• ঢাকা
  • শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,
ভয়াল ২১ আগস্ট

সৌভাগ্যক্রমে শেখ হাসিনা বেঁচে যান: বায়েজিদ মিল্কী


শাহাদাত হোসেন তৌহিদ
প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২১, ১০:০২ পিএম
সৌভাগ্যক্রমে শেখ হাসিনা বেঁচে যান: বায়েজিদ মিল্কী

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট দেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমল চলছিল তখন। ১৭ বছর আগের এই দিনে ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী’সমাবেশে নারকীয় গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। বর্বরোচিত ওই হামলায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা সেদিন অল্পের জন্য বেঁচে গেলেও আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। এছাড়া এই হামলায় সাংবাদিকসহ আরও ৪০০ জন আহত হন।

সেই সমাবেশে হামলার একজন প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন সাংবাদিক বায়েজিদ মিল্কী। সেই দিনের স্মৃতিচারণা করে সংবাদ প্রকাশের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন শাহাদাত হোসেন তৌহিদ।

সংবাদ প্রকাশ: আপনি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার একজন প্রত্যক্ষদর্শী, সেদিন সমাবেশটি কাভার করতে গিয়েছিলেন, কী হয়েছিল সেদিন?

বায়েজিদ মিল্কী: ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে সেদিন আওয়ামী লীগের একটি সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ ছিল। তখন স্টেজ করে সমাবেশ করতে দেওয়া হতো না। সে কারণে একটি ট্রাকের ওপরে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগের সব নেতা এবং তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাসহ সমাবেশটি পরিচালনা করছিলেন। ২০ মিনিটের মতো বক্তৃতা শেষে সমাবেশটি শেষ হয়। তখন বিকেল ৫টা ২০ মিনিট হবে। সমাবেশ শেষে শেখ হাসিনা যখন নেমে আসছিলেন, তখন গ্রেনেড হামলা শুরু হয়।

প্রথমে আশপাশে কয়েকটা ভবনের ওপর থেকে সমাবেশের ট্রাকের দিকে এবং আওয়ামী লীগের অফিসের আশপাশের দিকে একসঙ্গে নয়টার মতো গ্রেনেড ছোড়া হয়। একটা নির্মাণাধীন বিল্ডিং ছিল, সেখান থেকে এবং আশেপাশের কয়েকটা বিল্ডিং থেকে গ্রেনেডগুলো শেখ হাসিনার উদ্দেশে ছোড়া হয়। কিন্তু সেখানে আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতা-কর্মী মারা যান এবং কয়েকশ নেতাকর্মী আহত হন। সৌভাগ্যক্রমে শেখ হাসিনা বেঁচে যান।

তখন আমি রমনা ভবনের দোতলায় ছিলাম। ওই সময় আমি এনটিভিতে কাজ করতাম। ক্যামেরায় আমি ভালো ছবি পাচ্ছিলাম না। তখন আমার ক্যামেরাম্যান তারেক বললেন যে, ওপরে গিয়ে ছবি নিই। আমরা ওপর থেকে দোতলায় উঠে ছবি তুলছিলাম। যেহেতু সমাবেশ শেষ, ক্যামেরাম্যান ক্যামেরা গুটিয়ে ফেলেছিলেন, তখনই হামলাটা শুরু হয়। তখন তিনি আবার ক্যামেরায় ছবিগুলো ধারণ করার চেষ্টার করেন। মানুষের আর্তচিৎকার, দৌড়াদৌড়ি এসব ছবি পাই। এই হচ্ছে আমার প্রাথমিক অভিজ্ঞতা।

রমনা ভবনের সিঁড়িতেই রাইটিং জার্নালিস্টরা (প্রিন্ট মিডিয়া ও এজেন্সি) ছিলেন, আমি ওপরে। যারা টিভি ক্যামেরাম্যান তারা অনেকেই কাছাকাছি ছিলেন, তারাও আহত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা, সাংবাদিকরা অনেকেই গ্রেনেডের আঘাতে আহত হয়েছেন।

সংবাদ প্রকাশ: সেদিন শেখ হাসিনাকে কীভাবে মানবঢাল তৈরি করে বাঁচানো হয়েছিল?

বায়েজিদ মিল্কী: শেখ হাসিনা যখন নামতে যাচ্ছেন, ট্রাকের ওপরে ক্যামেরাম্যান আমার বন্ধু এস এম গোর্কিও সেখানে ছিল। তারা শেখ হাসিনাকে বলছিল যে আমরা ছবি পাইনি, আপনি একটু দাঁড়ান, আরেকটা ছবি নেব। শেখ হাসিনা নামার আগে ছবির জন্য যখন দাঁড়িয়ে ছিলেন, তখনই কিন্তু গ্রেনেডটা বিস্ফোরিত হয়। তিনি যদি ওই সময় ট্রাক থেকে নেমে যেতেন, ঠিক যেখানে তিনি নামতেন, সেখানে কিন্তু একটা গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়েছে। এবং আরো কয়েকটি গ্রেনেড বিস্ফোরিত ছিল, তার মধ্যে একটা গ্রেনেড ট্রাকের নিচে ছিল। সেই গ্রেনেডটা বিস্ফোরিত হলে ট্রাকসহ উড়ে যেতেন আওয়ামী লীগের নেতারা। যখন গ্রেনেডটা ছোড়া হচ্ছে, তখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাকে ঘেরাও করে রাখেন। তার দেহরক্ষী মাহবুব পরে মারা যান। যারা ছিলেন তারা সবাই মিলে সেখানে তাকে রক্ষা করেন। তারাও আহত হন। আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতা-কর্মী সেখানে আহত হন। তাদের মধ্যে সিনিয়র নেতারাও ছিলেন। মেয়র হানিফ  ভাই, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ভাই, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত অর্থাৎ ট্রাকের ওপরে যারা ছিলেন, সবাই তাকে ঘিরে রেখেছিলেন। তারপর তাকে নামিয়ে তার জিপে তোলা হয়। ওটার মধ্যেও গ্রেনেড ছোড়া হয়েছিল। তবু তিনি বেঁচে যান।

সংবাদ প্রকাশ: যখন হামলা হচ্ছে আপনি নিজেকে কীভাবে রক্ষা করলেন?

বায়েজিদ মিল্কী: আমি যেখানে ছিলাম, সেটা একটু দূরেই, রমনা ভবনের দোতলায়। তার জন্য রক্ষা পেয়ে যাই। পরে নেমে আমরা ওদিকে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। দেখলাম যে অসংখ্য লোক আহত, রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। অনেকে মারা গেছেন।

সংবাদ প্রকাশ: আপনি ও আপনার সহকর্মী কারা ছিলেন, কীভাবে কোথায় আপনাদের চিকিৎসা হয়েছিল?

বায়েজিদ মিল্কী: তখন আশরাফুল আলম খোকন চ্যানেল আইয়ে কাজ করতেন। আমি যখন রমনা ভবনের নিচে নামলাম তার ক্যামেরাম্যানসহ তারা দুইজনই রক্তাক্ত অবস্থায়। আমার সামনে এসে বলল যে, ভাইজান আমাদের বাঁচান। তারপর আমি তাদের একটি ভ্যানে তুলে দিলাম। ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হলো তাদের। যখন এগোচ্ছিলাম তখন অনেক নেতাকর্মীকে নিয়ে আসা হচ্ছে বিভিন্নভাবে। পঙ্কজ দেবনাথ একটা মোটরসাইকেলে উঠে যাচ্ছিলেন। যানবাহন ছিল না। এর মধ্যে যে যেভাবে পেরেছে সেভাবে সরে গেছে।

সংবাদ প্রকাশ: আমাদের সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

বায়োজিদ মিল্কী: সংবাদ প্রকাশকেও ধন্যবাদ।
 

কথাপ্রকাশ বিভাগের আরো খবর

Link copied!