হিন্দু সম্প্রদায়ের বিয়েতে অনেক রীতিই থাকে। মালা বদল, সাত ফেরে নেওয়া, সিঁদুর পরানো-এমন অনেক রীতিতেই বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হোন বর-কনে। বিয়েতে সবারই প্রধান আকর্ষণ থাকে সিঁদুর পরানো মুহূর্তটি। স্বজনদের থেকে ফটোগ্রাফাররা সবাই ওই মুহূর্তটির জন্য অপেক্ষায় থাকে। বর-কনের কাছেও বিয়ের স্মরণীয় মুহূর্তটি হচ্ছে সিঁদুরদান।
হিন্দু ধর্মের জাত প্রথা অনুযায়ী, কনের সিঁথিতে সিঁদুর পরানো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সিঁদুর হলো বিবাহিত নারীর প্রতীক। প্রজাপ্রতি ব্রহ্মার প্রতি শপথ করেই বিয়ের অনুষ্ঠানে যজ্ঞের পর সিঁদুর দানের অনুষ্ঠান হয়। এই কারণে সিঁথির সিঁদুরকে পবিত্র বলে মনে করা হয়। অনেকেই মনে করেন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেকার বন্ধন রক্ষা করে সিঁদুর।
হরপ্পা সভ্যতার সময় থেকেই হিন্দুদের বিয়েতে সিঁদুর প্রথার চলন শুরু হয়। ওই সময় সিঁদুর দান প্রথা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুরুষ বা নারীর বহু বিবাহ বন্ধ হয়ে যায়। একবার সিঁদুর পরানো হলেই কোনো নারী বা পুরুষ দ্বিতীয়বার বিয়ে করতেন না। সেই প্রথাতেই শ্রীরাধাকে সিঁদুর পরিয়েছিলেন কৃষ্ণ। রাম-সীতাও সিঁদুর দান আর অগ্নিকে সাক্ষী রেখেই সাতপাকে বেঁধেছিলেন। এরপর থেকেই হিন্দু ধর্মপ্রাণরা সিঁদুর প্রথাকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবেই পালন করে আসছেন।
অনেকের ধারণা, মেয়েদের মুখশ্রীতে আমুল পরিবর্তন হয় সিঁদুরদানে। সেই উদ্দেশ্যেই নাকি সিঁদুর প্রথার চলন। তবে এর বাইরে সিঁদুর পরা নিয়ে তেমন কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া যায় নি।
তবে হিন্দু ধর্মপ্রাণরা মনে করেন, সন্তানের মঙ্গলের জন্যই নারীরা সিঁথিতে সিঁদুর পরেন। তাছাড়া স্ত্রী সিঁদুর পরলে স্বামী যে কোনো বিপদ থেকে রক্ষা পাবে।
অন্যদিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের আরেক শ্রেণির মানুষ বিশ্বাস করেন, শাস্ত্রমতে সিঁদুর পরানোর সঠিক কোনও কারণ নেই। সিঁথিতে সিঁদুর না পরলে অমঙ্গল হবে কিংবা বিবাহিত মেয়েদের সিঁদুর পরতেই হবে এমন কোনো নিয়মও নেই।
তবে এই যুগে সাধারণ মেয়েরা মনে করেন,অবিবাহিত আর বিবাহিতদের চিহ্নিত করতেই এই প্রথা। কপালে সিঁদুরের ছোঁয়া কে লাগাবেন বা কে লাগাবেন না এটা নিজস্ব সিদ্ধান্ত।
সিঁদুর প্রথার পেছনে বৈজ্ঞানিক ব্যখ্যাও দিচ্ছেন অনেকে। সিঁদুরের লাল রঙের মধ্যে একটা উপাদান রয়েছে যা মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখে। যৌন উত্তেজনা বাড়াতে ভূমিকা রাখে এটি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে সিঁদুরে প্রচুর কেমিক্যাল মেশানো হয়। যা থেকে চুল উঠে যাওয়া, খুশকি হওয়া, ঘা হওয়া এসব সমস্যা হয়। আগেকার দিনে ফুলের পাপড়ি থেকে সিঁদুর বানানো হতো। প্রাকৃতিক সিঁদুর মাথা ঠান্ডা রাখে। তখন তা মন ও শরীরের জন্য উপকারী ছিল। কিন্তু এখন ভেজাল রঙ মিশিয়ে বানানো সিঁদুর অনেক ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্যের জন্য় হানিকর বলে মনে করা হয়।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস