বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) নবম আসর মাঠে গড়ানোর দুই দিন আগে ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের মন্তব্যে শোরগোল পড়েছে ক্রিকেট পাড়ায়। সাকিবের মতে, বিপিএল আন্তর্জাতিক মানের আয়োজন করতে সদিচ্ছার অভাব রয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি)।
শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সাকিবের মন্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষন করেছেন সিলেট স্ট্রাইকার্সের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। তবে একই সাথে বিসিবির কিছু সীমাবদ্ধতার কথাও উঠে এসেছে তার কথায়। তার পাশাপাশি বিপিএলের মান উন্নয়নে কিছু পরামর্শও পাওয়া গেল বাংলাদেশের সফলতম অধিনায়কের কাছ থেকে।
মাশরাফি বলেন, “আমি মন্তব্যগুলো দেখি নি। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগটা হয় কি, সেখানে একটা কম্পিটিশন থাকে। আমাদের ক্যারিয়ারের ছোট বেলা থেকেই দেখে আসতেছি প্লেয়াররা অনেক গুরুত্ব দেয়। বিপিএলটা যেটা হয়েছে অনেকটা অরগানাইজেশনের মতো। অরগাইনাইজ করার ব্যাপার থাকে। ক্যালেন্ডার ইয়ারটা সেট করা ইম্পর্ট্যান্ট। ক্যালেন্ডারে এক্সাটলি কখন শুরু হবে এটা ইম্পর্ট্যান্ট।”
সুচী নির্ধারিত থাকলে বিদেশি খেলোয়াড়দেরও বিপিএলে নিয়মিত পাওয়া যাবে বলে মনে করেন মাশরাফি। এছাড়া স্পন্সরশিপ পাওয়াও বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন তিনি।
“ক্যালেন্ডার ইয়ারটা সেট হলে সুবিধা হয়। তখন ভিন্ন দেশের ক্রিকেটাররাও জানে যে কোথায় পেমেন্ট বেশি থাকলে তাদের সুইটঅ্যাবল হবে। এখন ইউএই-র সাথে বা পিএসএলের সাথে বা অন্যান্যগুলোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে যায়। জার্সি-লোগোর কথা বলেছেন। বাংলাদেশে অন্য একটা চ্যালেঞ্জ আছে মনে হয়। স্পনসরশিপ ও মালিকানা একটা চ্যালেঞ্জ আছে। বিশাল গ্যাপ থেকে যায়।”
অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে দলগুলো বোর্ড থেকে লভ্যাংশ পায়। তবে বাংলাদেশে এগুলো এখনও চালু হয়নি। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এগুলোও প্রভাব ফেলে বলে মনে করেন মাশরাফি।
সিলেট অধিনায়ক বলেন, “অন্যান্য ফ্রাঞ্চাইজিগুলো বোর্ড থেকে সুবিধা পায়। প্রফিট শেয়ারিংয়ের সুবিধা পায়। এখানে সেটা যেহেতু হয় না, ফ্রাঞ্চাইজিগুলোর একটা চ্যালেঞ্জ থাকে। স্পনসরশিপ থেকে সেই অর্থটা বের করা আনতে হয়। এইখানে একটা গ্যাপ থেকেই যায়। আসলে আরেকটু অরগাইনাইজ করা গেলে সুবিধা হয়।”
এছাড়া বাংলাদেশে অত মার্কেট ভ্যালু নেই বলে মনে হয় মাশরাফির। আইপিএলের মতো বিপিএলের টিকিট বিক্রির অর্ধ্যাংশ ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো পেলে তাদের জন্য বিনিয়োগে আরও আগ্রহ বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।
“সত্যি বলতে বাংলাদেশে তো ওই পরিমান মার্কেট ভ্যালুও নাই। এই ধরনের টুর্নামেন্ট করার জন্য যে মার্কেট ভ্যালু দরকার, ওই ভ্যালু নাই। আমার কাছে মনে হয়, অনেক সময় জোর করে অনেক দল আনা হয় বা আসে। এই টাইপের একটা ব্যাপার স্যাপার থাকে। মার্কেট ভ্যালু থাকলে হয়তো অনেক টিমই আনা যেত। আইপিএলে দেখেছি, গ্যালারির টাকা হোম ফিফটি ফিফটি করে। অনেক কিছু বিষয় আছে। এইগুলো করলে হয়তো অনেকটা জমজমাট হবে। বাট এই টুর্নামেন্টটা ইম্পর্ট্যান্ট” যোগ করেন বিপিএলের ইতিহাসে সফলতম অধিনায়ক।
মাশরাফি আরও বলেন, "কাজ না করলে তো আর বোঝা যাবে না। তো লং টাইমের একটা কাজের ব্যাপার। মার্কেট ভ্যালু কতটুকু, আপনার টিমের কাছে স্পনসর কতটুকু আসতে চাচ্ছে,.. একটা টিম যখন জানে আমি এই দলের মালিক লাইক টেন ইয়ার্স বা সেভেন ইয়ার্স, তখন কিন্তু সে লস করতে পারে। ঠিক আছে, আমি দলকে নিয়ে কাজ করবো, প্রমোট করবো। আমার টিমকে ডিসিপ্লিন ওয়েতে কাজ করলে দুই বছর পর হয়তো সে প্রফিটে চলে যাবে। বাট আনলেস যদি… এটা ফ্রাঞ্চাইজিদের জন্য একটা বিজনেস।"
"বিজনেসে যদি আপনি প্রফিট না করেন তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু লস করলে তো সমস্যা। তো ফ্রাঞ্চাইজিগুলো এই জন্য লং টাইম সাসটেইন করতে পারতেছে না। তবে এটা যদি প্রপার অর্গানাইজ করে করা হয়, যেটা সাকিব বলেছে। আমার মনে হয়, অ্যাটলিস্ট সেভেন ইয়ার্স বা পাঁচ বছরের জন্য যারা মালিক তারা টিম করা বা ডেটে করা তখন কিন্তু অনেক কিছু চেঞ্জ হওয়া সম্ভব" যোগ করেন সিলেট অধিনায়ক।