বরেণ্য লেখক আহমদ ছফা ছিলেন একজন জনবুদ্ধিজীবী ও সংগঠক। ষাটের দশক থেকে তার সাহিত্য জীবন শুরু। মাত্র ৫৮ বছর বয়সে এই কিংবদন্তির মৃত্যু হয়। এই ব্যক্তিত্বের স্মরণে প্রতি বছর জুলাইয়ে ‘আহমদ ছফা স্মৃতিবক্তৃতা’ হয়।
শনিবার (১৫ জুলাই) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ মিলনায়তনে ছিল ‘আহমদ ছফা স্মৃতি বক্তৃতা-২০২৩’। আহমদ ছফা রাষ্ট্রসভা ও এশীয় শিল্প ও সংস্কৃতির যৌথ উদ্যোগে এই আয়োজনে স্মৃতি বক্তা ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা ও লেখক নূরুল আলম আতিক। ‘ছফার আঁকা সুলতানের মুখ’ শীর্ষক এই বক্তৃতায় তিনি অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যামিনী রায় থেকে শুরু করে জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান হয়ে সাম্প্রতিক শিল্পচর্চার প্রেক্ষাপটে এস এম সুলতানের ভূমিকা ও সুলতানের সঙ্গে আহমদ ছফার সখ্য, তাঁর শিল্পকলা নিয়ে ছফার ভাবনা ও রচনা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন।
বহুমাত্রিক লেখক আহমদ ছফা ও শিল্পী এস এম সুলতানকে মূল্যায়ন করলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা নূরুল আলম আতিক। তিনি বলেন, ‘আহমদ ছফা ছিলেন বাংলাদেশের কণ্ঠ এবং এস এম সুলতান ছিলেন বাংলাদেশের প্রাণ। সুলতান বাংলাদেশের হৃদয়কে তাঁর শিল্পে ধারণ করেছেন। আর আহমদ ছফা তাঁর লেখায় সুলতান নামের একটি আয়না সৃষ্টি করেছেন। সেই আয়নার সামনে আমরা দাঁড়ালে নিজের ও পূর্বপুরুষের মুখের আদল দেখতে পারব।’
এস এম সুলতান সম্পর্কে বিভিন্ন সাহিত্যিক, সমালোচকের মূল্যায়ন নিয়ে আলোচনা করে নূরুল আলম আতিক আরও বলেন, ভারতবর্ষের কোনো শিল্পীর সঙ্গে এস এম সুলতানের তুলনা চলে না। সাহিত্যে যেমন মাইকেল মধুসূদন দত্ত, চিত্রকলাতেও তেমনি এস এম সুলতান। তাঁদের কোনো পূর্বসূরি-উত্তরসূরি নেই। তারা তাদের মতো—স্বতন্ত্র। এস এম সুলতানকে নিয়ে ‘লাল মিয়া’ নামের একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের সময় দেখেছি শিল্পকলা একাডেমিতে সংগৃহীত শিল্পকর্মগুলোর রং ক্ষয়ে যাচ্ছে। এগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিজ্ঞানের অধ্যাপক আখতারুজ্জামান। মূল বক্তব্যের ওপর আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান ও আলোকচিত্রশিল্পী নাসির আলী মামুন।
সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘আহমদ ছফা সম্পর্কে এখনো আমাদের অনেক কিছু অজানা রয়েছে। বহু বিচিত্র বিষয়ে তিনি কাজ করেছেন। কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধে তিনি প্রথম শ্রেণির কাজ করেছেন। তার লেখার ইংরেজি অনুবাদ হলে বাংলা সাহিত্য বিশ্বে অন্য রকম স্থান করে নিতে পারত। রাষ্ট্রচিন্তার ক্ষেত্রে আহমদ ছফা ছিলেন এক অনন্য চিন্তক। তিনি ভাবতেন, বাংলাদেশের জনগণের জাতীয় পরিচয় দাঁড়াবে। ছফাকে নানাভাবে চেপে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু চেপে রাখা যায়নি।’
আহমদ ছফা ও এস এম সুলতানের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সান্নিধ্য লাভের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে নাসির আলী মামুন বলেন, ‘দুজনেই ছিলেন অসাধারণ মানুষ। বহু বিষয়ে তাদের দুজনের মধ্যে মিল ছিল। আবার তারা দুজনেই একটি শ্রেণির নীরব ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। তবে এখন আহমদ ছফা ও এস এম সুলতানকে নিয়ে অনেক রকমের কাজ হচ্ছে। নতুন প্রজন্মের কাছে তাদের তুলে ধরতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে আখতারুজ্জামান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে আমরা একটি দেশ পেয়েছি। এই দেশকে কীভাবে গঠন করতে হবে, আহমদ ছফার রচনায় তার দিকনির্দেশনা রয়েছে। এ জন্য নতুন প্রজন্মকে আহমদ ছফার লেখা পড়তে হবে।’
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক জহিরুল ইসলাম জানান, আহমদ ছফার এ বছর ৮০তম জন্মদিন। তার জন্মদিন উপলক্ষে ২০০২ সাল থেকে আহমদ ছফা স্মৃতি বক্তৃতা আয়োজন করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে ছিল শিল্পী সানী জুবায়েরের একক সংগীত পরিবেশনা। তিনি দুটি নজরুলসংগীত ও ওস্তাদ বড়ে গুলাম আলীর তিনটি ঠুমরি পরিবেশন করেন। শুরু করেছিলেন ‘পিয়া পিয়া পিয়া পাপিয়া গেয়ে’, শেষ করেন ‘ক্যয় কারু সজনি আয়ে না বালামুয়া’গেয়ে।
 
                
              
 
																                   
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                    






































