দ্বিতীয় ওয়ানডেতে এক ইশ সোধির স্পিন ঘূর্ণিতে লন্ডভন্ড বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ। দুই অভিজ্ঞ তামিম ইকবাল খান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ছাড়া আর সেভাবে কেউই প্রতিরোধ গড়তে পারেনি কিউইদের সামনে। এই লেগ স্পিনার তুলে নিয়েছেন বাংলাদেশের ছয় ব্যাটসম্যানকে। বাংলাদেশ দল থামে সবকয়টি উইকেট হারিয়ে ১৬৮ রানে। টাইগারদের হার ৮৬ রানে। তাও ৫৩ বল বাকি থাকতে। এরআগে নিউজিল্যান্ড ৪৯.২ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে করে ২৫৪ রান। সিরিজে ১-০তে এগিয়ে কিউইরা। ২০০৮ সালের পর বাংলাদেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশকে হারাল নিউজিল্যান্ড।
নিউজিল্যান্ডের দেয়া ২৫৫ রান তাড়ায় বাংলাদেশের হয়ে ইনিংস উদ্বোধন করতে আসেন তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। প্রথম পাঁচ ওভারে দুজনই খেলেছেন সতর্কভাবে। ৫ ওভার শেষে বাংলাদেশ করে ১৭ রান। ষষ্ঠ ওভারেই লিটনের বিদায়। নিজেকে হারিয়ে খুঁজে ফেরা লিটন ফিরেন মাত্র ৬ রান করে। তার উইকেটটি তুলে নেন কাইল জেমিসন।
এরপর সিনিয়র তামিমের সঙ্গে জুটি গড়তে উইকেটে আসেন জুনিয়র তামিম। দুই জনের রসদটা জমে উঠে ভালই। ২৮ বলে আগ্রাসী ব্যাটিং করে দুই তামিম যোগ করেন ৪১ রান। এরপরিই বিদায় জুনিয়র তামিমের।
ইশ সোধিকে তুলে মারতে গেলে, এক্সট্রা কাভারে ফার্গুসনের হাতে ধরা পড়েন তিনি। তার ১২ বলে ১৬ রানের ইনিংস শেষ এখানেই। প্রথম পাওয়ারপ্লের পরও আক্রমণাত্মক ভাবটা ধরে রেখেছিলেন তরুণ ব্যাটসম্যান।
২০২১ সালের পর ওয়ানডেতে ফিরেছিলেন সৌম্য। তবে ২ বছর পর ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে ২ বল টিকলেন শুধু। সোধির বলে লেগ সাইডে ঘুরিয়ে খেলতে গিয়ে লিডিং-এজড হয়েছেন এ বাঁহাতি। রান করতে পারেননি কোনো। বেশিক্ষণ উইকেটে টিকতে পারেননি তাওহীদ হৃদয়। ফিরেন মাত্র ৪ রান করে। তাকেও ফেরান সোধি।
ইনজুরি থেকে ফিরে ব্যাট হাতে দারুণ খেলা তামিম ইকবালের সঙ্গে জুটি গড়ার জন্য ক্রিজে আসেন আরেক অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তবে, রিয়াদ-তামিমের জুটি লম্বা হয়নি। ভাঙ্গে ২২ রানে তামিমের বিদায়ে। তামিম থেমেছেন ৪৪ রান করেই। ৫৮ বলের ইনিংসে সাবেক অধিনায়ক মেরেছেন ৭টি চার। ভালো শুরুর পরও উইকেট ছুড়ে এলেন তিনি।
এরপর শেখ মেহেদির সঙ্গে লড়াইটা চালিয়ে যান রিয়াদ। তবে ৪২ রানের এই জুটি ভাঙ্গেন সেই ইশ সোধি। আর ১৭ রান করা মেহেদির উইকেট তুলে নেওয়া মাত্রই ক্যারিয়ারে প্রথম বারের মতো পাঁচ উইকেট পেল সোধি।
ব্যাট হাতে একাই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন রিয়াদ। তবে ৪৯ রানে থামে অনেকদিন পর আবারও দলে জায়গা পাওয়া রিয়াদ। পার্ট টাইমার কোল ম্যাকনকির বলে আউট হন তিনি।
