বিশ্ব শরণার্থী দিবস সোমবার (২০ জুন)। এবারের শরণার্থী দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘নিরাপত্তা খোঁজার অধিকার’। যদিও কক্সবাজারে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের এখনও শরণার্থীর স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। শুধু ৩৩ হাজার তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে রয়েছেন। তবে সকল রোহিঙ্গারা মনে করে তারা সকলেই শরণার্থী। শরণার্থী দিবসে রোহিঙ্গারা এ শরণার্থী জীবন একঘেয়ে বলে মনে করছে।
রোহিঙ্গারা চান, স্বদেশে ফিরে গিয়ে নিজস্ব স্বাধীন জীবন উপভোগ করতে। তাদের দাবি, গণহত্যা থেকে বাঁচতে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন তারা। মানবিক বিবেচনায় বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিয়েছেন। এখানে বেশি দিন থাকা যাবে না। স্বদেশে ফিরে নিজস্ব ঘরে স্বাধীনভাবে বাঁচতে চান তারা। তবে আপাতত রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরে যাওয়ার কোনো পরিবেশ নেই বলছেন রোহিঙ্গা বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞদের মতে রোহিঙ্গাদের নিয়ে বিকল্প চিন্তা জরুরি।
বিশ্ব শরণার্থী দিবস নিয়ে কথা হয় ২১ নম্বর ক্যাম্পের সাব্বির শেখের সঙ্গে। তিনি জানান, মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে তার প্রাণ মিশে আছে। বংশের পর বংশের জন্মকথা, স্মৃতি ওই মাটিতে। যেখানে তাদের নিজস্ব চাষের জমি, গাবাদি পশু ও বাগান বাড়ি রয়েছে। আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে মিলে মিশে থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেনাবাহিনীর নির্যাতন নিপীড়নে তারা পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন।
সাব্বিরের দাবি তিনি বাংলাদেশের মেহমান। একজন অপরজনের বাড়িতে মেহমান হয়ে এলে বেড়ানো সময় বা আতিথিয়তা কয়েক দিনের। বেশি দিন হলে তা বিরক্তির কারণ হতে পারে বলে মনে করে তিনি।
তিনি আরও জানান, মিয়ানমার ফিরতে চান তারা। ওখানে নিজস্ব স্বাধীন জীবন উপভোগ করতে চান।
শরণার্থী হিসেবে কুতুপালং রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্পের বাসিন্দা আবুল করিম জানান, এখানে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিযাতন-নিপীড়নের মুখে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় আট লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। কিন্তু এর আগে থেকে তাদের অবস্থান। এখানে নিরাপদ আশ্রয় পেয়েছেন। সময় মতো খাবার হিসেবে সহায়তাও পাচ্ছেন। কিন্তু শরণার্থী জীবন নিয়ে তারা খুশি নয়। পূর্ণ নাগরিক অধিকার নিজ দেশে ফিরে গিয়ে তারা স্বাধীন জীবন উপভোগ করতে চান।
রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৭ সালের রোহিঙ্গা সংকটের পর জাতিসংঘের সহযোগিতায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে প্রত্যাবাসন চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি এখনও। প্রত্যাবাসনের অগ্রগতি নিয়ে সন্তোষ নন তারা।
অভিবাসন ও রোহিঙ্গা বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর জানান, রোহিঙ্গা সংকট দ্রুত সমাধান হবে এমনটা আশা করা যাচ্ছে না। মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক সরকারের সময় যেখানে অগ্রগতি হয়নি, যেখানে সেনাবাহিনীর দ্বারা সমাধান হবে বলে মনে করা বোকামি। সেনাবাহিনীর হাতেই তো রোহিঙ্গারা নির্যাতিত হয়েছেন। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য বিশ্ববাসীকে আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার।
মানবাধিকারকর্মী ফজলুল কাদের চৌধুরী জানান, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক মহলের তৎপরতা আরও বাড়ানো দরকার। মিয়ানমার এই জনগোষ্ঠীকে মানতে রাজি নন। এর জন্য রোহিঙ্গাদের আরও বেশি সংগঠিত করে তারা যেন তাদের দাবি বিশ্ব দরবারে বলতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে।







































