হজ শুধু আচারিক ইবাদত নয়; এটি আত্মিক পরিবর্তনেরও মাধ্যম। হজ ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জীবনে একবার হজ পালন করা ফরজ। একজন হজ পালনকারী ব্যক্তির জীবনে নৈতিকতা, দয়া ও তাকওয়ার ছাপ পড়ে। হজ পালনের পর একজন মুসলমানের জীবন আরও পরিশুদ্ধ, নিষ্কলুষ ও আল্লাহভীরু হয়ে ওঠে, এটিই হজের মূল লক্ষ্য।
এখনকার সময়ে উড়োজাহাজে হজে যাওয়া সহজ হলেও আগেকার যুগে হজ মানে ছিল দীর্ঘ, কষ্টকর ও সময়সাপেক্ষ এক সফর। জাহাজে চড়ে কিংবা হেঁটে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে যেতে হতো প্রাণের শহর মক্কায়। শতবাধা অতিক্রম করে যাঁরা হজ আদায় করে দেশে ফিরতে পারতেন, আমৃত্যু তাঁদের মর্যাদার চোখে দেখা হতো। কোনো কোনো এলাকায় হাজি সাহেবের সম্মানে বদলে যেত গ্রাম, পাড়া-মহল্লা আর বাড়ির নাম। নতুন নাম হতো—হাজিপুর, হাজিগাঁও, হাজিপাড়া কিংবা হাজিবাড়ি। আর যিনি হজ করে আসতেন তাঁকে মর্যাদার আসনে সমাসীন করে তাঁর নামের সঙ্গে যুক্ত হতো হাজি বা আলহাজ।
আমাদের সমাজে প্রচলন রয়েছে, হজ করে আসা ব্যক্তিকে সম্মানার্থে হাজি সাহেব বলে ডাকা হয়। বিশেষ গুণ বা বৈশিষ্ট্যের কারণে মানুষকে এভাবে সম্মান করে ডাকা ইসলামে নিষেধ নয়। বরং কাউকে উত্তম উপনামে ডাকা ইসলামি শিষ্টাচারের অংশ। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর সাহাবি হজরত আবু বকরকে সিদ্দিক, আয়েশাকে হুমায়রা, আলীকে আবু তুরাব, আবদুর রহমানকে আবু হুরায়রা, হুজাইফাকে নোমান, খালেদ ইবনে ওয়ালিদকে সাইফুল্লাহ, জাফর ইবনে আবু তালিবকে তাইয়ার উপনামে ডেকেছেন।
তবে হজ করে আসার পর গর্ব, অহংকার বা সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির নিয়তে নামের সঙ্গে নিজে নিজে হাজি বা আলহাজ উপাধি যুক্ত করা কোনোভাবেই বৈধ নয়। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তি কখনোই জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ অহংকার আছে।’ (সহিহ্ মুসলিম: ৯১)