১২ দিনের ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের পর নানা সমীকরণ চলছে মধ্যপ্রাচ্যে। ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যকে নতুনভাবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে। আরব দেশগুলোতে বাগে আনতে চাইছে। তবে বাদ সাধল সৌদি আরব।
কিছুদিন আগেই নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘সৌদি আরব ও অন্যদের সঙ্গে কীভাবে শান্তিচুক্তি করব, সেটা আমাকেই দেখতে দিন।’ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলা এবং গাজায় যুদ্ধের আগে রিয়াদের সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল ইসরায়েল। গত সপ্তাহে স্থানীয় গণমাধ্যমে নেতানিয়াহু বলেন, ‘বিশ্বাস করুন, শুধু ভাবিনি, এখনো ভাবছি।’
কিন্তু অন্তত সৌদি আরবের ক্ষেত্রে এখন এটা আর স্পষ্ট নয়। ৭ অক্টোবরের পর থেকে সৌদি আরবের হিসাব-নিকাশ নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে। গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের প্রতি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া এবং ঐতিহাসিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের তৎপরতা এই পরিবর্তনের অন্যতম কারণ।
পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপ সৌদি আরবকে আরও বেশি সতর্ক করে তুলেছে। দেশটি এখন ইসরায়েলকে ক্রমবর্ধমানভাবে যুদ্ধবাজ ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী শক্তি হিসেবে দেখছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সৌদি আরব প্রকাশ্যে তেহরানের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করার পদক্ষেপ নিয়েছে।
সৌদি সরকারের চিন্তাভাবনা সম্পর্কে অবগত এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘পারস্য উপসাগরের দেশগুলো ইরানের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক উন্নয়নের পথ ধরে রাখবে। এটা সবচেয়ে বড় প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্কের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু এর ফলে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে এবং সৌদি আরব ফিলিস্তিনি ইস্যুতে তাদের দাবির ব্যাপারে আরও বেশি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’
বাহরাইনের ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের মধ্যপ্রাচ্য নীতির জ্যেষ্ঠ গবেষক হাসান আল-হাসান বলেন, ‘ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কারণে সৌদি আরবের যে ভাব-মর্যাদাগত ক্ষতি হবে, তা এখন অনেক বেশি। দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতির দিক থেকে এবং তাদের আঞ্চলিক ও ইসলামি নেতৃত্বের অবস্থানের জন্যও।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের আগে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান যে পরিকল্পনা করেছিলেন, তাতে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করার কথা ছিল। এটা বাস্তবায়িত হলে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক বিন্যাসে এক ঐতিহাসিক পরিবর্তন আসত।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম প্রেসিডেন্ট থাকার সময়, ২০২০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে, যা ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’ নামে পরিচিত। কিন্তু সৌদি আরবের সঙ্গে এমন চুক্তি হলে সেটা হতো ইসরায়েলের জন্য আরও বড় কূটনৈতিক সাফল্য। কারণ সৌদি আরব শুধু ইসলামি বিশ্বের শীর্ষ নেতৃত্বের দেশ নয়, বরং বহুদিন ধরেই ফিলিস্তিনিদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে আসছে।
কিন্তু ৭ অক্টোবরের পর সবকিছু বদলে যায়। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বারবার গাজায় ইসরায়েলের ক্ষুব্ধ আক্রমণকে ‘গণহত্যা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। উপসাগরীয় অঞ্চলের কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, এই ধ্বংসযজ্ঞের ছবি নতুন প্রজন্মকে আরও বেশি উগ্রপন্থার দিকে ঠেলে দেবে। এই যুদ্ধ সৌদি আরবের যুবসমাজের মধ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়টিকে অত্যন্ত অজনপ্রিয় করে তুলেছে। অথচ যুবসমাজকে কেন্দ্র করেই ক্রাউন প্রিন্স তার অর্থনৈতিক পরিবর্তনের পরিকল্পনা সাজিয়েছেন। তাই তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে হলে যুদ্ধবিরতি এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে দৃশ্যমান অগ্রগতি থাকতে হবে।
মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যুদ্ধের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ায় সৌদি আরব ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করেছে। সুন্নি অধ্যুষিত সৌদি আরব ও শিয়া অধ্যুষিত ইরানের মধ্যে বছরের পর বছর ধরে বৈরিতা বজায় ছিল। ইয়েমেন ও লেবাননের মতো দেশে ইরানের মদদপুষ্ট সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর উপস্থিতিকে সৌদি আরব বরাবরই বড় নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে দেখে এসেছে।
 
এবার কি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর ঐক্য হবে। তারা ইসরায়েলকে মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ থাকবে?
 
                
              
 
																 
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                    








-20251029103315.jpeg)























