শেষ মুহূর্তে ফলাফল ঘোষণার সময় ১৫ মিনিটের হট্টগোল বাদ দিলে কোনো বিতর্ক ছাড়াই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন শেষ হয়েছে। এতে ৩৪৩ ভোটের ব্যবধানে দুইবারের মেয়র মনিরুল হক সাক্কুকে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত।
বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) নিজ বাসভবনে জয় নিয়ে প্রতিক্রিয়া ও নগর উন্নয়নে পরিকল্পনার কথা সংবাদ প্রকাশের কাছে তুলে ধরেন নতুন মেয়র আরফানুল হক রিফাত। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন সংবাদ প্রকাশের কুমিল্লা প্রতিনিধি মোহাম্মদ আলাউদ্দিন।
সংবাদ প্রকাশ : কুসিকের নগরপিতা হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায় আপনাকে অভিনন্দন।
রিফাত : ধন্যবাদ। আমি নগরপিতা নই, নগরবাসীর সেবক হতে চাই। জনগণের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করতে চাই।
সংবাদ প্রকাশ : সারা দিন সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট গ্রহণ শেষে ফলাফল গণনার শেষ ১৫ মিনিটের হট্টগোল আপনার বিজয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করবে কি না?
রিফাত : না, এখানে প্রশ্ন ওঠার কোনো সুযোগ নেই। আমি বরাবরই এগিয়ে ছিলাম। আমি আমার অফিসে বসে সব কেন্দ্রের ফলাফল শিট দেখছিলাম। হঠাৎ শুনলাম সাক্কু সাহেব আনন্দ মিছিল করতেছেন। চিন্তায় পড়ে গেলাম, এখনো রেজাল্ট দিল না, তিনি জয়লাভের মিছিল করে উল্লাস করছেন। তখন আমাদের ছেলেপেলেরা উত্তেজিত হয়ে সেখানে যায়। প্রশ্ন হলো, সাক্কু সাহেব সেখানে গেল কেন? আমি তো সেখানে যাইনি। তাকে তো নির্বাচন কমিশন থেকেও ডাকেনি।
সংবাদ প্রকাশ : মেয়র হিসেবে নগরীর উন্নয়নে আপনার প্রথম পদক্ষেপ কী হবে?
রিফাত : আপনার জানেন, নগরীর প্রধান সমস্যা যানজট ও জলাবদ্ধতা। তাই আমি প্রথমে যানজট ও জলাবদ্ধতা দূরীকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আমি কুমিল্লাবাসীর কাছে কমিটেড (প্রতিশ্রুতিবদ্ধ)। দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথম কাজটি হবে সাবেক মেয়রসহ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা যেসব দুর্নীতি করেছেন, তালিকা করে শ্বেতপত্র প্রকাশ করবই। আর নগরীর সৌন্দর্যবর্ধন করার জন্য দেশের নামীদামি যেসব নগরবিদ রয়েছেন, তাদের সাহায্য নেব। প্রয়োজনে বিদেশি নগরবিদদের সহযোগিতাও নেব। এ ছাড়া প্রয়োজন হলে সাবেক মেয়রের সহযোগিতাও নেব। এককথায়, সবাই একসঙ্গে বসে নতুন পরিকল্পনা করে কীভাবে কুমিল্লাবাসীকে যানজট ও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দেওয়া যায়, সে বিষয়ে পরিকল্পনা করেই কাজ শুরু করব।
সংবাদ প্রকাশ : কুমিল্লা সিটির দুইবারের মেয়র সাক্কুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে গেলে কোনো বাধার সম্মুখীন হবেন কি না?
রিফাত : দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো আপস নেই। এ ক্ষেত্রে আপনি মনে করেন যদি কেউ আমাকে বাধা দেবে, বাধা দিলেই বাধবে লড়াই। আর সেই লড়াইয়ে জিততে হবে।
সংবাদ প্রকাশ : মনিরুল হক সাক্কু সাবেক মেয়র হিসেবে তার কাছ থেকে আপনি কোনো পরামর্শ নেবেন কি না?
রিফাত : কুমিল্লা নগরীর উন্নয়ন করতে কুমিল্লার মানুষ যে রায় দিয়েছেন, তার প্রতি সম্মান দেখিয়ে তিনি (সাক্কু) আমাদের সহযোগিতা করবেন। তার মেধা, বুদ্ধি এবং উনি যেভাবে সিটি করপোরেশন চালিয়েছিলেন, নিশ্চয়ই তিনি সেখানে ভালো কিছু কাজও করেছেন। আমাদের ভালো কিছু পরামর্শ দিক না, আমি অবশ্যই গ্রহণ করব।
সংবাদ প্রকাশ : আপনি তো দলীয় একক প্রার্থী ছিলেন। আপনার সঙ্গে যারা লড়েছেন, তারা তো একই দলের দুইজন। তারপরও কি আপনি মনে করেছিলেন বিজয়ের লড়াইটা হাড্ডাহাড্ডি হবে?
রিফাত : হ্যাঁ, আমি জানতাম। খুব ক্লোজ ভোট হবে, লড়াইটা হাড্ডাহাড্ডি হবে। আমি আগেই সে বিষয়টা আপনাদের (গণমাধ্যমকে) বলেছিলাম।
সংবাদ প্রকাশ : বিজয়ী হওয়ার পর আপনি কি পরাজিত প্রার্থীদের ফোন করেছিলেন, যে একসঙ্গে নগর উন্নয়নে কাজ করতে চাই?
রিফাত : আমার সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু এবং নিজাম উদ্দিন কায়সারের কাছে যাওয়া উচিত এবং তাদের বলা দরকার ছিল। মেয়র সাক্কু তো ফলাফল মানেননি। যিনি ফলাফল মানেননি, আমি যদি ওনার কাছে যাই, উনি আমাকে যদি পাল্টা কোনো প্রশ্ন করেন, সেখানে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা আছে।
সংবাদ প্রকাশ : সাক্কু তো দাবি করছেন, শেষ পর্যায়ে এসে ফলাফল পাল্টে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন?
রিফাত : ফলাফল পাল্টায় কীভাবে? ফলাফলের রেজাল্ট শিট ওনার কাছেও আছে এবং প্রিসাইডিং অফিসারের সই করা প্রতি কেন্দ্রেও আছে। ওনার যদি খুবই সন্দেহ হয় তিনি পুনরায় গণনার দাবি করতে পারেন।
সংবাদ প্রকাশ : নাগরিক সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে দলীয় নেতা-কর্মীদের সুবিধা দেবেন কি না?
রিফাত : আমি কুমিল্লার মানুষকে কথা দিয়েছি সিটি করপোরেশন কার্যালয়কে কখনো দলীয় কার্যালয় বানাব না। আমার কাছে সব দলের মানুষ সমান থাকবে এবং সমান সুবিধা পাবে।
সংবাদ প্রকাশ : আপনি তো কুমিল্লা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, কুমিল্লার ক্রিকেট, অন্যান্য ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে উন্নয়নে আপনার পরিকল্পনা কী?
রিফাত : আমি দীর্ঘদিন ধরে কুমিল্লা ফুটবলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব করছি। কুমিল্লায় বিপিএল ফুটবল আয়োজন হয়। ক্রিকেট নিয়েও আমাদের চিন্তাভাবনা আছে। কুমিল্লা স্টেডিয়ামের আমূল পরিবর্তন হয়েছে। শিশুদের খেলাধুলার জন্য গোমতীর পাড়ে শেখ রাসেলের নামে নতুন মাঠ তৈরি করা হয়েছে। ভবিষ্যতে বিপিএল ক্রিকেটও কুমিল্লায় অনুষ্ঠিত হবে।
সংবাদ প্রকাশ : সংবাদ প্রকাশের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।
রিফাত : সংবাদ প্রকাশকেও ধন্যবাদ।
আপনার মতামত লিখুন :