• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬
ভূমিকম্পের রোমহর্ষ বর্ণনা

‘ছেলেকে বাঁচাতে চোখের সামনে বাবা-মাকে মরতে দেখেছি’


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৩, ১১:৪৩ এএম
‘ছেলেকে বাঁচাতে চোখের সামনে বাবা-মাকে মরতে দেখেছি’
তায়েব ও তার সন্তান আদম।

মরক্কোর এটলাস পর্বতমালার একটি ক্ষুদ্র সম্প্রদায়ের ছাগল পালনকারী তায়েব আইত ইগেনবাজ। শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) আঘাত হানা ভূমিকম্পের পর ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে তায়েবের ১১ বছরের ছেলে ও তায়েবের বাবা-মা। সেই অবস্থায় তায়েবকে বাছাই করতে হয়, তিনি কাকে বাঁচাবেন।

শুক্রবার রাতে তায়েব তার স্ত্রী, দুই সন্তান ও বাবা-মায়ের সঙ্গে তাদের ছোট পাথরের বাড়িতে ছিলেন। যখন ৬০ বছরের মধ্যে দেশটিতে সবচেয়ে ভয়ংকর ভূমিকম্প আঘাত হানে।

বিবিসির সাংবাদিককে তায়েব তার আগের বাড়িতে নিয়ে যান। যেখানে এখন শুধু ধ্বংসস্তূপ পড়ে আছে।

ধ্বংসস্তূপের ভেতরে আংশিকভাবে দেখা যাওয়া তার বাড়ির দিকে ইঙ্গিত করে তায়েব বলেন, “ওরা সেখানেই ছিল। সবকিছু খুব দ্রুত ঘটেছিল। ভূমিকম্প হলে আমরা সবাই দরজার দিকে দৌড়ে যাই। আমার বাবা ঘুমাচ্ছিলেন। আমি আমার মাকে চিৎকার করে আসতে বলেছিলাম। কিন্তু তিনি আমার বাবার জন্য অপেক্ষা করছিলেন।”

অন্যদিকে ঘর থেকে বের হয়ে তায়েব কেবল তার স্ত্রী ও কন্যাকে দেখতে পান। ধসে পড়f ভবনে ফিরে তায়েব তার ছেলে ও বাবা-মা দুজনকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে থাকতে দেখেন। তিনি ধ্বংসস্তূপের মধ্যে তার ছেলের হাত দেখতে পান।

তায়েব জানতেন তাকে দ্রুত কাজ করতে হবে। তিনি তার ছেলে আদমের দিকে এগিয়ে যান। ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে তাকে বের করেন। এরপর সে পাথরের বড় স্ল্যাবের নিচে আটকে পড়া তার বাবা-মায়ের দিকে যান। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তায়েব বলেন, “আমাকে আমার বাবা-মা ও ছেলের মধ্যে বেছে নিতে হয়েছিল। আমি আমার বাবা-মাকে সাহায্য করতে পারিনি। কারণ তাদের শরীরের অর্ধেকের ওপরে দেয়াল পড়ে ছিল। এটা খুবই দুঃখজনক। আমি আমার বাবা-মাকে মরতে দেখেছি।”

তায়েব তার হালকা রঙের জিন্সের দাগের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, এটা তার বাবা-মায়ের রক্ত।

তার সব জামাকাপড় বাড়িতে রয়েছে। ভূমিকম্পের পর থেকে তিনি আর জামা পরিবর্তন করতে পারেননি।

তায়েবের পরিবার এখন তাদের আগের বাড়ির কাছে একটি অস্থায়ী তাঁবুতে আত্মীয়দের সঙ্গে থাকছেন। তিনি জানান, তার সব টাকা ঘরে ছিল এবং তার বেশির ভাগ ছাগল মারা গেছে।

তায়েব বলেন, “এটা আবার নতুন জীবন শুরু করার মতো। বাবা-মা নেই, ঘর নেই, খাবার নেই, কাপড় নেই। আমি ৫০ বছর বয়সী এবং আমাকে আবার শুরু করতে হবে।”

তায়েব কীভাবে এগিয়ে যাবেন, তা ভেবে পাচ্ছেন না। কিন্তু তার বাবা-মা তাকে যে শিক্ষা দিয়েছিলেন, তা মনে রেখেছেন তিনি। তারা সব সময় বলেছিলেন ‘ধৈর্য ধরো, কঠোর পরিশ্রম করো, কখনো হাল ছেড়ো না।’

বিবিসির সঙ্গে কথা বলার সময় তায়েবের ছেলে আদম দৌড়ে আসে তায়েবের কাছে। তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে সে হাসিমুখে বলে, “আমার বাবা আমাকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছেন।”

আমিজমিজ শহরের দিকে রাস্তায় আরেক বাবাকে দেখা যায় তার ছেলেকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছেন।

আব্দুলমাজিদ আইত জাইফার নামক সেই বাবা বলেন, ভূমিকম্প আঘাত হানার সময় তিনি তার স্ত্রী ও তিন সন্তানের সঙ্গে বাড়িতে ছিলেন। তার ছেলে মোহাম্মদ (১২) ভবন থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। কিন্তু পরিবারের বাকিরা আটকা পড়েন।

আব্দুলমাজিদ বলেন, তার পা ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছিল। প্রতিবেশীরা তাকে টেনে বের করে আনেন। এরপর তিনি তার স্ত্রী ও এক মেয়েকে উদ্ধার করতে ২ ঘণ্টা ধরে চেষ্টা চালান। ধ্বংসস্তূপ থেকে তাদের টেনে তোলার পর দেখা যায় দুজনেই মারা গেছেন। পরদিন তার অপর মেয়ের লাশও ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করা হয়।

আব্দুলমাজিদের ঘরের ধ্বংসাবশেষ।

৪৭ বছর বয়সী আব্দুলমাজিদ এখন তার বাসার সামনে রাস্তার পাশে তাঁবুর নিচে থাকছেন। সেখান থেকে তিনি রান্নাঘর দেখতে পান, ফ্রিজ ও শুকানোর জন্য ঝুলিয়ে রাখা কাপড়ও দেখতে পান।

আব্দুলমাজিদ বলেন, তিনি এলাকাটি ছেড়ে যেতে পারবেন না। কারণ, তাকে তার সম্পত্তি ও তার জীবনের স্মৃতি রক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, “এটা আমার রান্নাঘর ও আমার ফ্রিজ। আমরা সবাই সেখানে ছিলাম। এখন আমি শুধু এটা দেখছি।”

শুক্রবারের আগে, আবদুলমাজিদ ভূমিকম্পের কথা কখনো স্বপ্নেও ভাবেননি। এমনকি এখনো তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না বলে জানান।

তিনি দুঃখের সঙ্গে আরও বলেন, “আমার পরিবারে পাঁচজন ছিল। এখন দুজন আছে। আপাতত আমি একটা কথাই ভাবছি, আমার ছেলে।”

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর

Link copied!