বছর চারেক আগে বাংলাদেশ ফুটবলে চমক হয়ে এসেছিলেন কোস্টারিকান ড্যানিয়েল কলিন্দ্রেস। বিশ্বকাপে খেলা স্কোয়াডে থাকার অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছিলেন বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবল খেলতে। রাশিয়া বিশ্বকাপে কোস্টারিকার স্কোয়াডে থাকা এই ফুটবলারকে নিয়ে বেশ চমকই তৈরি করে বসুন্ধরা। যদিও ওই আসরে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দেশটির জার্সিতে তার কোনো ম্যাচই খেলার অভিজ্ঞতা হয়নি। বসুন্ধরা কিংসের সৌজন্যে ওই যে বাংলাদেশে আসা কলিন্দ্রেসের, সেখান থেকে বর্তমানে তার ঠিকানা ঢাকা আবাহনী।
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী এই ক্লাবটির ইতিহাসে কলিন্দ্রেস অবশ্য বিশ্বকাপ খেলা প্রথম কোনো খেলোয়াড় নন। এর আগে ১৯৭৮ সালে ইরাকের সামির শাকির বিশ্বকাপ খেলে এসেছিলেন বাংলাদেশের ঘরোয়া লিগে খেলতে। খেলেছিলেন ঐতিহ্যবাহী আবাহনীতে। একই বছর ধানমন্ডির ক্লাবটিতে সামিরের সঙ্গী ছিলেন তারই জাতীয় দল সতীর্থ করিম মোহাম্মদ আলভি। যিনিও কিনা খেলেছিলেন বিশ্বকাপ।
আবাহনী বিশ্বকাপ খেলুড়ে কাউকে আনলে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডান চুপচাপ বসে থাকবে, তা হওয়ার নয়। অন্তত মর্যাদার লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলেও তাদেরকে আনতে হবে কাউকে না কাউকে। মতিঝিল পাড়ার দলটিও এনেছিল বিশ্বকাপ খেলা ফুটবলারকে। ইরাকের পার্শ্ববর্তী দেশ ইরান থেকে সাদা কালো শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন নাসের হেজাজি। মোহামেডানের জার্সিতে নাসের হেজাজি অবশ্য খেলেছিলেন একটি ম্যাচ। তা-ও বদলি হিসেবে নেমেছিলেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীর বিপক্ষেই। খেলোয়াড়ের চেয়ে কোচের ভূমিকাতেই বেশি দায়িত্ব ছিল হেজাজির।
নাসের হেজাজির বাংলাদেশে আসায় অবশ্য কিছুটা উপকার হয়েছিল জাতীয় দলেরও। ১৯৮৯ ইসলামাবাদ সাফ গেমসের ফুটবল ইভেন্টে বাংলাদেশকে রৌপ্য পদকের স্বাদ এনে দেন নাসের হেজাজি। বাংলাদেশ দলকে পূর্ণাঙ্গভাবে নয়, সাময়িকভাবে কোচিং করিয়েছিলেন এই ইরানি।
হালের কলিন্দ্রেস কিংবা পুরাতন যুগের সামির শাকির অথবা নাসের হেজাজি, সবাই বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে এসেছিলেন বিশ্বকাপে জাতীয় দলকে প্রতিনিধিত্ব করে। এই দেশের ঘরোয়া ফুটবল খেলে বিশ্বকাপে যাননি। উল্টো গতিপথের এই তালিকা করতে বসলে অবশ্য একজনেরই নাম পাওয়া যাবে। তিনি নাইজেরিয়ার এমেকা ইউজেগা। বিশ্বকাপ খেলার আগে নাইজেরিয়া জাতীয় দলে তার নাম উঠেছিল বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে পারফর্ম করার সুবাদে। আর সেখান থেকেই তার নাম উঠে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে। যদিও সেই সময় বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবল নয় খেলতেন ডেনমার্কের ক্লাব আলবোর্গে। তবে শিকড়ের গোড়াপত্তনটা এই বাংলার মাটিতেই।
১৯৮৭ সালে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মোহামেডানে নাম লেখান এমেকা। পরের মৌসুমেও (১৯৮৮-৮৯) বাংলাদেশের ক্লাবটির হয়ে মাতিয়েছিলেন ঢাকার মাঠ। বাংলার মাঠে করা এই পারফরম্যান্সই তাকে নিয়ে গিয়েছিল সুপার ঈগলদের ডেরায়।
সেবার জাতীয় দলে ডাক পেলেও অবশ্য বিশ্বকাপে খেলা হয়নি। খেলবেনই বা কি করে, তার দল যে বিশ্বকাপেই জায়গা করে নিতে পারেননি। জাতীয় দলে এমেকার অভিষেকের পর সুপার ঈগলদের প্রথম বিশ্বকাপ মিশনে ছিল ১৯৯৪ সালে, মার্কিন মুলুকে। ওই বিশ্বকাপে ঠিকই নিজের জায়গা করে নিয়েছিলেন এমেকা। যদিও মার্কিন মুলুকের ওই বিশ্বকাপ শেষেই থেমেছিল সুপার ঈগলদের জার্সিতে তার ছোট যাত্রা।
৬ ফুট উচ্চতার এই ফুটবলারের ক্যারিয়ারের শুরুটা ছিল ভারতের বিখ্যাত ক্লাব ইস্ট বেঙ্গলের জার্সিতে। সেখান থেকে ঢাকা মোহামেডান হয়ে বিভিন্ন জায়গাতেই খেলেছিলেন। তবে কোনো জায়গায় নিজেকে পাকাপোক্ত করতে পারেননি। ফলে যাযাবরদের মতো ঘুরে বেড়িয়েছেন এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে। সব জায়গায় গোলবন্যা তৈরি করলেও জাতীয় দলের জার্সিতে খুলতে পারেননি গোলের খাতা। ফলে ১১ ম্যাচে সুপার ঈগলদের জার্সিতে মাঠে নামলেও স্কোরশিটটা রয়ে গেছে শূন্যই।
২০০১ সালে ফুটবল ক্যারিয়ারকে বিদায় জানানো এমেকা এখন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কোচিং করিয়ে বেড়াচ্ছেন। সেই সূত্রে ২০১০ সালে এসেছিলেন বাংলাদেশেও। সাবেক ক্লাব মোহামেডানকে করিয়েছিলেন কোচিং। বর্তমানে অবশ্য নিজ দেশের একটি ক্লাবকে কোচিং করাচ্ছেন এই ফুটবলার।
আপনার মতামত লিখুন :