ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষা বেলতলা গ্রামের বাসিন্দা কেরামত আলী। পেশায় ভ্যানচালক। পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতার আশায় ৯ মাস আগে পাড়ি জমান ভারতে। কাজ শুরু করেন কারখানার শ্রমিক হিসেবে। গেল মাসে কারখানা থেকে আটক করে ভারতীয় পুলিশ। ২৬ দিন আটকে রাখা হয় কারাগারে। পরে ১৫০ টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে সীমান্ত ঠেলে দেন ভারতীয় সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী।
কেরামত আলীর মতন ভাগ্যবদলের আশায় কেশার মেশিনে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন পাশের গ্রামের যুবক রবিউল ও আফজাল। মাসে বেতন পেতেন ৬০ হাজার টাকা। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের ঘটনায় তাদেরও জোর করে পুশইন করেছে ভারত।
গরুর মতন পুশইন করা হয়েছে বাংলাদেশ নাগরিকদের। বাদ পড়েনি কোন বয়সী মানুষ। আর ভারতে না গিয়ে দেশেই থাকার দৃঢ় সংকল্প তাদের।
বাংলাদেশিদের পাশাপাশি ভারতীয় নাগরিক ও মানসিক রোগীদের জোরপূর্বক পুশইন করছে ভারত। ফলে নানা ধরনের রোগ সংক্রমণ হতে পারে বলছেন চিকিৎসকরা।
পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, জেলায় গত এক মাসে ৭৯ জনকে পুশইন করা হয়েছে। হরিপুর উপজেলায় ৫০ জন ও পীরগঞ্জ উপজেলা সীমান্তে ২৯ জন। তাদের আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
জেলার ভারতীয় সীমান্ত রয়েছে ১৫৬ কিলোমিটার। চলমান পরিস্থিতি ঘিরে প্রতিটি বিওপিতে সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি ও পেট্রোলিং বাড়ানোর সঙ্গে পাহারা জোরদার করেছে ঠাকুরগাঁও ৫০ ও দিনাজপুর ৪২ বিজিবি।
পুশইন হওয়া কেরামত আলী বলেন, “গ্রামে কাজ না থাকায় ৯ মাস আগে কাঁটাতার পার হয়ে ভারতে গিয়েছিলাম। সেখানে পাথর ভাঙার কাজ করে ভালোই আয় হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ ভারত-পাকিস্তান সমস্যার পরেই আমরা যারা কাগজ ছাড়া সেখানে থাকতাম, তাদের পুলিশ খোঁজা শুরু করে। আমাকে কর্মস্থল থেকে পুলিশ আটক করে। সেখান থেকে ধরে সিলেটের পাশে বর্ডার পার করে বাংলাদেশে পার করে দেয়। এখন ভারতের অবস্থা ভালো না, তাই সেই দেশে আর যাব না।”
আফজাল ও রবিউল বলেন, “আমরা কোনো কাগজ ছাড়াই ভারতে কাজ করতাম। গত ১৫ দিন আগে আমাদের ভারতীয় পুলিশ ধরে সীমান্তে এনে ছেড়ে দেয়। সেখানে বিএসএফ আমাদের তারকাটা পার করে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। এখন আমরা দেশেই থাকব। ওই দেশে আর যাব না।”
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, “যাদের পুশইন করা হচ্ছে, তাদের তথ্য নিয়ে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। দুইজন ভারতীয় পুশইন করা হয়েছিল, তাদের পুনরায় ভারতে ফেরত পাঠানো হয়েছে।”