• ঢাকা
  • শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

সংঘাত নয়, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দেখতে চান রাজধানীবাসী


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জুলাই ১১, ২০২৩, ০৯:৫৭ পিএম
সংঘাত নয়, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দেখতে চান রাজধানীবাসী
প্রতীকী ছবি

রাজধানীতে একই দিনে কাছাকাছি সময়ে দুটি বড় দলের সমাবেশ। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এ নিয়ে উৎকণ্ঠাও বাড়ছে সবার মাঝে। রাজধানীবাসী চান, স্মার্ট বাংলাদেশে সহনশীল ও উদার রাজনীতির চর্চা হোক। দুটি সমাবেশই যেন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়। তারা বলছেন, বর্তমান বাংলাদেশের সঙ্গে রাজনৈতিক সংঘাত যায় না। রাজনীতিতে স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দরকার। সকলের অধিকার চর্চার সুযোগ থাকা দরকার। তাহলেই বাংলাদেশের ভাবমুর্তি উজ্জ্বল হবে।

রাজধানীর আদাবরের বাসিন্দা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরিজীবী শাহাদাত হোসেন বলেন, “দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকলে সাধারণ মানুষের মধ্যে শঙ্কা কাজ করে, ভোগান্তি বাড়ে, অর্থনীতির ক্ষতি হয়, একইভাবে সাধারণ মানুষেরও কষ্ট বেড়ে যায়। তাই রাজনীতিতে সহনশীলতা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিষয়। দেশে সহনশীল রাজনীতির চর্চা হোক। এটাই চাই।”

বাসাবো, মাদারটেকের বাসিন্দা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র সৈকত ইসলাম সাগর বলেন, “আমরা চাই অগ্রগতির বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকুক। কোনো সংঘাত না হোক, যার যার সমাবেশ তারা শান্তিপূর্ণভাবে করুক। পারস্পরিক উস্কানিমূলক কাজ বা সংঘাত যেন না হয়, আমরা এটাই চাই।”

উত্তরার কামার পাড়ার বাসিন্দা, গার্মেন্টস ব্যবসায়ী সত্যজিত খাস্তগীর বলেন, “আমাদের দেশের রাজনীতিতে উদার গণতান্ত্রিক রাজনীতির খুব বেশি প্রয়োজন। তবে মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়ীক চেতনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে যারা কাজ করবেন তারাই এগিয়ে যাবেন। পাশাপাশি সহনশীল রাজনীতির জন্য বিরোধী দলের সমালোচনা, দাবি, আন্দোলনকে উদার দৃষ্টিতে সহ্য করা উচিত। এসবের চর্চা থাকলেই রাজনীতিতে সংঘাত এড়ানো সম্ভব।”

টিকাটুলির আনন্দ বিল্ডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী জসিম উদ্দিন বলেন, “রাজনীতিতে সহনশীলতা দরকার আছে। তবে, দেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ এবং যারা বঙ্গবন্ধুকে স্বীকার করে না, তাদের রাজনৈতিক প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়। সহনশীল রাজনীতির চর্চা অবশ্যই ভালো। সেটা দেশের কল্যাণেই হতে হবে।”

মিরপুরের বাসিন্দা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী আরিফুর রহমান বলেন, “রাজনীতিতে সহনশীলতা খুব বেশি দরকার। আমাদের দেশের রাজনীতি এখন একপেশে হয়ে যাচ্ছে। ‘গণতান্ত্রিক অধিকার’ চর্চার সুযোগ সীমিত বলে মনে হয়। এটা উচিত নয়। বুধবার বড় দুই দলের সমাবেশ যেন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়। এটাই প্রত্যাশা করছি।”

কলাবাগানের বাসিন্দা সরকারি চাকরিজীবী সোহাগ আহম্মেদ বলেন, “দেশের রাজনীতিতে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহনশীলতা খুব বেশি প্রয়োজন। সহনশীলতার পরিবেশ তৈরি হলে যেকোনো রাজনৈতিক সংঘাতই এড়ানো সম্ভব।”

এদিকে দুই দলের এই সমাবেশ ঘিরে রাজধানীর সাধারণ মানুষের মাঝে যেমন শঙ্কা কাজ করছে, একইভাবে উদ্বেগ কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যেও।

মঙ্গলবার (১১ জুলাই) ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক গণমাধ্যমকে বলেছেন, “অভিন্ন শর্তে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে বুধবার (১২ জুলাই) সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।”

বিএনপির তারুণ্যের সমাবেশের অনুমতি সম্পর্কে দলটির সূত্র জানিয়েছে ২৩ শর্তে তাদের সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে পর্যাপ্ত নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা, নির্ধারিত সময়ে সমাবেশ শেষ করা এবং জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করাসহ ২৩টি শর্তের উল্লেখ রয়েছে।

জানা যায়, বুধবার নয়াপল্টনের দলীয় কার্যলয়ের সামনে বড় সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। এ সমাবেশ থেকেই সরকার পতনের ‘এক দফা’ আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা আসবে বলে জানিয়েছে দলটি।

একই দিনে শান্তি সমাবেশের মাধ্যমে রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এদিন বিকালে রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটের সামনে শান্তি সমাবেশ করবে ক্ষমতাসীন দলটি।

ডিএমপি কমিশনার আরও জানিয়েছেন, দুই দলকেই একই শর্তে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে সমাবেশের নামে কোনো বেআইনী কার্যকলাপ করলে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শান্তি সমাবেশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “বিএনপি শেষ মুহূর্তে একটা কিছু করার চেষ্টা চালাবে। তবে সরকার পতনের নামে কথিত এক দফার আন্দোলনে হরতাল, সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ, সহিংসতা ও ভাঙচুরের চেষ্টা হলে তাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।”

দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, “বিএনপি রাজপথে থাকলে আওয়ামী লীগও থাকবে। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। তাছাড়া এক বছর আগেই আগামী নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথে থেকে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়ে রেখেছি আমরা। আন্দোলনের নামে হরতাল, ধর্মঘট ও ভাঙচুর করলে বিএনপির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।”

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “আওয়ামী লীগ রাজপথ ছাড়বে না। আগামী সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত সব অপশক্তির বিরুদ্ধে রাজপথে থাকবে। বিএনপি জনগণ ও বিদেশিদের প্রভাবিত করার জন্য ষড়যন্ত্রমূলক অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে।”

অপরদিকে, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, ‘আশা করছি সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ। ফলে অনুমতি দিলেও সমাবেশ হবে, না দিলেও সমাবেশ হবে।”

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “পূর্বের বিভাগীয় সমাবেশ থেকে শুরু করে তারুণ্যের সমাবেশ যেমন শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে, তেমনি বুধবার ঢাকার সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে সফল করব। এই সমাবেশ আমাদের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ বিশৃঙ্খলা করার জন্য আবার পালটা সমাবেশের তারিখ ঘোষণা করেছে।”

একই দিনে পাশাপাশি জায়গায় আওয়ামী লীগের সমাবেশ নিয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আওয়ামী লীগ ৭১’  এ শান্তি কমিটি করেছে, ৭৩’ এ শান্তি বাহিনী গঠন করেছে। আর এখন শান্তি সমাবেশ করছে। তারা যদি শান্তি সমাবেশের নামে কোনো অশান্তি করে, তাহলে এর দায়ভার তাদের নিতে হবে। আমাদের সমাবেশ পূর্বনির্ধারিত। ফলে চলমান কর্মসূচি যেমন শান্তিপূর্ণ হয়েছে, তেমনি বুধবারের সমাবেশও হবে শান্তিপূর্ণ।”    

Link copied!