দেশে সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধ এবং যারা এই হামলার সঙ্গে জড়িত তাদের সকলকে বিচারের আওতায় আনার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে মশাল মিছিল করেছে নাগরিক সমাজ।
বুধবার (২০ অক্টোবর) বিকেল ৪ টায় রাজধানীর শাহবাগ জাদুঘরের সামনে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ' ব্যানারে 'সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হোন' শীর্ষক এ নাগরিক বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
বিক্ষোভ সমাবেশের পর সন্ধ্যা ৬ টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে মশাল মিছিল করেন নাগরিক সমাজ। মিছিলটি এলিফ্যান্ট রোড, সায়েন্সল্যাব, নিউ মার্কেট, নীলক্ষেত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়।
এ সময় বক্তারা বলেন, “কুমিল্লা, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তা দিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ‘ব্যর্থ’। সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা তদন্তে ‘গণতদন্ত কমিটি গঠন করে কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন করারও দাবি জানান তারা।
মোজহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “সামগ্রিকভাবে আমাদেরকে এই সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে।”
গণজাগরণ মঞ্চের মূখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেন, “শুধু এই হামলা নয়, পূর্বের কোনো সাম্প্রদায়িক হামলার বিচার হয়নি, দেশে যত সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে সবগুলোর বিচার করতে হবে। প্রয়োজনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য যেমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুত বিচার করা হয়েছিলো, সাম্প্রদায়িক হামলার বিচারেও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে।
এছাড়াও বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক বলেন, “যেসব জায়গায় হামলা হয়েছে, সেইসব স্থানে দায়িত্বরত ডিসিরা-এসপিরা যারা আগে হতেই আভাস পেয়েছেন এমন কিছু হতে যাচ্ছে, এই কর্মকর্তাদের অনতিবিলম্বে দায়িত্ব হতে অব্যাহতি দিয়ে তাদেরকে আইনি হেফাজতে আনা হোক৷”
এছাড়াও আমরা নিরাপদে শান্তিতে ধর্ম পালন করবো, উৎসব উৎযাপন করবো, সেই সুযোগ পর্যন্ত আজকে বাংলাদেশের মানুষের সামনে নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
সমাবেশে দেশের বিভিন্ন কবি, সাহিত্যিক, শিক্ষক, বামপন্থী রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও তাদের ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে থেকে ঘোষণা পত্র পাঠ করেন সাবেক ছাত্রনেতা বাকি বিল্লাহ। এ সময় তিনি আটটি দাবি জানান।
দাবিগুলো হলো:
১. সারাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সঙ্গে জড়িত এবং মদদদাতাদের গ্রেফতার করে বিচার করা।
২. অব্যাহত সাম্প্রদায়িক হামলার দায় সরকার ও পুলিশ প্রশাসনকে গ্রহণ করাসহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অপসারণ করা।
৩. সভা-সমাবেশ এবং ইউটিউব-ফেসবুকে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া।
৪. বহুধারার শিক্ষাপদ্ধতি বাতিল করে মাতৃভাষায় এক ধারার বিজ্ঞানমুখী শিক্ষা পদ্ধতি চালু করা।
৫. দেশের প্রতিটি স্কুলে শিল্পকলা বিষয়ক একাধিক শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করাসহ পাঠ্যপস্তকের সাম্প্রদায়িকীকরণ রহিত করার পাশাপাশি ইউনিয়ন পর্যায়ে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন করা।
৬. রামু, নাসিরনগর, সাতক্ষীরা, অভয়নগর, শাল্লাসহ পূর্বের সব সাম্প্রদায়িক হামলার বিচার করাসহ সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা তদন্তে ‘গণতদন্ত কমিটি’ গঠন করে তার সুপারিশ বাস্তবায়ন করা।
৭. সব দলকে ধর্মকে রাজনীতি ও ক্ষমতার হাতিয়ার করা থেকে বিরত থাকা।
৮. সংবিধান সংশোধন করে ‘রাষ্ট্রধর্ম’ বাতিল করে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ পুনঃস্থাপন করার পাশাপাশি ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা।
উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনোয়ার তপনের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশেন সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ-মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় নেতা মানস নন্দী, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, কবি ফেরদৌস আরা রুমি, লেখক ইমতিয়াজ মাহমুদ, চলচ্চিত্র আন্দোলনের কর্মী বেলায়েত হোসেন মামুন, নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ আন্দোলনের সদস্য আকরামুল হক প্রমুখ।