• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,

কী হয়েছিল ফেসবুকে? 


রাগীব হাসান
প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২১, ০৯:৪৪ এএম
কী হয়েছিল ফেসবুকে? 

সোমবার (৪ অক্টোবর) আমেরিকার কেন্দ্রীয় সময় সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৫টা মানে, বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত ফেসবুক এবং এর সাথের সম্পর্কিত সার্ভিস ইন্সটাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার এরা সবাই ডাউন হয়ে যায়। কেউই ফোন বা কম্পিউটার থেকে এসব সার্ভিসে ঢুকতে পারেননি এই সময়ে। থেমে যায় ফেসবুকের বিলিয়ন মানুষের কথোপকথন কিংবা ফেসবুক ভিত্তিক ই-কমার্সের চাকা। 

কিন্তু কেন? 

এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুসারে ফেসবুকের মূল সার্ভারের তথ্য, ছবি, বা অন্য কিছুর কারণে এই ঘটনা ঘটেনি। ঘটনাটি ঘটেছে ফেসবুকের সার্ভারগুলো ইন্টারনেট থেকে হারিয়ে যাওয়ার কারণে। সবাইই এই সময়ে ফেসবুকে ঢোকার জন্য ফেসবুকের সার্ভারের খোঁজ করেছে। কিন্তু মেলায় হারিয়ে যাওয়া ভাইটির মতোই ফেসবুকের খোঁজ কেউ দিতে পারেনি। 

ব্যাপারটা একটু ব্যাখ্যা করি। 

ইন্টারনেট বলতে আমরা যা বুঝি তা হলো অনেকগুলো ছোট ছোট নেটওয়ার্কের সমষ্টি যারা একে অন্যের সাথে যুক্ত আছে রাউটারের মাধ্যমে। ডিএনএস বা ডোমেইন নেইম সার্ভিসের মাধ্যমে কোনো সাইটের নাম থেকে সেই সাইটের আইপি এড্রেস বের করে আপনার অ্যাপ বা ব্রাউজার। তার পর সেই সার্ভার থেকে ডেটা আনে (ফেসবুক সাইট বা অ্যাপের কন্টেন্ট)। কিন্তু সেটা করতে হলে তো জানতে হবে ঐ অ্যাড্রেস পর্যন্ত ডেটা দেয়ার রিকোয়েস্ট কীভাবে পাঠানো যায়? এই যে ঠিকানা খুঁজে খুঁজে ঐ পর্যন্ত যাওয়া, সেটার কাজটা করা হয় বর্ডার গেটওয়ে প্রটোকল বা বিজিপি-এর মাধ্যমে। রাউটাররা সারাক্ষণ তথ্য আদান প্রদান করে। যাতে করে কোন সার্ভারে কীভাবে কোন পথে যাওয়া যায় সেটার হিসাব থাকে। 
ব্যাপারটা অনেকটা এরকম, ধরেন আপনি চানখাঁরপুল থেকে হাতিরপুলে যাবেন, কিন্তু ঢাকায় নতুন এসেছেন। কীভাবে যাবেন? মোড়ে মোড়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন কাউকে, ভাই, হাতিরপুলে যামু ক্যামনে? সে হয়ত বললো, এই রাস্তায় চলে যান চার রাস্তার মাথা পর্যন্ত। তার পর ঐখানে কাউকে জিগান। 

ইন্টারনেটেও ঘটনা তাই। আপনি চাইলেন ফেসবুকের সার্ভারে যেতে। ঠিকানা অমুক। প্রথম রাউটার বললো, ঠিকাছে, আমি যদ্দুর জানি এই সার্ভারে যেতে হলে দ্বিতীয় তমুক রাউটারে যেতে হবে আগে। এইভাবে এক রাউটার থেকে আরেক রাউটারে আপনার রিকোয়েস্ট ঘুরে ঘুরে চলে যায় ফেসবুকে। 

কিন্তু আজকে কী হলো? প্রথমে ফেসবুকের ডোমেইন নেম সার্ভিস গায়েব হয়ে গেল, ফলে ফেসবুক ডট কম কোন ঠিকানায় সেটা নতুন করে কেউ জানতে পারছিল না। আর তার একটু পরেই ফেসবুকের নিজস্ব নেটওয়ার্ক থেকেই সবাইকে বলে দেয়া হল, আই ভাইসব, আমরা না আর নাই। আমরা গায়েব। আমাদের ঠিকানা যা আগে জানতেন ভুইল্যা যান সবাই জলদি। 

বিজিপি প্রটোকলের এই বার্তা দ্রুতই ছড়িয়ে গেল সর্বত্র। ফলে একটু পরেই ঘটনা হল এমন, আপনি বললেন ফেসবুক যামু। কিন্তু আপনার আইএসপির রাউটার বলে, ঐটা কে? নাম কী বাড়ি কই, আমি কিছুই জানি না!   

ব্যাপারটা অনেকটা এরকম, একটা বাড়ি ঠিকই আছে, কিন্তু সব ম্যাপ থেকে সেই বাড়ির ঠিকানা মুছে গেছে, ফলে কেউ আর পৌঁছাতে পারছে না সেখানে। 

কেন এমন হয়েছে সেটাই বড় প্রশ্ন। নেটওয়ার্কের কনফিগারেশনের ভুল নাকি স্যাবোটাজ, সেটা জানা যাবে আর কয়েকদিনে, ফরেনসিক ইনভেস্টিগেশন করার পরে। কেবল আমেরিকাতেই নেটব্লক্সের হিসাবে অন্তত ২৩২ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে, আর সারা বিশ্বে  সেটা হয়তো কয়েক বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে। তবে আমার ধারণা ক্ষতির হিসাব আরো বেশিই হবে। 

তবে এই ঘটনায় আরেকটা ব্যাপার প্রমাণ হয়েছে, সেটা বুঝছেন তো? ফেসবুক ছাড়াও আমরা চলতে পারি। অন্তত ৬ ঘণ্টা চলেছি এবং পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যায়নি। স্বস্তির ব্যাপার সেটাই, তাই না? 

Link copied!