• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আলোচনায় ‘হিরো আলম’


সফিকুল ইসলাম
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৩, ০৯:৫৯ পিএম
আলোচনায় ‘হিরো আলম’

বগুড়া-৪ ও ৬ আসনের উপনির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী একেএম রেজাউল করিম তানসেনের কাছে মাত্র ৮৩৪ ভোটের ব্যবধানে হেরে যাওয়া আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমের প্রার্থীতা ও পরাজয় নিয়ে পাল্টাপাল্টি মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরইমধ্যে নতুন করে আলোচনায় উঠে আসছেন ‘হিরো আলম’।

আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের নাম নিয়ে বিতর্কে যেতে চান না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তবে অনেক বেশি ভোট পাওয়ায় হিরো আলমকে অভিনন্দন জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

হিরো আলমকে প্রার্থী করেছে বিএনপি

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “ফখরুল সাহেব বললেন, রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে হিরো আলমকে হারানো হয়েছে। হায়রে মায়া! হিরো আলমের জন্য এতো দরদ উঠল তার। তিনি ভেবেছিলেন, হিরো আলম জিতে যাবে। কিন্তু হিরো আলম এখন জিরো হয়ে গেছে। হিরো আলমকে বিএনপি নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছে। তারা সংসদকে ছোট করার জন্য হিরো আলমকে প্রার্থী করেছে। অবশেষে ফখরুলের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে।”

হিরো আলমকে নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, “যার কথা বলছেন, এ নাম নিয়ে অহেতুক আমি আর বিতর্কে যেতে চাই না। বিএনপি একটা উদ্দেশ্য নিয়ে যা করেছে, সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি, এটুকুই।”

রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

এর আগে শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৫টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এসময় মির্জা ফখরুল বলেন, “এই সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। এটা প্রমাণিত হয়েছে, আবার যেসব উপনির্বাচন হয়ে গেল, সেই উপনির্বাচনগুলোতে। আমি সেই বিষয়ে যাব না।”

হিরো আলম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি শুধু বলতে চাই একটি কথা। হিরো আলম (বগুড়া উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী), সে আজকে প্রমাণ করেছে যে, আওয়ামী লীগ এই হিরো আলমের কাছেও কতটা অসহায়। যে তাকে (আওয়ামী লীগ) রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে জিততে হয় ৬০০-৭০০ ভোটে।”

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক অভিযোগ করে বলেন, “হিরো আলমকে দাঁড় করিয়ে নির্বাচনকে হাস্যকর করার চেষ্টা করা হচ্ছে। রোববার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে ঢাকায় নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ অভিযোগ করেন।”

‘হিরো আলমকে ঠেকাতে এমন অবস্থা হয়েছে, সেখানে আওয়ামী লীগ নেতাদের অবস্থা কোন জায়গায় আছে’ বিএনপি নেতাদের এমন মন্তব্য প্রসঙ্গে ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, “তারা (বিএনপি) নির্বাচনে আসুক। আমাদের অবস্থা তখন প্রমাণ হবে। জনগণ ভোট দিয়ে দেখাবে আমাদের অবস্থা কেমন আছে। আমি মনে করি, হিরো আলমকে দাঁড় করিয়ে নির্বাচনকে হাস্যকর করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাদের (বিএনপি) যদি শুভবুদ্ধির উদয় হয়, তবে জাতীয় নির্বাচনে তারা অংশ নেবে। মানুষের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ দেবে।”

আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমকে যারা ‘ফলো’ করেন (ফেসবুকে ফলোয়ার ২০ লাখ, ইউটিউবে ১৫ লাখেরও বেশি) তাদের বেশিরভাগই যুবক শ্রেণির। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইউটিউবে তার নিয়মিত দর্শক। তার ব্যক্তিগত আইডি পরীক্ষা করে মিলেছে এ তথ্য। ভোটে দাঁড়ানোর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যারা তাকে সাহস দিয়েছেন, এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই যুবক। বগুড়া-৪ আসনের আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।

বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) ফোনে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে তিনি এ নির্দেশ দেন।

সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান বলেন, “যেহেতু হিরো আলম ফলাফল নিয়ে অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এবং টিভি-টকশোতেও একই অভিযোগ করেছেন, সেটা দেখে সিইসি স্যার আমাকে ফলাফল পুনরায় যাচাইয়ের জন্য আজ সকালে ফোনে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ফলাফলের সব কপি ঢাকায় পাঠাতে বলেন।”

তিনি বলেন, “পরে আমরা ফলাফল আবার যাচাই করে দেখেছি সব ঠিক আছে। আমরা তাকে ইভিএম মেশিনের ফলাফলের কপি এবং কেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সই করা ফলাফলের কপি দিয়েছি।”

হিরো আলমকে কেউ জিরো বানাতে পারেনি

বগুড়ার দুই আসনের উপনির্বাচনে পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আলোচিত ইউটিউবার আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম বলেছেন, “আমাকে কেউ কোনো দিন জিরো বানাতে পারেনি, পারবেও না। হিরোকে যারা জিরো বানাতে এসেছে তারাই এখন জিরো হয়ে গেছে।”

শনিবার রাত ৯টার দিকে ফেসবুক লাইভে তিনি এসব কথা বলেন।

তাকে নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের বিভিন্ন মন্তব্যের জেরে তিনি ফেসবুক লাইভে আসেন। হিরো আলম বলেন, “আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদের স্যার আজকে হিরো আলমকে নিয়ে কিছু মন্তব্য করেছেন। হিরো আলমকে নাকি বিএনপি ভোটে দাঁড়িয়ে দিয়েছে। আমার কথা আমাকে কেন বিএনপি দাঁড়িয়ে দেবে। ভোটের মাঠে আমার পাশে কি বিএনপির কাউকে দেখা গিয়েছিল।”

হিরো আলম বলেন, “বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম স্যার বলেছেন, বর্তমান সরকার আজকে হিরো আলমের কাছে অসহায়। আমি বলতে চাই- আমি হিরো আলম যে অসহায় হয়েছি এই প্রশ্নের জবাব কে দেবে? আমার যে ভোটের ফলাফল কেড়ে নেওয়া হলো তার প্রশ্নের জবাব কে দেবে?”

তিনি বলেন, “ওবায়দুল কাদের স্যার আরও একটি কথা বলেছেন, হিরো আলম এখন জিরো হয়ে গেছে। এটা ভুল বলেছেন। হিরো আলমকে কেউ কোনো দিন জিরো বানাতে পারেনি, পারবেও না। হিরো আলম কারও কাঁধের ওপর ভর দিয়ে এখানে আসেনি। হিরো আলমকে হারানো হয়েছে এটা একটা পরিকল্পনা, চক্র করে হারানো হয়েছে। অনেকে বলছেন, পার্লামেন্টকে ছোট করা হবে, হিরো আলম নির্বাচন করলে। তাহলে পার্লামেন্টে যেতে হলে কিছু আইন করতে হবে। যার যোগ্যতা নেই সে যেতে পারবে না। যার লেখাপড়া নেই সে সংসদে যেতে পারবে না।”

হিরো আলম বলেন, “আর একটা বিষয়ে আইন করছেন। যারা ভোট করবে স্বতন্ত্রভাবে তাদের ১ শতাংশ ভোটার তালিকা লাগবে। যদি তাই হয়, তাহলে দলীয়ভাবে যারা করবে তাদের ১ শতাংশ লাগে না কেন? আইন সবার জন্য সমান। তাহলে আইন চেঞ্জ করতে হবে। যারা দলীয়ভাবে বা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করবেন, তাদের সবার ১ শতাংশ ভোটার তালিকা দিতে হবে। না হলে ১ শতাংশ তুলে দিতে হবে।”

Link copied!