আর দশটা পরিবারের মতো তাদের এক ছাদের নিচে থাকা, একসঙ্গে খাওয়া, এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভালোবাসার ছবিও। সবই থাকে, শুধু হারিয়ে যায় সম্পর্কের আসল উষ্ণতা, ভালোবাসা, এটিই ‘সাইলেন্ট ডিভোর্স’।
চোখে দেখলে সব ঠিকঠাক। এক ছাদের নিচে থাকা দম্পতি, সামাজিক অনুষ্ঠানে একসঙ্গে যাওয়া, বর্ষপূর্তিতে ছবি পোস্ট, সবই আছে। কিন্তু বাস্তবে তারা একে অপর থেকে বহুদূরে, মানসিকভাবে বিচ্ছিন্ন। ঝগড়াঝাঁটি নেই, ডিভোর্সের কাগজ নেই, ড্রামা নেই। তবু এই সম্পর্ক আর নেই। এটাকেই বলা হচ্ছে ‘সাইলেন্ট ডিভোর্স’ বা নীরব বিচ্ছেদ।
এই প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। আধুনিক সমাজে যেখানে চেহারা রক্ষাই মুখ্য, সেখানে অনেকেই সন্তান, আর্থিক চাপ, বা অভ্যাসের কারণে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখেন। তবে বাস্তবে তারা সহবাস করেন রুমমেটের মতো, ভালোবাসার জুটি হিসেবে নয়।
আবেগ কমে যাওয়া
বছরের পর বছর একসঙ্গে থাকার পরও অনেক দম্পতি মধ্যে আবেগ কাজ করে না। ফলে ঝগড়া না থাকলেও কোনো গভীর আলাপ বা মানসিক সংযোগও থাকে না। তখন সম্পর্কটা হয়ে যায় এক ধরনের সহাবস্থান, যেন রুমমেট। চোখে পড়ার মতো কোনো বিরোধ না থাকায়, অনেকে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিতেও দ্বিধায় পড়েন।
ডিভোর্স নিয়ে কুসংস্কার
অনেকেই ডিভোর্সের সামাজিক কুপ্রভাব এড়াতে বা সন্তানের মঙ্গলের কথা ভেবে সম্পর্ক চালিয়ে যান। এতে তৈরি হয় এক ধরনের নিষ্প্রাণ সহাবস্থান। যেখানে শারীরিক বা মানসিক ঘনিষ্ঠতা আর থাকে না।
আত্মতুষ্টি বা উদাসীনতা
কর্মব্যস্ততা, সন্তান প্রতিপালন ও ডিজিটাল দুনিয়ার ব্যস্ততা দম্পতিদের আলাদা করে দেয়। তারা একই ছাদের নিচে থাকলেও আলাদা রুটিনে চলে জীবন। এতে সম্পর্ক ‘থাকে’, কিন্তু সেই সম্পর্কের গভীরতা হারিয়ে যায়।
কঠিন কথা এড়িয়ে যাওয়া
অনেক দম্পতি ভাবেন, ঝগড়াঝাঁটি না থাকলেই সম্পর্ক ভালো চলছে। কিন্তু বাস্তবে তারা কঠিন কথাবার্তা এড়িয়ে চলেন। ফলে জমে থাকা রাগ ও অপূর্ণ আকাঙ্ক্ষা ধীরে ধীরে সম্পর্কটিকে নিঃশব্দে ভেঙে ফেলে।
ভুল ধারণা, বিয়ে মানেই সহ্য করা
অনেকেই বড় হয়েছেন এই বিশ্বাস নিয়ে, বিয়ে মানেই সবসময় আনন্দদায়ক হবে না। তাকে টিকিয়ে রাখতে হয় ধৈর্য ধরে, সহ্য করে। বিশেষ করে বয়স্ক প্রজন্ম বা যেসব সংস্কৃতিতে ডিভোর্স এখনও ‘ট্যাবু’, সেখানে এই ধারণা আরও বেশি। ফলে সক্রিয় বিচ্ছেদের বদলে আসে চুপচাপ মেনে নেওয়া।
সাইলেন্ট ডিভোর্স হয়তো কাগজে কলমে ডিভোর্স নয়। কিন্তু বাস্তবে সম্পর্কটা তখন কেবল একটা সামাজিক কাঠামো। বিশেষজ্ঞদের মতে, আবেগের সংযোগ ধরে রাখতে চাইলে সচেতন চেষ্টাই একমাত্র উপায়। সম্পর্ক মানেই শুধু থাকার নয়, থাকতে হয় মানসিকভাবেও।
সাইলেন্ট ডিভোর্সে যা হয়
১. দম্পতিরা একই বাসায় থেকেও আলাদা থাকেন। মানসিক ও শারীরিক কোনো সম্পর্ক থাকে না।
২. একসঙ্গে সব সামাজিক অনুষ্ঠানে যাওয়া হয় না।
৩. সন্তানের প্রয়োজন না থাকলে ছুটির দিনগুলোও আলাদাভাবে কাটান।
৪. যে বিষয়ে কথা বললেই ঝগড়া হয়, তা এড়িয়ে চলেন।
৫. রোজকার জীবনের প্রয়োজনীয় বিষয়–আশয় নিয়ে কথা অবশ্য বলেন তাঁরা। যেমন রাতের খাবারে কী আছে? কিংবা এসব বাজার আজ লাগবে।
৬. দুজনই চাকরি করলে খরচের হিসাব ভাগ করে নেন। দুজনের মধ্যে একজন করলে, তখন নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হয়।
৭. আর্থিক সুবিধা, বিমা–সুবিধা, শিশুর সুস্থতা, ধর্মীয় বা সামাজিক কারণ, বিবাহবিচ্ছেদের ঝামেলা, মিলনের আশা, গোপনীয়তা রক্ষা বা অন্যান্য কারণে একসঙ্গে থাকা হয়।
৮. সন্তান না থাকলে একসঙ্গে বসে খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন না।
৯. ভবিষ্যৎ নিয়ে আর কোনো পরিকল্পনা করা হয় না।
১০. কোনো সমস্যার সমাধান খোঁজেন না