• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫
পুলিশের গুলিতে কিশোর নিহত

উত্তাল ফ্রান্সে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও সংঘর্ষ অব্যাহত, গ্রেপ্তার ৬৬৭


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০২৩, ০৪:০২ পিএম
উত্তাল ফ্রান্সে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও সংঘর্ষ অব্যাহত, গ্রেপ্তার ৬৬৭

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে পুলিশের গুলিতে ১৭ বছর বয়সী কিশোর নাহেলের নিহত হওয়ার ঘটনায় দেশটিতে বিক্ষোভ আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিক্ষোভের তৃতীয় দিনে দাঙ্গা, লুটপাট, সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগ সামাল দিতে এখন পর্যন্ত ৬৬৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের শক্ত অবস্থান ও সরকারের একের পর এক আবেদনও বিক্ষোভকারীদের শান্ত করা যাচ্ছে না।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৪০ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে এবং তাকে হেফাজতে রাখা হয়েছে।

শুক্রবার (৩০ জুন) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এসব তথ্য জানিয়েছে। কিশোর হত্যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দেশজুড়ে তৃতীয় দিনেরমতো বিক্ষোভ হয়েছে। এদিন বিকেলে নিহত কিশোরের মায়ের নেতৃত্বে একটি মিছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় বিভিন্ন শহর থেকে অন্তত ৬৬৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের অধিকাংশের বয়স ১৪ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে।

বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, বেশ কিছু জায়গায় আবর্জনার স্তূপে আগুন জ্বলছে। কিশোর নিহত হওয়ার ঘটনাস্থল নাতেরে শহরে একটি ভবনের নিচতলায় আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। ২০২৪ অলিম্পিক গেমসের জন্য নির্মাণাধীন একটি সুইমিং পুলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা।

সন্ধ্যার পর পরই প্যারিস ও প্যারিসকেন্দ্রিক বৃহত্তর অঞ্চলে বাস ও ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ক্লামার্ত শহরে ৩ জুলাই পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে।

দেশটির বহু কমিউনিটি সেন্টার, সুপারমার্কেট, স্কুল ও সিটি হলেও হামলার ঘটনা ঘটেছে। প্যারিসের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত আবারভিলিয়ার্স অঞ্চলে অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিস পৌঁছাতে দেখা গেছে।

ফ্রান্সের স্থানীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, সেন্ট্রাল প্যারিসের রুয়ে ডি রিভোলি স্ট্রিটকে কেন্দ্র করে সবচেয়ে বেশি লুটপাট করা হয়েছে। একইসঙ্গে ভাঙচুর করা হয়েছে ছোট ছোট দোকান ও জুয়েলারি শপ। পরবর্তীতে এক ডজনেরও বেশি লোককে দোকান থেকে জুতা, ব্যাগ ও জামাকাপড় লুটপাট করতে দেখা যায়। এদের মধ্যে অনেককেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

অন্যদিকে মার্সেইতেও দোকান ও ক্যাফেগুলো হামলার স্বীকার হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া একটি ছোট রেস্তোরাঁর মালিক বলেন, “যে কিশোরটি মারা গিয়েছে, আমি তার জন্য দুঃখিত। কিন্তু আমি ঠিক বুঝতে পারছি না এটার সঙ্গে আমার ব্যবসা কীভাবে সম্পর্কিত।”

দেশটির লিডল সুপারমার্কেটে লুটপাট করা হয়েছে। অন্যদিকে রুবাইক্সে একটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এএফটির তথ্য অনুযায়ী, কিছু দাঙ্গাকারী বিক্ষোভে ঘরে তৈরি গ্রেনেড ব্যবহার করেছে।

পুলিশ বলছে, কিশোরের নাম নাহেল এম। তাকে গাড়ি থামানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সে তা অমান্য করায় গুলি করতে তারা বাধ্য হয়েছে। নাহেলের এই হত্যাকে ‘অমার্জনীয় অপরাধ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়্যেল ম্যাক্রোঁ।

রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০১৭ সাল থেকে দেশটির ট্রাফিক পুলিশের গুলিতে নিহতের বেশিরভাগই কৃষ্ণাঙ্গ অথবা আরব।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, একজন পুলিশ অফিসার একটি গাড়ির চালকের দিকে বন্দুক তাক করে আছেন। এরপরই একটি গুলির শব্দ শোনা যায়। গাড়িটি কিছুদূর গিয়ে ধাক্কা খেয়ে থামে। জরুরি বিভাগের লোকজন তড়িঘড়ি করে ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও গুলিবিদ্ধ কিশোর তৎক্ষণাৎ মারা যায়।

বার্তাসংস্থা এএফপি কর্তৃক যাচাইকৃত ফুটেজে দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে গাড়ি থামানোর চেষ্টা করতে দেখা যায়। একজন তার অস্ত্রটি জানালা দিয়ে ড্রাইভারের দিকে তাক করে এবং চালক গাড়ি চালানোর চেষ্টা করলে পুলিশকে গুলি করতে দেখা যায়। ঘটনার পর পরই উদ্ধারকারীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যুবকটিকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই সে মারা যায়।

গাড়িতে কিশোরসহ আরও দুজন ছিলেন। একজন পালিয়ে যান এবং অপরজনকে আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার ঘটনার পর ওই এলাকায় বেশ কয়েক দফা বিক্ষোভ হয়েছে। গাড়ি, ময়লার বিন ও কাঠের গুঁড়ি পুড়িয়ে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।

নিহতের একজন আইনজীবী স্থানীয় মিডিয়াকে বলেছেন, যা ঘটেছে তা কিছুতেই ন্যায়সঙ্গত হতে পারে না। এ মৃত্যুকে একটি হত্যাকাণ্ড হিসেবে বর্ণনা করেছেন তিনি।

ঘটনার পর ভিডিও দেখে ৩৮ বছর বয়সী অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে। অভিযুক্ত এ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক তদন্তও শুরু হয়েছে। ফ্রান্সের বিচার প্রক্রিয়া অনুযায়ী, কারো বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করার অর্থ, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শামিল।

Link copied!