দেশে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে স্বর্ণের দাম। গত ২ সপ্তাহেই ৭ দফায় দাম বেড়েছে ১৫ হাজার টাকার বেশি। টানা দাম বাড়ানোর পর বুধবার ভরিতে ১ হাজার ৪৭০ টাকা কমিয়ে এক ভরি ১ লাখ ৮৮ হাজার ১৫২ টাকা নির্ধারণ করেছে জুয়েলার্সদের সংগঠন (বাজুস)। মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দেশের বাজারে সোনার দাম আবারও বেড়েছে। এবার ভরিতে বাড়ানো হয়েছে ১ হাজার ৮৮৯ টাকা। ফলে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে এক ভরি সোনার দাম হয়েছে ১ লাখ ৯১ হাজার ১৯৬ টাকা। বিশ্লেষকদের মতে, দেশে বৈধভাবে স্বর্ণ আমদানি করা গেলে দাম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে।
গত মাসের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি আরোপে টালমাটাল হয়ে পড়ে বিশ্ব অর্থনীতি। তখন বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দর আউন্সপ্রতি একলাফে উঠে যায় ৩ হাজার ৪০০ ডলারে। বর্তমানে এ দাম ৩ হাজার ৬০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারেও। ধস নেমেছে কেনাবেচায়।
চলতি মাসের শুরুতে স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ হাজার ৪৬৯ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৭৮৮ টাকা নির্ধারণ করে জুয়েলার্স সমিতি। ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় দফায় দাম বেড়ে স্বর্ণের ভরি ১ লাখ ৮৯ হাজার ৬০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। অর্থাৎ ১৬ দিনে বাড়ে সাড়ে ১৩ হাজার টাকার বেশি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সারাদিন দোকান খোলা রেখে একজন ক্রেতা পাওয়াই দায়। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে ব্যবসা বন্ধ করা ছাড়া উপায় নেই।
একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘স্বর্ণের দাম যেভাবে উর্ধ্বগতিতে চলছে, এভাবে চললে আমাদের ব্যবসা থাকবে না। ব্যবসা কি হবে আল্লাহ জানেন। আগে যদি ক্রেতা পেতাম ১০টা, এখন একজন পেতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
ক্রেতারা বলছেন, স্বর্ণ চাইলেই কেনা যাচ্ছে না। অনেকে আবার অলংকার কেনার বদলে বিক্রি করছেন। এমনই একজন ক্রেতা বলেন, ‘এভাবে চলতে থাকলে মধ্যবিত্ত পরিবার স্বর্ণ কিনতে পারবে না কখনও।’
বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সরকার যদি ইমপোর্ট করে এবং জুয়েলারি ব্যবসা যারা করে তারা একটা প্রিমিয়াম বা লাভ নিয়ে বৈধ ব্যবসায়ীদের যদি সরবরাহ করে, এতে সমস্যা সমাধান হবে।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের বিকল্প হিসেবে স্বর্ণের চাহিদা বাড়ছে। পাশাপাশি ব্রিকসভুক্ত দেশগুলো বেশি স্বর্ণ কিনে রাখায় বিশ্ববাজারে দাম বাড়ছে।
গবেষণা সংস্থা র্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. এম এ রাজ্জাক বলেন, ‘যেকোনো গ্লোবাল ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্ট করতে হলে স্বর্ণের কোনো বিকল্প নেই। এজন্যই আমরা সম্প্রতি দেখেছি ব্রিকস দেশগুলো বেশি করে বিশ্ববাজার থেকে স্বর্ণ কেনা শুরু করেছে। ফলে চাহিদাও অনেক বেড়েছে।’
গত পাঁচ দশকে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ১ হাজার ৯৩ গুণ। চলতি মাসের শেষে স্বর্ণের ভরি ২ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের।