আরব সাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয় বৃহস্পতিবার ভারতের গুজরাট উপকূলে তাণ্ডব চালিয়েছে। শত শত গাছ উপড়ে পড়েছে এবং বেশ কয়েকটি যানবাহন ও ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাজারো গ্রাম বিদুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত দুইজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন অন্তত ২২ জন। এদিকে ঘূর্ণিঝড়টি আজ সন্ধ্যায় দুর্বল নিম্নচাপে পরিণত হয়ে রাজস্থানের উপর দিয়ে বয়ে যাবে।
শুক্রবার (১৬ জুন) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। এতে বলা হয়, গুজরাট উপকূলে আছড়ে পড়ার সময় রাজ্যটিতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড়টি। রাজ্যটিতে ৫২৪টি গাছ এবং বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়েছে। একইসঙ্গে বিপর্যয়ের আঘাতের পর প্রায় ৯৪০টি গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয় আঘাত পর পরই ‘অতি প্রবল’ থেকে ‘প্রবল’ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। এ সময় ঝোড়ো হাওয়ার গতিবেগ ঘণ্টায় ১০৫ থেকে ১১৫ কিলোমিটারের মধ্যে নেমে এসেছে। এটি আরও দুর্বল হয়ে সাইক্লোনিক স্টর্মে পরিণত হবে। শুক্রবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ রাজস্থানের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় নিম্নচাপে পরিণত হবে।
বৃহস্পতিবার সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, রাজ্যের ভাবনগর জেলায় আটকে পড়া ছাগলকে বাঁচাতে গিয়ে একজন গবাদি পশু পালনকারী এবং তার ছেলে মারা গেছে।
এর আগে ১০ দিনেরও বেশি সময় ধরে আরব সাগরজুড়ে শক্তি সঞ্চয় করার পরে ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গুজরাটের জাখাউ বন্দরের কাছে ঘণ্টায় ১২৫ কিলোমিটার থেকে ১৪০ কিলোমিটার বাতাসের গতিবেগ নিয়ে আছড়ে পড়ে। তবে এর কয়েক ঘণ্টা পরে শক্তি হারাতে শুরু করে ঘূর্ণিঝড়টি। আর শুক্রবার গভীর রাত আড়াইটার সময় ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়ের ঝোড়ো হাওয়ার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার।
ভারতীয় আবহাওয়া অফিসের প্রধান ডা. এম মহাপাত্র বলেছেন, ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হওয়ার কারণে ১৬ এবং ১৭ জুন রাজস্থানে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণে অস্থায়ী আবাসন কাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং উচ্চ গতির বাতাস, উচ্চ জোয়ার ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে গাছ ও ডালপালা ভেঙে পড়ার বিষয়ে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ ইতোমধ্যেই সতর্কতা জারি করেছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেলের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন এবং ঘূর্ণিঝড়ের স্থলভাগে পরিস্থিতির পর্যালোচনা করেন। এ সময় গির বনে সিংহ-সহ অন্য বন্য প্রাণীদের সুরক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কেও জিজ্ঞাসা করেন মোদি।
গুজরাট সরকার জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়ের আঘাতের আগে উপকূলীয় এবং নিচু এলাকা থেকে ৯৪ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে স্থানান্তরিত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়েছে ট্রেন পরিষেবাতেও। এছাড়া আগামীকাল পর্যন্ত মাছ ধরার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। বন্দর বন্ধ রাখা হয়েছে এবং জাহাজ নোঙর করা হয়েছে। দেবভূমি দ্বারকার দ্বারকাধীশ মন্দির এবং গির সোমনাথ জেলার সোমনাথ মন্দির বৃহস্পতিবার ভক্তদের জন্য বন্ধ ছিল।