নারীরা শারীরিক গঠন ও হরমোনজনিত পরিবর্তনের কারণে কিছু নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যাশ বেশি ভোগে। কিছু রোগ প্রাকৃতিকভাবে নারীদের বেশি আক্রান্ত করে, আবার কিছু রোগ জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসের কারণে বেশি দেখা দেয়। এই সমস্যাগুলোর সঠিক কারণ জানা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS)
পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS) হলো একটি হরমোনজনিত সমস্যা, যা ডিম্বাশয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করে। এটি নারীদের অনিয়মিত মাসিক, ওজন বৃদ্ধি এবং বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে। এর লক্ষণ হলো অনিয়মিত মাসিক, মুখে ও শরীরে অতিরিক্ত লোম গজানো, ব্রণ ও তৈলাক্ত ত্বক, ওজন বৃদ্ধি, গর্ভধারণে সমস্যা। স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা, মানসিক চাপ কমানো এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ গ্রহণ করলে এই রোগ প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
থাইরয়েড সমস্যা
নারীদের মধ্যে হাইপোথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি) এবং হাইপারথাইরয়েডিজম (অতিরিক্ত থাইরয়েড হরমোন) বেশি দেখা যায়।
ওজন হঠাৎ কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া, অতিরিক্ত ক্লান্তি, চুল পড়া, মাসিকের অনিয়ম, বিষণ্নতা এর লক্ষণ। এই রোগ৷ প্রতিরোধে আয়োডিনযুক্ত খাবার গ্রহণ, থাইরয়েড পরীক্ষা করা এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ গ্রহণ করা জরুরি।
মাসিকজনিত সমস্যা
অনেক নারী অতিরিক্ত ব্যথাযুক্ত মাসিক, অনিয়মিত মাসিক কিংবা মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন। যার কারণে তীব্র পেট ব্যথা, অতিরিক্ত রক্তপাত, মাসিক চক্রের অনিয়ম, মাথা ব্যথা ও বমিভাব হতে পারে। এই রোগ প্রতিরোধে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া, পানি ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, মানসিক চাপ কমানো এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
প্রজনন ও গর্ভধারণ সংক্রান্ত সমস্যা
গর্ভধারণ সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতা যেমন বন্ধ্যাত্ব, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এর কারণে গর্ভধারণে দীর্ঘদিন সমস্যা হয়, গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস এবং বারবার মিসক্যারেজ হয়। যা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা অনুসরণ করা, চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত পরীক্ষা করা এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ গ্রহণ করা জরুরি।
স্তন ক্যান্সার ও জরায়ু ক্যান্সার
নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার ও জরায়ু (সার্ভিকাল) ক্যান্সার অন্যতম প্রাণঘাতী রোগ। স্তনে অস্বাভাবিক গঠন বা চাকা অনুভব করা, জরায়ুর অস্বাভাবিক রক্তপাত, ওজন কমে যাওয়া, দীর্ঘমেয়াদি ক্লান্তি হয়। যা প্রতিরোধে নিয়মিত স্তন পরীক্ষা করা, প্যাপ স্মিয়ার টেস্ট করা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা, ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করা উচিত।
হাড়ের সমস্যা ও অস্টিওপোরোসিস
নারীদের হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়ার ফলে অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বেশি থাকে, বিশেষ করে মেনোপজের পর। যার কারণে হাড় দুর্বল হয়ে যায়, সহজে হাড় ভেঙে যায়, পিঠ ও কোমরে ব্যথা হয়। এই অবস্থায় ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হবে, নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে এবং সূর্যালোকে থাকতে হবে।
মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা
নারীরা সাধারণত পুরুষদের তুলনায় বেশি মানসিক চাপে থাকেন, যা বিষণ্নতা এবং উদ্বেগজনিত সমস্যার কারণ হতে পারে। যার কারণে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, ঘুমের সমস্যা, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, আত্মবিশ্বাস কমে যায়। পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ব্যায়াম করলে, মেডিটেশন ও যোগব্যায়াম করলে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের সাহায্য নিলে সমাধান পাওয়া যাবে।
ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশন
নারীদের মূত্রনালীর গঠনগত পার্থক্যের কারণে তারা ইউরিন ইনফেকশনে বেশি আক্রান্ত হন। যার কারণে প্রস্রাবের সময় জ্বালা-পোড়া, ঘন ঘন প্রস্রাবের অনুভূতি, তলপেটে ব্যথা হতে পারে। এই রোগের সমাধানে প্রচুর পানি পান করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।
ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ
নারীরা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপে বেশি ভোগেন। অতিরিক্ত তৃষ্ণা ও ক্ষুধা, মাথাব্যথা ও ক্লান্তি, অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পাওয়া এই রোগের লক্ষণ। যা প্রতিরোধে চিনি ও ফ্যাটযুক্ত খাবার কম খেতে হবে, নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে, রক্তচাপ ও ব্লাড সুগার নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে।