• ঢাকা
  • সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বাধা পেরিয়ে নারী ফুটবলাররা আজ এখানে


রাহাত মুস্তাফিজ
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৩, ২০২১, ০৬:২৪ পিএম
বাধা পেরিয়ে নারী ফুটবলাররা আজ এখানে

বাংলাদেশ একটা খেলা পাগলা জাতি। বাঙালি ও বাংলাদেশির শিরায় শিরায় উৎসবে মেতে ওঠার টগবগে রক্ত। কমলাপুরের এই অখ্যাত স্টেডিয়ামের দিকে তাকান। এর ধারণ ক্ষমতা ১৪ হাজার। খেলা দেখতে হাজির হয়ে গেছে ১২ হাজার মানুষ! করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনকে তুড়ি মেরে। খেলার ছবিই প্রমাণ করে লোকজন মাঠে গিয়ে খেলা উপভোগ করতে চায়। তা সে খেলার অংশগ্রহণকারী ছেলেরা হোক কিংবা মেয়েরা।

মেয়েদের এই দলটি এর আগে ১৯ তারিখ শ্রীলংকাকে ১২-০ গোলে হারিয়েছে। গ্রুপ ম্যাচে ভারতকে হারিয়েছে ১-০ গোলে। ফাইনালে সেই শক্তিশালী ভারতকে আবার ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হলো। সাফে বাংলাদেশের মেয়েদের এটিই প্রথম সাফল্য নয়। এর আগে ২০১৭তে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতে মেয়েরা। আসুন ওদের নামগুলো পড়ি। মনে রাখার চেষ্টা করি। অনেক তো মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক, মোস্তাফিজদের চিনলাম। এখন চিনে নিতে হবে রুপনা চাকমা, মারিয়া মান্দা (অধিনায়ক), শামসুন্নাহার সিনিয়র, আনাই মগিনি, আঁখি খাতুন, মনিকা চাকমা, তহুরা খাতুন, ঋতুপর্ণা চাকমা, নীলুফার ইয়াসমিন, শাহেদা আক্তার, শামসুন্নাহার জুনিয়রদের।

কত রকমের সীমাবদ্ধতা আর বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে এই মেয়েরা খেলতে এসেছে আমরা হয়তো কল্পনাও করতে পারবো না। এই যে দেখছেন শাদা হাফপ্যান্ট আর সবুজ গেঞ্জি পরা হাস্যোজ্জ্বল টিনএজারদের—এই পর্যায়ে আসতে ওদের অভিজ্ঞতার ঝুলিতে জমা হয়েছে সীমাহীন বঞ্চনা, পিতৃতান্ত্রিক সমাজের রক্তচক্ষু, পারিবারিক বাধা, সমাজের ভ্রুকুটি আর অপর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা।

আমাদের মনে আছে কি কুড়িগ্রামের কথা? ২০১৮ সালে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বিক্ষোভ মিছিল বের করে—চলমান মহিলা ফুটবল টুর্নামেন্ট বন্ধের দাবিতে। এছাড়া প্রতি বছর শীতকালীন ওয়াজ মাহফিলগুলোতে মেয়েদের খেলাধূলা, ঘরের বাইরে বের হওয়া ও কাজ করা নিয়ে যে পরিমাণ ঘৃণা বাক্য ও অশালীন বয়ান প্রচার করা হয় তার কোনো সীমাপরিসীমা নেই। এইসব মাথায় নিয়েই একজন নারীকে বাইরে যেতে হয়। একজন মারিয়া মান্দা, শামসুন্নাহার, মনিকা চাকমাকে ফুটবল খেলতে হয়।

এত বাধাবিপত্তি সরিয়ে যে মেয়েরা বিজয়ী হতে পারে তাদেরকে হৃদয় উজাড় করে অভিনন্দন জানানো সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। নারী খেলোয়াড় বলে এরা তো তেমন স্পনসরও পায় না, মিডিয়া কাভারেজও এদের খুব একটা জোটে না। এদেরকে কাভারেজ দেওয়ার বিকল্প মাধ্যম হয়ে উঠুক সোশ্যাল মিডিয়া।

অভিনন্দন সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ বাংলাদেশ ফুটবল দলকে!

Link copied!