প্রায় ১০ বছর আগে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন মো. আব্দুল্লাহ মনির ওরফে পিচ্চি মনির। ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন নিজের সাম্রাজ্য। মাদক বিক্রির টাকা দিয়ে নিজের বাড়িতে নির্মাণ করে কোটি টাকার স্থাপনা। এমনকি বাবার কৃতী সন্তান হিসেবে মানুষের কাছে নিজেকে উপস্থাপন করার উদ্দেশ্যে বাবার কবরে মাজার নির্মাণ করেন তিনি।
শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে রাজধানীর মাদক ব্যবসার অন্যতম হোতা এই পিচ্চি মনিরকে (৩৩) সহযোগীসহ গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকার মধুবাজারের একটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে মনির ও তার সহযোগী মো. জুবায়ের হোসেনকে (৩৩) গ্রেপ্তার করে র্যাব-২। এ সময় তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় দুটি বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন, ১২ রাউন্ড তাজা গুলি, ১৮ হাজার ৭৭০ পিস ইয়াবা, ছয় গ্রাম আইস এবং মাদক বিক্রির ৪ লাখ ৬০ হাজার নগদ টাকা।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের গ্রেপ্তাররা মাদক ও অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গত বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও হাজারীবাগ এলাকা থেকে ‘ভাইব্বা ল কিং’ ও ‘কবির বাহিনী’সহ বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্যদের গ্রেপ্তারের পর মাদক ও অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আরও কয়েকটি চক্রের সন্ধান পায় র্যাব। যার পরিপ্রেক্ষিতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে রাজধানীতে মাদক ব্যবসার অন্যতম হোতা মনির ও তার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও জানান, গ্রেপ্তার মনিরের পরিবার জীবিকার সন্ধানে ১৯৯৫ সালে শরীয়তপুর থেকে ঢাকায় আসেন এবং লালবাগ এলাকার শহীদনগরে বসবাস শুরু করেন। মনিরের বাবা ফল ব্যবসায়ী ছিলেন। মনির শুরুতে সেই ব্যবসায় বাবাকে সহযোগিতা করলেও ধীরে ধীরে এলাকার বখে যাওয়া ছেলেদের সঙ্গে চুরি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর ও কেরানীগঞ্জে গড়ে তোলেন অপরাধ চক্র।
গ্রেপ্তার মনিরের বরাত দিয়ে আল মঈন আরো জানান, মনির ২০১২ সালে কামরাঙ্গীরচর এলাকায় তার এক বন্ধুর সঙ্গে পার্টনারশিপে মাদক ব্যবসায় জড়ান। প্রথমে স্থানীয় ডিলারদের কাছ থেকে অল্প অল্প করে মাদক কিনে সেটা খুচরা মাদকসেবীদের কাছে বিক্রি করতেন। পরে ২০১৬ সালে কক্সবাজারে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তিনি নিজের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন। সেখান থেকে তার কাছে নিয়মিত মাদক আসতে থাকে। এমনকি তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা মাঝে মাঝে কক্সবাজার গিয়ে মাদকের চালান ঢাকায় নিয়ে আসত। আর এসব মাদক ক্রয়-বিক্রয়ের টাকা লেনদেন করা হতো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে।
র্যাব আরো জানায়, গ্রেপ্তার মনিরের কাছে টেকনাফ ও কক্সবাজার থেকে প্রতি মাসে কয়েকটি মাদকের চালন আসত। শতকরা ২০ শতাংশ অগ্রিম টাকা দেওয়ার মধ্যমে এসব ইয়াবার চালান ঢাকায় আসত এবং মনিরের ভাড়া বাসায় বা সুবিধামতো স্থানে সেগুলো ডেলিভারি হতো। ঢাকায় চালান আসার পর মনির সেসব মাদক মিরপুর-১৩, ইসলামবাগ, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, কেরানীগঞ্জ, কামরাঙ্গীরচর, আজিমপুরসহ বিভিন্ন স্থানে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করতেন। প্রত্যেক খুচরা বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ভিন্ন ভিন্ন মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন তিনি। খুচরা বিক্রেতারা যাতে একজন অন্যজনকে চিনতে না পারে তাই প্রত্যেককে পারস্পরিক অপরিচিত রাখা হতো।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও জানান, গ্রেপ্তার মনির মাদক ব্যবসার অবৈধ টাকা দিয়ে নিজ বাড়িতে কোটি টাকার স্থাপনা নির্মাণ করেছে। এমনকি বাবার কৃতি সন্তান হিসেবে নিজেকে সাধারণ মানুষের কাছে উপস্থাপন করার উদ্দেশে এবং এলাকায় প্রচারের জন্য বাবার কবরে একটি মাজারও নির্মাণ করেছেন।
গ্রেপ্তার মনির মাদক ব্যবসার পাশাপাশি ২০১৮ সালে অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েন। সেই বছর সে পিস্তলসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন এবং সাত মাস কারাগারে কাটান। পরে ২০২০ সালেও একবার মাদক ও অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন মনির। তখন প্রায় এক বছর কারাগারে থাকতে হয় তাকে। তার নামে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় অস্ত্র ও মাদকসংক্রান্ত মোট তিনটি মামলা রয়েছে বলে জানায় র্যাব।