• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

সন্তান পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ করলে


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৯, ২০২২, ০৪:২৩ পিএম
সন্তান পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ করলে

সন্তান জন্মের ৬ বছরের পর থেকেই শুরু হয় শিক্ষা জীবন। ধীরে ধীরে প্রাথমিক, মাধ্যমিক শেষ করে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠে পড়ে আপনার সন্তান। এই যাত্রাটা সহজ নয়। প্রতিটি ক্লাসে পড়াশোনার চাপ থাকে। আর পরীক্ষার চাপ তো থাকছেই। পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের প্রতিযোগিতায় সন্তানের উপর লেখাপড়ার চাপ আরও বেড়ে যায়। এই প্রতিযোগিতায় শুধু বাচ্চারাই নয়, বড়রাও সমান চাপে থাকে। নিজের সন্তান ক্লাসে টপ রেজাল্ট করবে সেই চেষ্টায় নাওয়া-খাওয়া ভুলে কষ্ট করে যান অভিভাবকরাও। নিয়মিত কোচিং ক্লাস, স্কুলের ক্লাসে যাওয়া, হোম ওয়ার্ক শেষ করা কত ব্যস্ততাই না থাকে। বয়স কম হলেও পড়াশোনার চাপ কিন্তু কম থাকে না। বড় ক্লাসে উঠলে পড়ার গণ্ডিও বাড়তে থাকে। 

পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে। রিপোর্ট কার্ডে দেখলেন আপনার সন্তান এক বিষয়ে কিছু কম নম্বর পেয়েছে। উপরের শ্রেণিতে উঠার অনুমতি পাচ্ছে না। অভিভাবক হিসাবে আপনার রাগ তো হবেই। কিন্তু কখনও ভেবে দেখেছেন সন্তান কেন রেজাল্ট খারাপ করেছে কিংবা খারাপ রেজাল্টের কারণে তা মানসিক অবস্থাটা কেমন হতে পারে? 

রেজাল্ট খারাপ হলে বাসায় ফেরার অপেক্ষা না করেই নিশ্চয়ই স্কুলের মধ্যেই দুই গালে দুই চড় কষিয়ে দিয়েছেন কোনও অভিভাবক। এটি বাচ্চাদেরকে মানসিকভাবে আরও দুর্বল করে দেয় বলে জানিয়েছে মনোবিশেষজ্ঞরা।

খারাপ রেজাল্টের জন্য বাচ্চাকে শাসন না করে বরং এর পেছনের কারণ খুজে বের করুন। সেই কারণ জেনে বাচ্চাকে সহযোগিতা করুন। যেন পরবর্তী সময়ে ভালো রেজাল্ট হয়। যদি আপনি তাকে মারধর করেন তবে লেখাপড়ার প্রতি বাচ্চার ভয়ভীতি বেড়ে যাবে। আগ্রহ কমে যাবে। তখন আপনার সন্তান চাইলেও মন দিয়ে লেখাপড়া করতে পারবে না। 

প্রাথমিক, মাধ্যমিক কিংবা কলেজের পরীক্ষায় সন্তানের পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হলে অভিভাবকদের মন খারাপ হওয়াটা স্বাভাবিক। বাচ্চাকে নিয়ে সারাবছর কষ্ট করার পর এই রেজাল্ট অভিভাবকদেরও বটে। তবে চেষ্টা করবেন, এই মন খারাপের প্রতিক্রিয়া যদি গঠনমূলক না হয়, তবে সন্তানের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। ভবিষ্যতে আরও খারাপ ফল করার প্রবণতা বেড়ে যাবে। 

মনোবিশেষজ্ঞরা জানান,  শারীরিক অসুস্থতা, পারিবারিক সমস্যা, মা-বাবার মধ্যে তীব্র দাম্পত্য কলহ, স্কুলের সহপাঠী বা শিক্ষক দ্বারা উত্ত্যক্ত হওয়া, কারও সঙ্গে আবেগের সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়ার মতো অনেক কারণই থাকতে পারে খারাপ ফলাফলের পেছনে। সেই কারণগুলো খুঁজে বের করুন। অভিভাবকদের এ নিয়ে ধৈর্যহারা হলে চলবে না।

পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল বিচ্ছিন্ন ঘটনামাত্র। হয়তো আগের পরীক্ষার ফলাফল আরও ভালো ছিল কিংবা পরবরতী সময়ের পরীক্ষায় আবারও ভালো করার সুযোগ রয়েছে। তাই মন খারাপ হলেও বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখুন।

সন্তান খারাপ রেজাল্ট করলেই অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেন অভিভাবকরা। এটাই কখনওই করবেন না। অন্য কারও সঙ্গে তুলনা করলে সন্তানদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সেই সময় তারা অভিভাবকদের বিরুদ্ধাচারণ করতেও দ্বিধাবোধ করে না। 

পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল হলেই লেখাপড়ার চাপ বাড়িয়ে দিবেন তা ঠিক নয়। চাপ বাড়ালে পরীক্ষার ফলাফল আরও খারাপ হতে পারে। সন্তানকে তার ধারণক্ষমতা অনুযায়ী লেখাপড়া করতে দিন। লেখাপড়ায় আগ্রহ বাড়বে। 

মনোবিশেষজ্ঞরা আরও জানান, সন্তানকে গালমন্দ করা, ফলাফল খারাপ নিয়ে কটূক্তি বা ব্যঙ্গ করা মোটেও উচিত নয়। সন্তানকে শারীরিক নির্যাতন করবেন না। তার খেলাধুলা বন্ধ করবেন না। বরং বিনোদনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখুন। কোনভাবেই সন্তান হতাশ বা বিষাদগ্রস্ত না হয়। 

সন্তানের পরীক্ষার ফলাফল মনের মতো হয়নি বলেও যদি তাকে চাপ দেন তা খুবই নেতিবাচক হবে। কোনও কারণে দুই এক নম্বর কম পেতেই পারে।  তাকে উৎসাহ দিয়ে যান। পরের পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য অভিভাবকদের এই সহযোগিতা প্রয়োজন হয় বাচ্চাদের।

স্কুলে পরিবেশের উপর নজর দিন। সব বাচ্চা সমান নয়। শিক্ষক যা ক্লাসে বুঝিয়ে বলছে তা আপনার সন্তান নাও বুঝতে পারে। সেই বিষয়টি খেয়াল রাখুন। প্রয়োজনে শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি জানাবেন। আপনার সন্তানকে একটু বাড়তি যত্ন নেওয়ার জন্য শিক্ষকের কাছে অনুরোধ করতে পারেন। মনে রাখবেন, অভিভাবক আর শিক্ষকদের সহযোগিতায় বাচ্চারা ভালো রেজাল্ট করতে পারে সহজেই। 

Link copied!