• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
টিসিবির পণ্য পেয়ে প্রতিক্রিয়া

‘আমার মতো গরিব অনেক আছে, তাদেরও সংসার চালাতে হবে’


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২৩, ০২:৪৯ পিএম
‘আমার মতো গরিব অনেক আছে, তাদেরও সংসার চালাতে হবে’
ছবি : সংবাদ প্রকাশ

টিসিবির ট্রাকের পাশে দাঁড়িয়ে পণ্য সরবরাহের দায়িত্বে থাকা এক যুবককে কয়েকবার টোকেনের কথা বলছিলেন প্রতিবন্ধী মো. রায়হান শেখ (ছদ্মনাম)। কিন্তু সেই যুবক যেন তাকে পাত্তাই দিচ্ছেন না। কোনো সাড়া না পাওয়ায় অনেকটা নির্বাক হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন ট্রাকের পাশে। পরে বাকি লোকদের কাছে জানতে পারেন পণ্য নিতে সংগ্রহ করা টোকেন শেষ হয়েছে। তাই অনেকেই আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকলেও পণ্য নিতে পারছেন না।

বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) এমন দৃশ্য দেখা যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ভবনের সামনে।

জানতে চাইলে মো. রায়হান শেখ সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “অনেকক্ষণ আগে এহানে আইছি। কিন্তু টোকেন না থাকায় প্যাকেজ লইতে পারতেছি না। যা টোকেন ছিল, সব বিক্রি কইরালাইছে। তাই অহন কি আর করুম, এহানেই দাঁড়াইয়া আছি। দেহি সবাইকে দিয়ে যদি প্যাকেজ থাকে, তখন কিনা লাগবে।”

রায়হান শেখ আরও বলেন, “গরিব মানুষ আমি। ঢাকায় পরিবার নিয়ে থাকা কষ্ট হয়ে গেছে। এক হাত না থাকায় মানুষের সাহায্য আর কামকাজ করে যা টাকা পাই, তা দিয়ে সংসার চলে না। তাই আইলাম যদি টিসিবি থেকে কিছু লইয়া বাসায় যাইতে পারি।”

শুধু  রায়হান শেখ একাই নয়, আরও বেশ কয়েকজন এসেছেন। কিন্তু পণ্য অনুযায়ী টোকেন বিক্রি শেষ হওয়ায় কেউই নতুন করে প্যাকেজটি নিতে পারছে না। তাদেরই একজন আজাদ হোসেন।

আজাদ হোসেন সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “টিসিবির টোকেন নাই, তাই প্যাকেজও নাই। মালের চাহিদা মতো যা টোকেন দেওয়ার কথা তা দেওয়া শেষ হওয়ায় নতুন করে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই আমরা প্যাকেজও কিনতে পারছি না।”

টোকেন বিক্রি না করার কারণ হিসেবে ট্রাকের ওপরে থাকা এক পণ্য বিক্রেতা সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “প্রতিদিন ৬০০ কেজি পণ্য আনা হয়। এই পণ্য প্যাকেজ করে ৩০০ জনের কাছে বিক্রি করা হয়। আমরা সকালে টোকেন বিক্রি করি, এরপর লাইনে সবাইকে দাঁড় করিয়ে প্যাকেজ বিতরণ করতে থাকি।”

জানা গেছে, টিসিবি কার্ডের আওতাভুক্ত নয় এমন স্বল্প আয়ের পরিবারের লোকদের জন্য ভর্তুকি মূল্যে আলু, পেঁয়াজ, ডাল ও সয়াবিন তেল বিক্রির কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার। টিসিবির এই ট্রাক থেকে ক্রেতারা সাশ্রয়ী মূল্যে ৩০ টাকা কেজিতে ২ কেজি আলু, ৫০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ, ৬০ টাকা কেজিতে ডাল ও ১০০ টাকা লিটারে তেল কিনতে পারবেন।

তথ্যমতে, গত ১৪ নভেম্বর রাজধানীর কারওয়ান বাজারে টিসিবি ভবনের সামনে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকসেল শুরু করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ। টিসিবির এ পণ্য রাজধানীর ৩০টি স্থানে পাওয়া যাচ্ছে।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে খাদ্য তালিকা ছোট করে ফেলছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। এমন পরিস্থিতিতে সরকার টিসিবির ট্রাকসেলে পণ্য বিক্রি করায় অনেকটাই স্বস্তি এসেছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের পরিবারগুলোতে। তবে টোকেনের সংখ্যা কম থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।

জুনায়েদ নামের এক ক্রেতা বলেন, “বাজারে সব জিনিসের দাম বেশি। আলু সংকটের কথা বলে ব্যবসায়ীরা দাম আরও বাড়াচ্ছে। প্রতিদিন তারা (ব্যবসায়ীরা) নতুন অজুহাত দেখায়। এই পরিস্থিতিতে আয় কম থাকায় সংসার চালানো কঠিন।”

জুনায়েদ আরও বলেন, “টিসিবির ট্রাকসেলে প্যাকেজ নিতে এসেছি বেলা ১১টায়। কোনোমতো একটা টোকেন পেয়েছি। টিসিবির পণ্য আমাদের জন্য খুবই ভালো। এইখান থেকে প্যাকেজ নিয়ে কয়টা দিন চলতে পারব। শেষ হলে আবার আসব। তবে টোকেন সংখ্যা বাড়ানো দরকার। এই অল্প টোকেনে সবাইতো আর প্যাকেজ নিতে পারবে না। কারণ, আমার মতো গরিব মানুষ অনেক আছে। তাদেরও তো সংসার চালাতে হবে।” 

Link copied!