• ঢাকা
  • রবিবার, ০১ জুন, ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৪ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

কোরবানির পশুতে সন্তানের আকিকা দেওয়া নিয়ে মতভেদ


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ৩০, ২০২৫, ০৬:১২ পিএম
কোরবানির পশুতে সন্তানের আকিকা দেওয়া নিয়ে মতভেদ
ছবি: সংগৃহীত

ইসলামে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো কোরবানি এবং আকিকা। আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোরবানি আদায় করা হয় যিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখে। সামর্থ্যবান ব্যক্তিরা নিজের ও পরিবারের পক্ষ থেকে কোরবানি আদায় করেন। 

অন্যদিকে আকিকা হলো সন্তান জন্মের শুকরিয়া আদায়ের একটি সুন্নাত ইবাদত। নবজাতক শিশুর জন্ম উপলক্ষে নির্দিষ্ট পশু জবাই করে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং শিশুর কল্যাণ কামনায় দোয়া করা হয়। সন্তান জন্মের সাত দিনের মধ্যে আকিকা দেওয়া উত্তম। তবে কেউ সাত দিনে না পারলে ১৪ বা ২১ দিনের মধ্যেও করতে পারে। এমনকি বয়স বেড়ে যাওয়ার পরও আকিকা দেওয়া জায়েজ, তবে তা যত তাড়াতাড়ি করা যায় ততই উত্তম। সাধারণত ছেলে হলে দুইটি এবং মেয়ে হলে একটি ছাগল বা ভেড়া কুরবানির মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়।

অনেকেই কোরবানির পশুতে আকিকার অংশ দেওয়া আদৌ জায়েজ কি না তা নিয়ে দ্বিধায় থাকেন। যদিও এই বিষয়ে ভিন্ন মত প্রকাশ করেন আলেমরা। কোরবানি ও আকিকা একসাথে করা নিয়ে বিতর্কিত মাসআলা রয়েছে।

একদল আলেমের মতে, কোরবানির পশুতে আকিকা দেওয়া যাবে না। অধিকাংশ আলেম এবং  হানাফি ও মালিকি মাজহাবের মত অনুযায়ী, কোরবানির পশুতে আকিকার অংশ দেওয়া জায়েজ নয়। কারণ, আকিকা ও কোরবানি দুটি আলাদা নিয়ত ও আলাদা উদ্দেশ্যের ইবাদত। কোরবানি নির্দিষ্ট সময়ে আদায়যোগ্য ওয়াজিব। অন্যদিকে আকিকা হলো সুন্নত। তাই উভয় উদ্দেশ্যে একটি পশু জবাই করলে কোনোটিই সম্পূর্ণ হয় না।

অন্যদিকে কিছু হানবলি আলেম ও বর্তমান যুগের ইসলামি স্কলারদের মতানুযায়ী, যদি কেউ এক পশু কোরবানির উদ্দেশ্যে দেয় এবং সেই সঙ্গে সন্তানের আকিকার নিয়তও করে, তাহলে উভয়ের সওয়াব পাওয়া যেতে পারে (বিশেষত, যদি তা নফল কোরবানি হয়)। তবে তারা এ ক্ষেত্রে কোরবানি ও আকিকার পরিমাণ বা শর্ত পূর্ণ হচ্ছে কিনা— সেটি যাচাই করতে বলেন।

উদাহরণস্বরূপ, গরুর কোরবানিতে যদি সাত ভাগ হয়, তবে এক ভাগ যদি শুধু আকিকার নিয়তে হয় এবং বাকি ছয় ভাগ কোরবানির হয়, তাহলে এই অংশ গ্রহণযোগ্য হতে পারে।

ফাতাওয়া শামিসহ ফিকহ-ফাতাওয়ার কিতাবাদিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, কোরবানির সঙ্গে আকিকা শুদ্ধ। (রাদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬; হাশিয়াতুত তহতাভি আলাদ্দুর: ৪/১১৬)

কোরবানি যেমন ইবাদত হিসেবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা হয়, আকিকাও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা যায়, তাই কোরবানির পশুতে আকিকার শরিক রাখতে কোনো বাধা নেই। উট ও গরুর মতো যেসব বড় পশু সাতটি নামে কোরবানি করা যায়, ওইসব পশুতে চারটি নামে কোরবানি হলে আরও দুটি বা তিনটি নামে আকিকাও হতে পারে। একইভাবে কোরবানির শরিকানার মতো একই পশুতে একাধিক ব্যক্তি শরিক হয়ে আকিকা আদায় করতে পারবে। (রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬)

কোরবানির গরু, মহিষ ও উটে আকিকার নিয়তে শরিক হওয়া যাবে। এতে কোরবানি ও আকিকা দুটোই হবে। ছেলের জন্য দুই অংশ আর মেয়ের জন্য এক অংশ দিতে হবে। (ইলাউস সুনান: ১৭/১২৬) 
 
আকিকার গোশত শিশুর মা-বাবাসহ সবাই খেতে পারবে। কোরবানির পশুর ক্ষেত্রে যেসব শর্ত রয়েছে আকিকার পশুর ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। অর্থাৎ পশুর কোনো অংশ পারিশ্রমিক হিসেবে দেয়া যাবে না। এর চামড়া বা মাংস বিক্রি করা যাবে না বরং এর মাংস খাবে, সদকা করবে ও যাকে ইচ্ছে উপহার হিসেবে দিবে। 

হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে যে, তিনি বলেন, আকিকার গোশত নিজে খাবে, অন্যকে খাওয়াবে এবং কিছু সদকা করবে। (মুসতাদরাকে হাকেম: ৭৬৬৯)

শরিয়তের নিরাপদ মত কী?

সব মতভেদের পর, সবচেয়ে নিরাপদ ও গ্রহণযোগ্য পন্থা হলো—আকিকার জন্য আলাদা পশু বা অংশ নির্ধারণ করা, এবং কোরবানি আলাদা নিয়তে আদায় করা। ছেলে সন্তানের জন্য ২টি ছাগল বা ভেড়া, মেয়ের জন্য ১টি— আলাদা করে জবাই করলে সুন্নাত পূর্ণরূপে আদায় হয়। যথা সময়ে এটি করতে না পারলে সুবিধামতো অন্য সময়ে আলাদা আকিকা করা উত্তম।

Link copied!