• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

চামড়া রপ্তানিতে ৫০ কোটি ডলার আয় বঞ্চিত দেশ


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জুলাই ১, ২০২৩, ০৩:৪০ পিএম
চামড়া রপ্তানিতে ৫০ কোটি ডলার আয় বঞ্চিত দেশ

পর্যাপ্ত এলডব্লিউজি সনদ না থাকায় বিশ্ববাজারে চামড়া রপ্তানিতে অন্তত ৫০ কোটি ডলার হারাচ্ছে বাংলাদেশ। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে ভালো আয় করতে হলে বৈশ্বিক সংস্থা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ থাকতে হয়। অথচ বাংলাদেশের চামড়া খাতের মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠানের এই সনদ রয়েছে। যে কারণে বাংলাদেশের এই প্রতিষ্ঠানগুলো এমন দেশে চামড়া রপ্তানি করে যেসব দেশে ব্র্যান্ডমূল্য নেই। তাই আয় হয় না তেমন।

বাংলাদেশ ট্যানার্স আ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, এলডব্লিউজি সনদ না থাকায় বাংলাদেশ প্রতিবছর এই খাত থেকে প্রায় ৫০ হাজার মার্কিন ডলার হারাচ্ছে।

এই খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, এলডব্লিউজি সনদ চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে ভালো দাম পেতে সহায়তা করে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থা ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের (ইউএসজিবিসি) লিড সনদ পোশাক কারখানাগুলোকে ভালো দাম পেতে সহায়তা করে। তেমনি চামড়া খাতের ব্যবসায়ীদের এলডব্লিউজি সনদ থাকলে এই খাতে আরও বেশি মুনাফা আসতো। যেটা থেকে বাংলাদেশ এখন বঞ্চিত হচ্ছে। তাই চামড়া খাতের ব্যবসায়ীদের এলডব্লিউজি সনদ লাভ করা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, বর্তমানে বিশ্বে এক হাজারের বেশি ব্র্যান্ড ও সরবরাহ খাতের প্রতিষ্ঠান এই সংস্থার সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।

জানা গেছে এলডব্লিউজি মূলত কারখানা নিরীক্ষার জন্য একটি মান কাঠামো তৈরি করে। সে অনুযায়ী কারখানাগুলোকে গোল্ড, সিলভার, ব্রোঞ্জ ও সাধারণ কারখানায় শ্রেণিভুক্ত করে। নিরীক্ষার ক্ষেত্রে পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বর্জ্য পরিশোধন, কাঁচামালের উৎস, পানির সুষ্ঠু ব্যবহারসহ অন্যান্য বিষয় খতিয়ে দেখা হয়।

দেশে চামড়া প্রক্রিয়াজাত কারখানাগুলোকে আন্তর্জাতিক মানে নিতে রাজধানীর হাজারিবাগ থেকে সরিয়ে সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে নেওয়া হয়। সেখানে প্রায় ৫৪৭ বোটি টাকা ব্যয়ে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারও তৈরি করা হয়। কিন্তু সেই শোধনাগার পুরোপুরি প্রস্তুত না হওয়ায় ট্যানারি প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও এলডব্লিউজি সনদ পাচ্ছে না। যে কারণে এর লোকসানি প্রভাব পড়ছে চামড়া রপ্তানির সার্বিক খাতে।

ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলছেন, দেশে প্রক্রিয়াজাত প্রতিটি চামড়া কমপক্ষে ৪৫ সেন্ট থেকে শুরু করে ১ দশমিক ৬০ ডলারে রপ্তানি হচ্ছে। তবে কারখানগুলোর এলডব্লিউজি সনদ থাকলে এই দর হতো দ্বিগুণের বেশি।

দেশে এখন পর্যন্ত চামড়া খাতের দুটি প্রতিষ্ঠান এলডব্লিউজি সনদ পেয়েছে। এ ছাড়া আরেকটি প্রতিষ্ঠান সনদ পেতে নীরিক্ষার পর্যায়ে আছে। দেশের কে গ্রুপের প্রতিষ্ঠান রিফ লেদার কারখানা কাঁচা চামড়া থেকে ফিনিশড ধাপ পর্যন্ত কাজের জন্য এলডব্লিউজি সনদ পেয়েছেন। আর রিটেনিং পর্যায় থেকে ফিনিশড ধাপ পর্যন্ত এলডব্লিউজি সনদ পেয়েছে আ্যপেক্স ফুটওয়্যার। এ ছাড়া এবিসি ফুটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ নামের আরও একটি প্রতিষ্ঠান নিরীক্ষাধীন রয়েছে।

অপরদিকে ট্যানারি মালিকরা জানান, কয়েকটি দেশ বাংলাদেশ থেকে কম মূল্যে আংশিক প্রক্রিয়াজাত চামড়া ক্রয় করে কিছুটা মূল্য সংযোজন করে তা পুনরায় বিক্রি করছে বিশ্ববাজারে।

বাংলাদেশ ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শাহীন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ বছরে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় হারাচ্ছে।

ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, দেশের ট্যানারিগুলোর এলডব্লিউজি সনদ থাকলে প্রক্রিয়াজাত চামড়া আমদানি করা লাগতো না। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও সাশ্রয় হতো।

অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থ বছরের জন্য ১৪৪ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। এরমধ্যে মে মাসে রপ্তানি হয়েছে ১১২ কোটি ডলারের চামড়া ও পণ্য।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, করোনার আগে এসব পণ্য রপ্তানি করে ১০০ কেটি ডলারের বেশি আয় হতো। করোনাকালীন দুই বছরে অনেকটা কমে গেলেও সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ে এই খাতে ১০০ কোটি ডলারের বেশি আয় হয়েছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশে চামড়ার বড় রপ্তানি বাজার হচ্ছে চীন। ২০২২-২৩ অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত চীনে ৫ কোটি ডলারের বেশি চামড়া রপ্তানি হয়েছে। রপ্তানিতে চীনের পরের অবস্থানে আছে ইতালি, স্পেন, ভিয়েতনাম, হংকং, জাপান ও ভারত। এসব দেশে প্রায় ৫০ লাখ ডলারের বেশি মূল্যের চামড়া রপ্তানি হয়। আবার তাইওয়ান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, দক্ষিণ কোরিয়া, পুর্তগাল ও তুরস্কে উল্লেখযোগ্য হারে দেশের চামড়া রপ্তানি হয়।

ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, ২২ বর্গফুট আকারের একটি চামড়া দিয়ে উন্নত মানের অন্তত ১০ জোড়া জুতা তৈরি করা সম্ভব। যার বাজার মূল্য দাঁড়ায় অন্তত ৫০ হাজার টাকা। বাংলাদেশের চামড়ার যে মান তা বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে অনেক ভালো। তাই ট্যানারি ব্যবসায়ীরা বলছেন এলডব্লিউজি সনদ পেলে বাংলাদেশ চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে অনেক ভালো করবে।

Link copied!