সম্প্রতি পূজা মণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখার ঘটনায় ওয়াজ মাহফিলে উসকানিমূলক বক্তব্য পুলিশকে দোষী করে অপমানজনক, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও উগ্র বক্তব্য প্রচার করায় মাওলানা আব্দুর রহিম বিপ্লবী (৩৯) নামে এক ইসলামি বক্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) সকাল ৭টা ২০ মিনিটের দিকে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন শুভাঢ্যা ইউনিয়নের চুনকুটিয়া পূর্বপাড়া (আমিন পাড়া) জামে মসজিদের সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
সন্ধ্যায় গ্রেপ্তারের এই বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদ রহমান।
আজাদ রহমান বলেন, “গত ১৩ অক্টোবর দুর্গাপূজার মহাষ্টমীর দিন ভোরে কুমিল্লা শহরের নানুয়াদিঘির পাড়ে একটি পূজামণ্ডপে কোরআন পাওয়া যায়। একইদিন ইসলামি বক্তা মাওলানা আব্দুর রহিম বিপ্লবী একটি ওয়াজ মাহফিলে বক্তৃতাকালে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন, আন্দোলনের হুমকি দেন। তাছাড়া কুমিল্লার পূজা ইস্যুকে কেন্দ্র করে চাঁদপুরে নিহতের ঘটনায় পুলিশকে দায়ী ও দোষী করে অপমানজনক, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, অবজ্ঞা ও উগ্র বক্তব্য প্রচার করেন।”
সিআইডির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, এ বক্তব্য বিভিন্নভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নেটিজেন ও জনগণের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এ বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ায় দেশে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে। একইসঙ্গে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও উপাসনালয়ে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। ফলে অনেকেই তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।”
বিষয়টি সিআইডির সাইবার মনিটরিং সেলের নজরে এলে তারা দ্রুত আব্দুর রহিম বিপ্লবীকে শনাক্ত করে। পরে সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহমুদুল ইসলাম তালুকদারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে পুলিশ পরিদর্শক মোসাম্মৎ শাজেদা লতার নেতৃত্বে সাইবার মনিটরিং সেলের একটি টিম তাকে গ্রেপ্তার করে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
এদিকে গ্রেপ্তার মাওলানা আব্দুর রহিম বিপ্লবীর বিরুদ্ধে পল্টন মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা হয়েছে। মামলা নম্বর-৪৩।
জানা গেছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পূজামণ্ডপ সম্পর্কিত উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়ার কথা তিনি স্বীকার করেছেন। তার এ বক্তব্য সিআইডি পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য সংরক্ষণ করেছে।
এ ধরনের ধর্মীয় উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করা একটি ফৌজদারি অপরাধ। এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য থাকলে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে সিআইডি।
এর আগে দুর্গাপূজার মধ্যে গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লা শহরের একটি মন্দিরে কথিত ‘কোরআন অবমাননার’ অভিযোগ তুলে কয়েকটি মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়। এ ঘটনায় বিভিন্ন থানায় আট মামলায় ৭৯১ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে কোতোয়ালী মডেল থানায় পাঁচটি, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানায় দুটি ও দাউদকান্দি থানায় একটি মামলা হয়েছে। ৯১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলায় ৭০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৪৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
কুমিল্লার ঘটনার পর গত কয়েক দিনে চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনী, রংপুরসহ কয়েকটি জেলায় হিন্দুদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়ে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।