• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
বক্ররেখা

বায়ু শনশন শীতে কনকন


ইমন চৌধুরী
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২১, ২০২৩, ০৫:১৬ পিএম
বায়ু শনশন শীতে কনকন

শীত আমার ভীত, আগুন আমার ভাই, শীতে রে কইও আমার কাঁথা-কাপড় নাই! ছেলেবেলায় মাঘের শীতে বাড়ির উঠোনে আগুন পোহাতে পোহাতে আমরা সুর করে বলতাম এসব ছড়া। এখনকার প্রজন্ম এসব ছড়ার সঙ্গে খুব একটা পরিচিত বলে মনে হয় না।
আমার মেয়েকে একদিন বলতেই সে হাসতে হাসতে বলল, ‘বাহ! দারুণ তো! তুমি এসব ছড়া কোথায় শিখেছ আব্বু?’ 
কোথায় যে শিখেছি, ঠিক মনে করতে পারি না। মাথা চুলকে বলি, ‘মনে করতে পারছি না রে মা। শীতে ভুলে গেছি সব!’
মাঘের শীতে অনেক কিছুই ভুলে যাই। ভুলে যেতে হয়। হাত, পা, কান, মাথা সব ঢেকেঢুকে কম্বলে ডুব দিতে হয়। কম্বল থেকে বের হলেই ঠান্ডা যেন অদৃশ্য ডান্ডা হাতে তেড়ে আসে। ঠান্ডায় রাজা-প্রজা সবাইকে ভুগতে হয়। 
তবে সবচেয়ে বেশি অসুবিধা হয় বোধ হয় পকেটমারদের। লোকজন ঠান্ডায় দুই হাত জ্যাকেট বা প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে রাখেন। তাতে পকেটমারদের অন্যের পকেটে হাত চালাতে বেশ বেগ পেতে হয়। এই শীত বা ঠান্ডা যুগে যুগে ভুগিয়েছে অনেক রথী-মহারথীকেও।  
একবার রাজা গোপাল ভাঁড়কে পরীক্ষা করার জন্য প্রচণ্ড ঠান্ডায় সারা রাত পুকুরে থাকার আদেশ দিলেন। সারা রাত ঠান্ডায় পুকুরে থাকতে পারলে গোপাল ভাঁড়কে পুরস্কৃত করা হবে। গোপাল যথারীতি রাজার কথামতো সারা রাত পুকুরে রাত কাটালেন। এদিকে পুকুরের পাশে মশাল জ্বালিয়ে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
কিন্তু গোপাল রাতভর প্রচণ্ড ঠান্ডায় পুকুরে থাকলেও রাজা তাকে পুরস্কৃত করলেন না। রাজার মতে, পুকুরের পাশে জ্বালানো মশালের আগুনের উত্তাপের কারণেই গোপাল সারা রাত প্রচণ্ড ঠান্ডায় পুকুরে থাকতে পেরেছে। গোপালও মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল রাজামশাইকে পাল্টা জবাব দেবার। একদিন রাজাকে নিমন্ত্রণ করল গোপাল। নিচে আগুন জ্বালিয়ে অনেক উঁচুতে ভাতের হাঁড়ি বসাল। গোটা দিন পার হলেও গোপালের রান্না শেষ হলো না। শেষমেশ ধৈর্য ধরতে না পেরে রাজা গোপাল ভাঁড়কে বললেন, ‘বলি এত উঁচুতে ভাতের হাঁড়ি থাকলে রান্না শেষ হবে কীভাবে?’ উত্তরে গোপাল বলল, ‘যদি মশালের আলোয় পুকুরের ঠান্ডা পানি গরম হতে পারে, তাহলে এত উঁচুতে থাকা ভাতের হাঁড়িও গরম হবে। একটু অপেক্ষা করুন না।’ রাজা এবার নিজের ভুল বুঝতে পেরে চুপ মেরে গেলেন।
শীত আমাদের অন্য সময়ের চেয়ে বেশি মাত্রায় রোমান্টিক করে তোলে। শীত একটি বিয়েবান্ধব ঋতু। তাই এ সময় বিয়ের ধুম পড়ে চারদিকে। শীতে আমাদের মাথা ঠান্ডা থাকে। তাই সংসারে ঝগড়ার পরিমাণও কমে আসে। এক কম্বলে ভাগাভাগি করে থাকতে হয় বলে স্বামী-স্ত্রী’র মাঝে দূরত্ব কমে। ভালোবাসা বাড়ে।
ইংরেজ কবি অ্যান ব্র্যাডস্ট্রিট বলেছেন, আমাদের যদি শীত না থাকত, তাহলে বসন্ত এত আনন্দদায়ক হতো না। সুতরাং শীতকে অপছন্দ করলেও শীতও আমাদের জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ। 
আসুন, শীতের কৌতুক দিয়ে এ বেলায় ইতি টানি। এক প্রেমিক গদগদ হয়ে প্রেমিকাকে বলল, ‘আচ্ছা জান, বলো তো কী করলে তুমি বিশ্বাস করবে, আমি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি।’
জবাবে প্রেমিকা বলল, ‘বেশি কিছু না, মাত্র দুটি কফি অর্ডার দাও। একটি হট এবং অন্যটি কোল্ড কফি উইথ বরফ কুচি।’
প্রেমিক : এই শীতে একটা কোল্ড কফি কেন! দুটোই হট কফি নিই?
প্রেমিকা : না, একটা হট আর একটা কোল্ড। হট কফিটা আমার জন্য, আর কোল্ড কফিটা তুমি খাবে। কোল্ড কফিটা খেয়ে শেষ করতে পারলে আমি বুঝে নেব, সত্যিই তুমি আমাকে ভালোবাস।
প্রেমিক : অসম্ভব! আজ থেকে আমরা দুজন ফ্রেন্ড। জাস্ট ফ্রেন্ড। অন্য কিছু নয়!

Link copied!