এরপর শেষ দিকের ব্যাটসম্যানরা সেভাবে প্রতিরোধ গড়তে না পারলে বাংলাদেশকে হারতে হয়েছে বড় ব্যবধানে। নাসুমের দুই ছয় ও এক চারে ২১ রানের ইনিংসটি শুধু হারের ব্যবধানটা কমায়। কিউইদের হয়ে একাই ছয় উইকেট নেন সোধি।
এরআগে, শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নামে নিউজিল্যান্ড। নতুন বলে ছন্দে খুঁজে পেয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। বাংলাদেশকে প্রথম উইকেট এনে দিয়েছেন তিনিই। তৃতীয় ওভারে এসে উইল ইয়ংকে ফেরান তিনি। ৮ বলে শূন্য রান করা এই ব্যাটারের বাউন্সার লাফিয়ে ওঠে ব্যাট সরাতে যান, কিন্তু ক্যাচ চলে যায় লিটন দাসের কাছে।
দ্বিতীয় উইকেটও আসে মোস্তাফিজের হাত ধরেই। এবার ১৫ বলে ১২ রান করা ফিন অ্যালেনের দারুণ এক ক্যাচ নেন প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো ফিন অ্যালেন। বাংলাদেশকে পাওয়ার প্লের ভেতরই তৃতীয় উইকেট এনে দেন আরেক পেসার অভিষিক্ত খালেদ আহমেদ। তার বেল চ্যাড বোস ক্যাচ নেন স্কয়ার লেগের ফিল্ডার তাওহীদ হৃদয়কে।
এরপর হেনরি নিকোলস ও টিম ব্লান্ডেল মিলে এগিয়ে নেন দলকে। তারা স্পিনও খেলছিলেন বেশ ভালো। শতরানের কাছে চলে যাওয়া জুটিটি ভেঙে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় উইকেট নেন খালেদ। ৬১ বলে ৪৯ রান করা নিকোলসের ক্যাচ নেন লিটন।
এরপর টম ব্লান্ডেল ফেরেন হাসান মাহমুদের দুর্দান্ত এক বলে। বাতাসে সুইং করা ইয়র্কারে তিনি বোল্ড করেন ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৬৬ বলে ৬৮ রান করা কিউই ব্যাটারকে। পরে কোলে ম্যাককোনহি নাসুম আহমেদের বলে এলবিডব্লিউ হলে দ্রুতই অলআউট হওয়ার শঙ্কায় ছিল নিউজিল্যান্ড।
কিন্তু তাদের হয়ে হাল ধরেন ইশ সোধি ও কাইল জেমিনসন। এ দুজনের ৩৯ রানের জুটিতে কিউইদের রান দুইশ ছাড়িয়েও যায় অনেকটা দূর। ২৮ বলে ২০ রান করে মাহেদী হাসানের বলে তার হাতেই ক্যাচ দিলে ইতি ঘটে এই জুটির।
এরপরই ঘটে অভূতপূর্ব এক ঘটনা। ইশ সোধিকে নন স্ট্রাইক প্রান্তে রান আউট করেন হাসান মাহমুদ। টিভি আম্পায়ার দেখে নিশ্চিত হন সেটি। পরে সাজঘরের পথও ধরেন সোধি। কিন্তু এর মধ্যে আবার সোধিকে ফিরিয়েও আনেন লিটন দাস। এই ঘটনার পর ১৯ রান আসে সোধির ব্যাট থেকে। শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে অলআউট হওয়ার আগে কিউইদের রানও গেছে আড়াইশ ছাড়িয়ে।
বাংলাদেশের হয়ে অভিষেকে তিন উইকেট পাওয়া খালেদ ৯ ওভার ২ বলে দিয়েছে ৬০ রান। তিন উইকেট পাওয়া আরেক বোলার মাহেদী হাসান ১০ ওভারে ৪৫ রানদেন।
ম্যাসেরা হয়েছেন বল হাতে ছয় উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাতে ৩৫ রান করা ইশ সোধি।