স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আহমেদ মানিক। মধ্যবিত্ত পরিবারে তার জন্ম। পড়াশোনার পাশাপাশি একটি ছোট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। নিজের পড়াশোনার খরচ নিজেকেই বহন করতে হয় তার।
আহমেদ মানিক কিছু সিট ফটোকপি আর স্পাইরাল করতে নীলক্ষেতে এসেছিলেন। সেখানে তার সঙ্গে কথা হয়।
আহমেদ মানিক সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আগে একটি কোর্সের বইয়ের ফটোকপি আর প্রতিবেদন তৈরি করতে এক হাজার টাকার মতো লাগত। কিন্তু এখন এক হাজার ৫০০ টাকার নিচে করা যাচ্ছে না।”
বাজার বিশ্লেষণে দেখে গেছে, হঠাৎ করেই সব ধরনের শিক্ষা উপকরণের দাম বেড়েছে। বিশেষ করে বই ও খাতা বা কাগজের দাম। বিভিন্ন ধরনের তৈরি খাতার দাম বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে চিকিৎসাবিদ্যা, প্রকৌশল শিক্ষা ও আইনের বইয়ের দাম। বিভিন্ন বিদেশি লেখকের মূল বই বাজারে এখন মিলছে না। ফটোকপি বইয়ের দাম বেড়েছে গড়ে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ।
মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর নীলক্ষেত ঘুরে দেখা যায়, কাগজ, খাতা, পেন্সিল, ব্যবহারিক খাতা, মার্কার, স্কুল ফাইল, অফিস ফাইল, বাচ্চাদের লেখার স্লেট, ক্যালকুলেটর, সাদা বোর্ড, জ্যামিতি বক্স, টালি খাতা, কলম বক্স, স্কেল, পরীক্ষায় ব্যবহৃত ক্লিপবোর্ড, কালিসহ সব পণ্যের দাম বেড়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা শিক্ষার্থীরা বলেন, “পাঠ গ্রহণের প্রয়োজনে তাদের বিভিন্ন রেফারেন্স বুক ও নোট ফটোকপি করতে হয়। গত এক মাসে ফটোকপি ব্যয় বেড়েছে। ফটোকপির দোকানদারেরা জানিয়েছেন, কালি ও কাগজের দাম বাড়ায় তারাও দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।”
নীলক্ষেত মোড়ের শিক্ষা উপকরণের দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, ব্যবহারিক খাতা ৪০ টাকারটা এখন ৫০ টাকা, ৬০ টাকারটা ৭০ টাকা। কলমের দাম ডজন প্রতি বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। মার্কার পেন প্রতি পিস ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা হয়েছে। সাধারণ ক্যালকুলেটর ৮০ টাকারটা ১২০ টাকা, ৯৯১ এক্স ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা, ৯৯১ এক্স প্লাস ১ হাজার ৩৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা, ৯৯১ এমএস ৮৫০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা।
জ্যামিতি বক্স ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা। ৩০০ পেজের খাতা ৫০ টাকা থেকে ৬৫ টাকা, ১২০ পেজের খাতা ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকা, কালার পেপার রিম ৩২০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা। মিনি ফাইল প্রতিটি ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকা। জিপার ফাইল ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা। রেজিস্টার খাতা ৩০০ পেজ ১২০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা, ৫০০ পেজ ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকা। প্লাস্টিক ও স্টিলের স্কেল ডজন প্রতি ২০ টাকা থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। রাবার ডজন প্রতি ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা বেড়েছে।
কাগজের দাম বাড়ার বিষয়ে নীল ক্ষেতের পেপার হাউসের ম্যানেজার আলতাফ হোসেন বলেন, “দেশে একের পর এক পণ্যের দাম বেড়েছে। যে কারণে কাগজের দাম বেড়েছে। এর আগে, এভাবে কখনো দাম বাড়ার নজির নেই।”
তিনি আরও বলেন, “কাগজের দাম বাড়ার অন্যতম আরেকটি কারণ মিল সিন্ডিকেট। তারা বাজারে সংকট দেখিয়ে দাম বাড়ায়।”
ইডেন কলেজের এক শিক্ষার্থীর সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “বাসা থেকে আমায় প্রতি মাসে নিদিষ্ট টাকা দেয়। সেখান থেকেই সব খরচ বহন করতে হয়। প্রতিনিয়ত বই, খাতাসহ বিভিন্ন নোট ফটোকপি করে নিতে হয়। আগে একটি ২০০ পেইজের খাতা ৫৫ টাকা হলে কেনা যেত। তা এখন ৬৫- ৭০ টাকায় নিতে হচ্ছে। তাই আমার মতো শিক্ষার্থীদের অনেক কষ্ট করে চলতে হয়।”