• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

২০২৩ সালে উপাচার্য-শিক্ষার্থীসহ যাদের হারিয়েছে জবি


জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৭, ২০২৩, ০৬:০১ পিএম
২০২৩ সালে উপাচার্য-শিক্ষার্থীসহ যাদের হারিয়েছে জবি
২০২৩ সালে উপাচার্য-শিক্ষার্থীসহ যাদের হারিয়েছে জবি। ছবি: প্রতিনিধি

দুঃখ ভরা একটি বছর কেটেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি)। চলতি বছরে এপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া, ডেঙ্গু জ্বর, খাদ্য বিষক্রিয়া, গ্যাস বিস্ফোরণসহ অস্বাভাবিক মৃত্যুতে প্রাণ হারিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী। মারা যাওয়া শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

শিক্ষার্থী ছাড়াও এবছর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হারিয়েছে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হককে। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর চলতি বছরের ১১ নভেম্বর রাজধানীর বিআরবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পৃথিবীর মারা যান তিনি।

এ বছরের শুরুর দিকে ২৯শে এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের মো. রাজু আহমেদ নামে এক শিক্ষার্থী মারা যান। পুরান ঢাকার নারিন্দার একটি মেস থেকে খিঁচুনি ও শ্বাসকষ্টে অজ্ঞানরত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে রাজুর মৃত্যুর চার দিন পর পরিবারের পক্ষ থেকে তার মৃত্যু অস্বাভাবিক বলে দাবি করে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চান রাজুর বাবা। যদিও পরিবারের কেউই মামলা কিংবা আইনগত পদক্ষেপের দিকে এগোয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭তম আবর্তনের এই শিক্ষার্থীর গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড় জেলায়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ১৯ বছর।

রাজুর মৃত্যুর এক মাস পর ৬মে সকালে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাওন নামের আরেক শিক্ষার্থী মৃত্যুবরণ করেন। শাওন পুরান ঢাকার ধূপখোলা বাজারে গ্যাসলাইন বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়েছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ সেশনের ১৬তম আবর্তনের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন৷ এ ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী শাওনের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ আদায়ে আইনি ও অর্থ সহায়তা দিচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে ভাড়া বাসায় থাকতেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র রুদ্র সরকার। চলতি বছরের জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে রুদ্র জ্বরে আক্রান্ত হলে প্রাথমিক পরীক্ষায় ডেঙ্গু শনাক্ত হয়নি। এরপর অবস্থার অবনতি হলে ২৯ জুলাই কুড়িগ্রামে আবার পরীক্ষা করালে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। ক্রমান্বয়ে কুড়িগ্রাম সরকারি হাসপাতাল ও রংপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর কিডনি ও ফুসফুসে সংক্রমণ হলে রুদ্রকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তীতে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ৪ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার হাসনাবাদ ইউনিয়নে। তার বাবা সাবলু সরকার পেশায় একজন গ্রাম্য চিকিৎসক।

তিন দিন পেটের পীড়ায় ভুগতে থাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সোহেল রানা ৮ অক্টোবর মেডিকেল সেন্টার থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। মেডিকেল সেন্টার থেকে তাকে পর্যাপ্ত স্যালাইন খাওয়ার পরামর্শ দেয়। পরদিন তার অবস্থার দ্রুত অবনতি হয়। পেটে ব্যথা, বমি ও পাতলা পায়খানা বেড়ে যাওয়ায় তার রুমমেটরা অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসকরা ফুড পয়জনিংয়ের কারণে সোহেলের কিডনির সমস্যা হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন। পরদিন ১০ অক্টোবর ভোর ৬টায় তার মৃত্যু হয়। সোহেলের গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রামে।

সর্বশেষ ২৪ নভেম্বর অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া (অবর্ধক রক্তশূন্যতা) রোগে আক্রান্ত হয়ে শিহাব মিয়া নামের এক শিক্ষার্থীর মারা যান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন।

দীর্ঘদিন ধরে এপ্লাস্টিক এনিমিয়া রোগে ভুগেছিলেন শিহাব। শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে চিকিৎসক হাসপাতাল থেকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলে গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুরে তার নানার বাড়িতে মারা যায় শিহাব।

শিহাবের সহপাঠীরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলছিলেন, বেঁচে থাকলে হয়তো বন্ধুদের আড্ডায় হই হুল্লোড় করে ঘুরে বেড়াতো। কিন্তু মৃত্যু সে সুযোগ আর দেয়নি। মেধাবীদের মৃত্যুতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রতিবারই শোক জানিয়েছে৷ অকাল মৃত্যুতে পরপারে ভালো থাকুক সবাই এটাই কামনা।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শুরুতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হকের ক্যান্সার ধরা পরে। উন্নত চিকিৎসার জন্য অধ্যাপক ইমদাদুল হক ১২ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে যান। সেখানে তার রেডিও থেরাপি সম্পন্ন হয়। পরবর্তীতে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় তিনি ১২ অক্টোবর দেশে ফিরে আসেন। দীর্ঘদিন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে থাকার পর চলতি বছরের ১১ নভেম্বর ভোর ৫ ঘটিকায় রাজধানীর বিআরবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার মরহুমের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি। এছাড়াও ইউজিসি চেয়ারম্যান, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, শিক্ষার্থীদের অকাল মৃত্যু খুবই দুঃখজনক। আমরা ভবিষ্যৎ জাতি গড়ার এক ঝাঁক কারিগরদের হারিয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার তাদের বিদেহী শিক্ষার্থীদের আত্মার শান্তি ও মাগফেরাত কামনা করছে এবং শোকসন্তপ্ত পরিবার বর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে।

শিক্ষা বিভাগের আরো খবর

Link copied!