• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জন্মবার্ষিকীতে শহীদ রুমীকে স্মরণ


হাসান শাওন
প্রকাশিত: মার্চ ২৯, ২০২৩, ১২:১৫ পিএম
জন্মবার্ষিকীতে শহীদ রুমীকে স্মরণ

মায়ের জমিন রক্ষায় প্রাণ তুচ্ছ হয়ে যায়। একাত্তরে রক্ত নদী বয়েছে এ জনপদে। হারিয়ে গেছে বহু সোনার ছেলে। তেমনই এক শহীদ শাফী ইমাম রুমী বীর বিক্রম। জীবনের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে তিনি হাঁটেননি। সুযোগ ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ ইলিনয় ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে পড়ার। কিন্তু অন্যায় রুখে দাঁড়ানো গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে তার কাছে। সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ঢাকা থেকে চলে গেছেন মেঘালয়। গেরিলা যুদ্ধের ট্রেনিং নিয়ে ফিরেছেন শহরে। তাদের দল ক্র্যাকপ্লাটুনের একের পর আক্রমণে ঘুম হারাম হয়েছে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর।

১৯৫১ সালের আজকের দিনে শাফী ইমাম রুমীর জন্ম সিলেটে। তার সম্পর্কে বিশদ মেলে এই শহীদের জননী জাহানারা ইমামের লেখা বই ‘একাত্তরের দিনগুলি’তে। বাংলাদেশের জনযুদ্ধের এক অনবদ্য দলিল এই বই। এ যেমন রুমীকে চেনায়, তেমনি স্পষ্ট করে সময়ের প্রয়োজনে এক দল তরুণের সশস্ত্র হওয়ার ন্যায্যতা।  

প্রথমা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ‘একাত্তরের চিঠি’ বইয়ে রুমীর একটি চিঠি গ্রন্থিত হয়েছে। প্রাসঙ্গিক মনে হওয়ায় এর উল্লেখ।

প্রাণপ্রিয় পাশা মামা,

অবাক হয়ো না। এটা লেখা হয়েছে আর তোমার কাছে পৌঁছেছে। আর পড়ার পর চিঠিটা নষ্ট করে ফেলো। এ নিয়ে আম্মাকেও কিছু লিখো না। তা হলে তাঁদের বিপদে পড়তে হবে। তাড়াহুড়া করে লিখলাম। আমার হাতে সময় খুব কম। বেস ক্যাম্পের উদ্দেশে কাল এখান থেকে চলে যেতে হবে।

আমরা একটা ন্যায়সঙ্গত যুদ্ধে লড়ছি। আমরা জয়ী হবো। আমাদের সবার জন্য দোয়া করো। কী লিখবো বুঝতে পারছি না- কত কী নিয়ে যে লেখার আছে। নৃশংসতার যত কাহিনী তুমি শুনছো, ভয়াবহ ধ্বংসের যত ছবি তুমি দেখছো, জানবে তার সবই সত্য। ওরা আমাদের নৃশংসতার সঙ্গে ক্ষত বিক্ষত করছে, মানব ইতিহাসে যার তুলনা নেই। আর নিউটন আসলেই যথার্থ বলেছেন, একই ধরনের হিংস্রতা নিয়ে আমরাও তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বো। এরই মধ্যে আমাদের যুদ্ধ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। বর্ষা শুরু হলে আমরা আক্রমণের তীব্রতা বাড়িয়ে দেবো।

জানি না আবার কখন লিখতে পারবো। আমাকে লিখো না। সোনার বাংলার জন্য সর্বোচ্চ যা পারো, করো। এখনকার মতো বিদায়।

সৈয়দ মোস্তফা কামাল পাশাকে লেখা চিঠিতে শহীদ শাফী ইমাম রুমী (বীর বিক্রম)।

ক্র্যাকপ্লাটুন গেরিলা দলের ট্রেইনার ছিলেন মেজর খালেদ মোশাররফ ও মেজর হায়দার। যোদ্ধাদের অন্তরে আশ্চর্য এক মন্ত্র বুনে দিতেন তারা। তা হলো, “স্বাধীন দেশে জীবিত গেরিলার প্রয়োজন নেই। স্বাধীন দেশ চায় রক্তস্নাত শহীদ।” রুমী জীবন দিয়ে এ কথা বাস্তব করেছেন।

একাত্তরের মুক্তিসংগ্রামে বিশেষ এক অধ্যায় রুমী ও তার মতো শহুরে তরুণদের নিয়ে গড়া গেরিলা দল ‘ক্র্যাকপ্লাটুন’। তাদের অধিকাংশই সামর্থবান ও সচ্ছল ঘর থেকে আসা। কিন্তু মেঘালয়ের ট্রেনিংয়ে তারা হয়ে উঠেছিলেন কৃষক, শ্রমিকের সহযোদ্ধা। জীবনের নানা দিক দেখার সৌভাগ্য হয় তাদের যুদ্ধক্ষেত্রে। লড়তে লড়তেই এ শেখা। মরতে মরতেই এ শেখা। মুক্তিস্নানে এভাবে মানুষ বদলায়।

সচ্ছলতার জীবনে না হেঁটে নিরীক্ষা প্রবণতা ক্র্যাকপ্লাটুনের সদস্যদের আরেক বৈশিষ্ট্য। গণহত্যা মোকাবিলায় এছাড়া আর পথ কী? এই গেরিলারা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রতিপক্ষ হননি। রুমীও এমন। জনতার কাতারে জনযুদ্ধে লড়ে চলে গেছেন অনন্তলোকে।      

মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পরও তাই রুমী অবিস্মরণীয়। কাঙ্ক্ষিত স্বদেশ গড়তে তাকে দরকার। অনন্তলোকে তিনি নিশ্চয়ই ঘুমে নেই। আবার কি স্টেনগান ধরার সাধ জাগে তার? ফিরতেও হয়তো ইচ্ছে হয় আরেক মুক্তির স্বপ্ন পূরণে।

Link copied!