• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

নদীতে ইলিশ নেই, হতাশ হয়ে তীরে ফিরছেন জেলেরা


ভোলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ১০, ২০২৩, ০৯:২৬ এএম
নদীতে ইলিশ নেই, হতাশ হয়ে তীরে ফিরছেন জেলেরা

ভোলার মেঘনা নদীতে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। গত বছর এই সময় নদীতে অনেক মাছ পেলেও এ বছর ইলিশ না থাকায় ভোলার ১ লাখ ৫৮ হাজার জেলে পরিবারে দেখা দিয়েছে দুর্দিন। উপকূলীয় জেলে পরিবারে মেলেনি ