পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীকে নানাভাবে অবমূল্যায়ন করা হয়। নারীর কাজের যোগ্য মূল্যায়ন হয় না। বরং নারীর প্রতি ছুড়ে দেওয়া হয় একের পর এক কুৎসিত মন্তব্য। শুধু তা-ই নয় বরং নারীকে কদর্যভাবে উপস্থাপন করে বিকৃত লালসা পূর্ণ করে পুরুষতন্ত্র। আর এভাবেই তাদের কুরুচির শিকারে পরিণত হয় নারী, যা এ সমাজে অহরহ ঘটে চলেছে।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীরা যে কতটা শোষিত-বঞ্চিত-অবহেলিত-অবমূল্যায়িত এবং অসম্মানিত হতে পারে, তা বর্তমান ট্রেন্ডে চলা কথাটিই প্রমাণ করে! ‘নারী কিসে আটকায়’—এই একটি প্রশ্ন জন্ম দিয়েছে শতসহস্র প্রশ্নের। সত্যিই নারী কি বা কিসে আটকায়! সে বিষয়ে পরে আসা যাবে, তারও আগে কিছু বিষয়ের অবতারণা করা গুরুত্বপূর্ণ।
সম্প্রতি কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর বিবাহবিচ্ছেদ ঘটেছে। গণমাধ্যম বরাত জানা যায়, বিবাহবিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো (৫১) ও তার স্ত্রী সোফি (৪৮)। বুধবার (২ আগস্ট) তারা এ ঘোষণা দেন। ট্রুডো ও সোফি ২০০৫ সালে বিয়ে করেন। তাদের তিন সন্তান আছে। সবচেয়ে বড় সন্তানের বয়স ১৫ বছর। এর মাধ্যমে এ দম্পতির ১৮ বছরের বিবাহিত জীবনের অবসান ঘটেছে। এখান থেকেই ঘটনার সূত্রপাত! তারপর একের পর এক সরল অঙ্ক ঝটপট মিলিয়ে ফেলেছেন এ সমাজের পুরুষেরা। যারা এত দিন বিভিন্ন গবেষণা ও মাথার ঘাম পায়ে ফেলেও অঙ্কের সরল উত্তরটা বের করতে পারেননি, তারা এক ধাক্কায় বোধ ফিরে পেয়েছেন! এবং রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছেন, ‘নারী কিসে আটকায়’ প্রসঙ্গের অবতারণা করে।
ট্রুডোর আগে জনমনে সাড়া ফেলা বিবাহবিচ্ছেদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ২০২১ সালে বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটস তাদের বিয়ের ২৭ বছর পর এসে বিবাহবিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন, ‘জুটি হিসেবে এগিয়ে যেতে পারি, এটা আমরা আর বিশ্বাস করি না।’ এক টুইট বার্তায় তারা ঘোষণা দেন, ‘আমাদের সম্পর্কটি নিয়ে অনেক চিন্তাভাবনা ও কাজের পর আমরা আমাদের সম্পর্কের সমাপ্তি টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
উল্লেখ্য, মেলিন্ডা ১৯৮০ সালে বিল গেটসের মাইক্রোসফটে যোগ দেওয়ার পর তাদের মধ্যে প্রথম পরিচয় হয়েছিল।
আরও একটু আগের সূত্র ঘেঁটে জানা যায়, বাংলাদেশের অন্যতম জাত অভিনেতাখ্যাত হুমায়ুন ফরীদির কথা। সুবর্ণা মুস্তাফা ১৯৮৪ সালে অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। দীর্ঘ ২২ বছর সংসার করার পর ২০০৮ সালে ফরীদির সঙ্গে তার বিবাহবিচ্ছেদ হয়। পরবর্তীকালে তিনি বদরুল আনাম সৌদকে বিয়ে করেন।
এমনই আরেকটি আলোচিত নাম তাহসান-মিথিলা। ২০১৭ সালে বিবাহবিচ্ছেদের ঘোষণা দেন জনপ্রিয় তারকা দম্পতি তাহসান-মিথিলা। ১৬ বছরের সম্পর্ক অবশেষে ভেঙে যায়। এবং যার রেশ কতটা বীভৎস, তা আজও অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে ঢুকলেই টের পাওয়া যায়। এরপর আসুন, ২০০০ সালে বিয়ে করেন অভিনেতা হৃতিক রোশন ও সুজান খান। বিয়ের ১৪ (২০১৪) বছর পর সুজান খানের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয় অভিনেতা হৃতিক রোশনের। ঘটনাগুলোর অবতারণা এ কারণে যে আমাদের সমাজের একশ্রেণির পুরুষ এগুলোকেই সুতো দিয়ে গেঁথে পুষ্পমাল্য বানিয়ে গলায় পরে বীরদর্পে জীবনের পথে হাঁটতে শুরু করেছেন।
ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন হলেও প্রাসঙ্গিকতা একই। ফলে আলোচনার সুবিধার্থে এবং উজবুক শ্রেণির বোধগম্যতার স্বার্থে এগুলো সমান্তরালে আলোচ্য অংশ। জাস্টিন ট্রুডোর বিয়ে ভাঙতেই আমাদের সমাজের পুরুষশ্রেণি হামলে পড়েছে ‘নারী কিসে আটকায়’ প্রসঙ্গে! এবং তারা এটাই প্রমাণের জন্য সদা উদগ্রীব এবং উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন যে নারী পৃথিবীর কিছুতেই আটকায় না। যে উদাহরণ বা বিবাহবিচ্ছেদের প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়েছে, সেগুলো সব এই শ্রেণিদের ভাষ্যমতেই এখানে গৃহীত হয়েছে। এবার একটু হিসাব-নিকাশে আসা যাক, বিল গেটসের টাকার কোনো হিসাব নেই! তিনি বিশ্বের ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম। তাই সাধারণের রায় অনুযায়ী, তার সংসার ভাঙতেই পারে না। কেন তারা এভাবে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাবেন। নিশ্চয়ই মেলিন্ডা গেটস নারী হিসেবে লোভী, স্বার্থবাদী, পরশ্রীকাতর।... ব্লা ব্লা ব্লা।
অন্যদিকে জাস্টিন ট্রুডো সুদর্শন, বিশ্বের অন্যতম মানবিক-হৃদয়বান, স্মার্ট পুরুষ। তার কেনো বিয়ে ভাঙবে। কেন তিনি আজন্ম এক নারীর সঙ্গে বাস করছেন না। এর কারণও নিশ্চয়ই সোফির অতীব চাহিদা। যার জোগান ট্রুডো দিতে পারেননি। এবার আবার ফিরে যায়, মিথিলা-তাহসানে! তাদেরও তো কোনো সমস্যাই হওয়ার কথা নয়। তারা বাঙালি জাতির আইডল কাপল। তাদের রূপ-মাধুর্য-সৌন্দর্য-টাকা কড়ি-খ্যাতি সব আছে। তাহলে? অন্যদিকে সুবর্ণা মোস্তফাও একই ক্যাটাগরির। এমনকি হৃতিক রোশানের বিষয়টাও ঠিক এমনই। বলা চলে সুজানের জন্য আরও বোনাস হৃতিক খুবই সুদর্শন, খ্যাতিমান। তাহলে সুজান কেন আটকাল না!
তাই সর্বসাধারণের মতে ও আমাদের সমাজের অতীব ভদ্র ও সুশোভন পুরুষদের মতে, এই নারী অতি মাত্রায় লোভী, স্বার্থবাদী, পরশ্রীকাতর, পরকীয়াতে আসক্ত প্রভৃতি আরও বহু তকমাধারী হয়েছেন নারী!
সম্প্রতি প্রতিটি ঘটনাকে তুলে এনে আমাদের সমাজে একশ্রেণির নোংরা মানসিকতার পুরুষ নারীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। তাদের মতে, নারী কিছুতেই আটকায় না। তবে হ্যাঁ তারা নাকি আবার আমাদের সমাজে বর্তমান ট্রেন্ড্রিং (বিসিএস) তাতে নাকি আবার আটকায়! কী এক কন্টাড্রিকটরি (দ্বিচারী) কথাবার্তা। যারা বলে নারী সৌন্দর্যে, টাকায় আটকায় না, তারাই আবার সেটাকেই সুউচ্চে তুলে ধরে গলাবাজি করে! এরাই বলে বিল গেটসের কাছে মেলিন্ডা আটকাল না, ঠিক তারাই নারীকে ‘বিসিএস ক্যাডার’ আটকানোর কথা বলে! এই স্ল্যাং কোথা থেকে উদ্ভব করলেন এই কদর্য শ্রেণি?
এখন আসুন এই বিশদ কথায়, ‘নারী কিসে আটকায়’? এই প্রশ্নটি যে বা যার মনে উদ্ভব ঘটেছ বা যারা সত্যি এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চান, তাদের জানা প্রয়োজন, নারী আসলেও আপনাদের কাছে আটকাবে না। কারণ একটাই এই প্রশ্ন যে বা যিনি করছেন বা যারা পোস্ট করে খুব হেডম দেখাচ্ছেন, বুঝবেন আপনার মানসিক দীনতার কথা। আর নারীরা দীনহীন-ভিক্ষুকের কাছে থাকে না। মনের দৈন্য যত দিন ঘোচাতে না পারবেন, ঠিক তত দিন আপনি জাস্টিন ট্রুডো হোন বা বিল গেটস কিংবা হৃতিক রোশনের মতো সুবিশাল ব্যক্তিত্ব হোন, নারী আটকাবে না।
এই হীন প্রশ্নের মধ্যেই রয়েছে নারীর প্রতি অসম্মান-অশ্রদ্ধা-অপমান। নারী না খেয়ে সাত দিন, এক মাস থাকলেও অপমান হজম করতে করতে যখন তা গলা পর্যন্ত আসে, তখন তারা বাঁচার জন্য লাথি দিয়ে সরিয়ে দেয়। সে যতই ক্ষমতাধর হোক। টাকার কুমির হোক। তাই যারা যত সহজ-সরল হিসেব কষে জীবনের অঙ্ক মেলাতে বসেছেন, সেই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ আগে নিজের বিবেকবোধ জাগ্রত করেন। মায়ের জাতকে সম্মান করেন। বউয়ের ছোট থেকে বড় সব ধরনের কাজকে স্বীকৃতি দেন। অসুস্থ হলে সহমর্মী-সমব্যথী হয়ে ওঠেন। আপনার (পুরুষ) টাকা-চেহারা-প্রতিপত্তি-গাড়ি-বাড়ি থাকা জরুরি নয়। আগে মানুষ হিসেবে স্ত্রীকে গ্রহণ করুন। দাসী হিসেবে নয়। রাতের ভোগ্যপণ্য হিসেবে নয়।
তাহলে আর এই দীনহীন ভিক্ষুকের মতো প্রশ্ন করে সমাজকে বিব্রত করা লাগবে না। কারণ, দিন শেষে দেখবেন, আপনার স্ত্রী, মা, বোন সবাই আপনাকে সযত্নে আগলে রেখেছে নিজে না খেয়ে।
বৃদ্ধ হলে মাকে ঘরের বাইরে বের করে দেবেন, গায়ে হাত তোলার মতো অপরাধ করবেন, যদি তা না করেন তবে রাত-দিন মাকে চড়া স্বরে কথা শোনাবেন আর আপনি ভাববেন মায়ের দোয়াপ্রার্থী হবেন! এ তো ভারি অন্যায়। আবার আপনি বউকে ভোগ্যপণ্য মনে করবেন। বউয়ের ইচ্ছে-রুচি-মর্জি-অভিরুচি-সুস্থতা-অসুস্থতাকে গুরুত্ব দেবেন না আর নারী কিসে আটকায় শুনতে চাইবেন। বড় হাস্যকর প্রশ্ন এই নোংরা মানসিকভাবে অসুস্থ শ্রেণির। ঠিক তাই, দীনহীন-ভিক্ষুকের মতো এত অবান্তর প্রশ্ন না করে চারিত্রিক দৃঢ়তা গড়ে তোলা কি খুব কঠিন!
দিন শেষে একটু প্রশান্তির ছোঁয়া নিয়ে স্ত্রীকে কখনো জিজ্ঞেস করে দেখেছেন তার ভালো লাগা-মন্দ লাগা কী! সে সারাটা দিন কীভাবে এত পরিশ্রম করে সংসারকে জোয়াল টানা বলদের মতো ঘাড়ে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। স্ত্রী অসুস্থ হলে কখনো পরম মমতায় মাথায় হাত রেখেছেন? কখনো বলেছেন যত দিন সুস্থ না হবে বেড থেকে ওঠা চলবে না। সব দায়িত্ব আপনার (পুরুষের)। কিন্তু না তা করবেন কেন পুরুষশ্রেণি। তারা রেসে নেমেছেন, ‘নারী কিসে আটকায়?’ হ্যাঁ, পৃথিবীর এমন কোনো নারী নেই, যারা এমন সঙ্গীতে মুগ্ধ নয়। এমন কোনো কঠিন হৃদয়ের নারী নেই, যারা এই মমতাকে উপেক্ষা করে।
এবার আসুন জাস্টিন ট্রুডো থেকে হৃতিক পর্যন্ত স্বামীদের কথায়। আমি বলব না তারা খারাপ। হ্যাঁ, তারা ভালো। এবং ভালো না হওয়ার সম্ভাবনা কতটা, সেটা আমি-আপনি কতটা বুঝব। একজন রাষ্ট্রনায়ক, একজন চিত্রনায়ক, একজন মিলিওনিয়ার তিনি স্বামী হিসেবে কতটা ভালো, সে তার জীবন সঙ্গী যিনি অবশ্যই তিনি বুঝবেন। খেয়াল করে দেখবেন, আপনি ঘরে যে জামা পরেন, বাইরে সেটা পরেন না। কারণ, আপনার বাইরের জগৎটা চাকচিক্যময় করে রাখা প্রয়োজন। যাতে অন্যরা আপনাকে সম্মান করে। আপনি (পুরুষ) বাড়িতে একটা পুরোনা টি-শার্ট পরলেও সমস্যা নেই। কিন্তু অফিসে গেলে নিশ্চয়ই পরবেন না। ফলে আপনার পুরো আবহ আপনি চেঞ্জ করে ফেললেন। কিন্তু ঘরে কিন্তু আপনার অন্য রূপ।
ধরুন, গ্রামের একজন চেয়ারম্যান, মেম্বার তিনি বাইরে সবার বিচার করেন। কিন্তু ঘরে এসে তার বউকেও ওই বিচার মানতে বাধ্য করেন। পান থেকে চুন খসলেও বেদম প্রহার করেন। তাকে আপনি কী বলবেন? খুব ভালো স্বামী নিশ্চয়ই। নাকি! প্রতিটি ক্ষেত্র ভিন্ন। মানুষ ভিন্ন। জীবন ভিন্ন। যদিও পরিণাম এক। তাই অযথা কোনো কদর্য প্রশ্নের আগে নারীকে সম্মান করতে শিখুন।
আর যদি সত্যি এই হীনমানসিকতা নিয়েই সংসারজীবনে বিরাজ করেন বা প্রবেশ করেন, সেখানে নারীকে আটকে রাখা সত্যি মুশকিল। কারণ, আপনার দীনহীন মন নারীর প্রতি উদাসীন-সন্দিহান-অসম্মানিত। তাই আগে মানুষ হোন। এসব ভাঁওতাবাজি ছাড়ুন। কুরুচিপূর্ণ মনোভাবের প্রকাশ করে নিজের গায়ে কাদা মাখিয়ে মঞ্চে বাঁদরের মতো নাচা বন্ধ করুন। মানুষ নাহলে মানুষ আপনাকে কাছে টানবে না। সম্মান করবে না। চিরন্তন সত্য মাথায় ঢুকিয়ে নিলে সবার জন্য মঙ্গল।
একটি পরিবারকে সংগঠিত করে একজন নারী। যে পরিবারে নারী থাকেন না, সে পরিবারের যে কী ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটে, তা বিপত্নীক পুরুষ মাত্রই হাড়ে-হাড়ে অনুধাবন করেন। সন্তানের লালন-পালন থেকে শুরু করে পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের দেখভাল করার দায়িত্ব নারীর ওপর বর্তালেও দিন শেষে একশ্রেণির কদর্য ও বিকৃত মানসিকতার মানুষ হয়রান হয়ে পড়েছে নারী কিসে আটকায়, এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে! হ্যাঁ, এত পরিশ্রমের পরেও কিন্তু নারীরা দিবারাত্র সন্তান-স্বামী তথা পরিবারের মঙ্গল কামনায় ব্যস্ত হয়ে থাকেন। নিজের শরীর মনের পরিচর্যা নারীরা সে তুলনায় কিঞ্চিৎ করেন কি না সন্দেহ! তবু পুরুষতন্ত্র নারীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে হীনমানসিকতা চরিতার্থ করার পাঁয়তারা করে চলেছে।
কিন্তু এমন পুরুষ হয়তো হাতে গোনা কয়েকজন পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ, যে কিনা অফিস বা কর্মক্ষেত্রের কাজ সামলে এসে নারীর মনের দুয়ারে হানা দিয়েছে। মমতায় আগলে রাখার অনুভূতি নারীকে উপলব্ধি করিয়েছে। বরং তা না করে সারা দিন ঘরে বসে গায়ে হাওয়া লাগিয়েছে এমনটাই মন্তব্য করে বসে। জলের গ্লাসটা পর্যন্ত স্বামীকে এগিয়ে দেওয়া লাগে অধিকাংশ পরিবারে। এ নতুন চিত্র নয়। নারী আছে বলেই এ জগৎ-সংসার আজও ফুলে-ফলে ভরপুর। নারীর ত্যাগ-তিতিক্ষাকে মর্যাদা না করে একশ্রেণির ভণ্ড-কাপুরুষেরা নারীর প্রতি অসম্মান-অশ্রদ্ধার বুলি আওড়াচ্ছে।
সম্প্রতি জাস্টিন ট্রুডোর বিবাহবিচ্ছেদ ঘটার পর বাংলাদেশের মানুষ যতটা নারীকে নিয়ে গবেষণায় নেমেছেন, পৃথিবীর বুকে এ-ও এক বিস্ময়। সত্যি বলতে এ দেশের পুরুষতান্ত্রিক ভণ্ড শ্রেণির কাজ এতটাই কম যে পণ্ডশ্রমে তাদের অনেক উৎসাহ। মোদ্দাকথা হলো, মানসিকভাবে দীনহীন-ভিক্ষুক হলে নারী আটকায়, এ কথা আগেও বলেছি। ফলে যে বা যারা সত্য সন্দিহান নারী আটকায় না, তারা মানসিকভাবে সুস্থ হন। নাহলে এমন কদর্য-কুরুচিপূর্ণ মানুষের সঙ্গে নারী থাকবে না, এটাই স্বাভাবিক। সর্বোপরি নারীকে সম্মান করতে শিখুন। আপনি যেই মায়ের গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছেন, সেই মাকে অপমান-অসম্মান করে পুরুষ হিসেবে নিজের অস্তিত্বকে ম্লান করে দিচ্ছেন। এমন কদর্য প্রশ্ন মনে উঁকি দেওয়ার আগে নিজের শিকড়ের দিকে একবার হলেও নজর দিন। নাহলে দিন শেষে নিজের গায়ে নিজেই কালি মাখানো থেকে বিরত থাকা মুশকিল।
লেখক : শিক্ষক ও গবেষক।
 
                
              
 
																                   
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                    





































