আরব সাগরে সৃষ্ট গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ‘ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়’ অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। আগামী ৩৬ ঘণ্টায় আরও শক্তিশালী হতে পারে এই ঘূর্ণিঝড়। বর্তমানে পূর্ব-মধ্য এবং দক্ষিণ-পূর্ব আরব সাগরের ওপর অবস্থান করছে ঝড়টি। যা উত্তর, উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে গোয়া ও মুম্বাই উপকূলের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ।
শুক্রবার (৯ জুন) এনডিটিভিসহ ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো পৃথক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। শুক্রবার সকালে গোয়া থেকে ৮৪০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে ‘বিপর্যয়’। মুম্বাই থেকে ঝড়ের দূরত্ব ৮৭০ কিলোমিটার। পোরবন্দর থেকে ৮৯০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে ঘূর্ণিঝড়। পাকিস্তানের করাচি থেকে ১ হাজার ১৭০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে এই ঝড়।
দেশটির আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, পরবর্তী ৩৬ ঘণ্টায় আরও শক্তি সঞ্চয় করে আগামী দুই দিন উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে ঝড়টি। তবে ঘূর্ণিঝড়টি কোথায় আছড়ে পড়বে, তা এখনো জানায়নি তারা।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দক্ষিণ গুজরাট, মহারাষ্ট্রে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ঝড়ের প্রভাবে উত্তাল হতে পারে সমুদ্র। পোরবন্দরে সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে জেলেদের। গভীর সমুদ্র থেকে ফিরে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে গুজরাটের জামনগরের কালেক্টর বিএ শাহ বলেছেন, জেলার উপকূলরেখায় অবস্থিত ২২টি গ্রামে প্রায় ৭৬ হাজার মানুষ বাস করে। প্রয়োজনে তাদের নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করার জন্য পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে, ১০, ১১ ও ১২ জুন বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬৫ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে। এমনিক আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৩৫-১৪৫ কিলোমিটার থেকে ঝোড়ো হাওয়াসহ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত নিয়ে বয়ে যেতে পারে। সব সমুদ্রবন্দরকে দূরবর্তী সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর জন্য পরবর্তী পাঁচ দিনের জন্য সতর্কতা জারি করেছে।
তবে ঘূর্ণিঝড়টি আরব সাগরের কাছে অবস্থিত পাকিস্তান, ভারত, ওমান অথবা ইরানের ওপর বড় কোনো প্রভাব ফেলবে কি না, এ বিষয়ে কিছু জানায়নি ভারতীয় আবহাওয়া সংস্থা। যদিও ধারণা করা হচ্ছে, ঘূর্ণিঝড়টি মূল আঘাত হানতে পারে পাকিস্তানে।
এদিকে কেরালা থেকে মহারাষ্ট্র পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকায় ভারী বৃষ্টির এবং দক্ষিণ কর্ণাটকের অভ্যন্তরীণ এলাকাগুলোতেও বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
এর আগে ২০২১ সালে বর্ষার সময়েই তৈরি হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’। যদিও সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ তৈরি হলেও তা পাশ দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল। আঘাত করেছিল মিয়ানমার ও বাংলাদেশে।
বিপর্যয়’ নামটি বাংলাদেশের দেওয়া। বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে সৃষ্টি ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের ক্ষেত্রে ১৩টি দেশের সুপারিশ লাগে। বাংলাদেশসহ এই তালিকায় রয়েছে ভারত, ইয়েমেন, কাতার, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবছর এই ১৩টি দেশ থেকে ঘূর্ণিঝড়ের নাম সুপারিশ করা হয়। এমন ১৬৯টি নাম জমা পড়ে প্রতিবছর। ইংরেজিতে নামের হরফ ধরে, ক্রমানুযায়ী পালা আসে প্রতিটি দেশের।4