কথা শোনা গেলেও বোর্ডের সাথে কিন্তু বেশ খাতিরই ছিল। ফলে বোর্ডও তাকেই চাইবে।
মোদ্দা কথা, হাথুররসিংহের ফেরার যে গুঞ্জন ডানা মেলছিল কয়েকদিন ধরে সেটাই গতকাল পাপনের বক্তব্য আর আজ হাথুরুর চাকরি ছাড়া, এই দুইয়ে মিলিয়ে প্রায় শতভাগ নিশ্চিত করে দিয়েছে। এখন শুধুবিসিবির আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পালাই হয়তো বাকি।
বাংলাদেশের কোচ হিসেবে তাঁর প্রথম দফায় হাথুরুসিংহকে সফল বলতেই হবে। ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে তার অধীনে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ, সেমিফাইনাল খেলেছে ২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে।
এছাড়া ঘরের মাটিতে ওয়ানডেতে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠার শুরুটাও তো হাথুরুর সময়েই। পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টানা তিনটি ওয়ানডে সিরিজ জয়েও তিনিই ছিলেন টাইগারদের হেডমাস্টার।
টেস্টে বাংলাদেশে তার অধীনে ঘরের মাটিতে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অবিস্মরণীয় জয় পেয়েছিল। এছাড়া শততম টেস্টে শ্রীলঙ্কার মাটিতেও টাইগারদের জয়ের সময় কোচ ছিলেন তিনি।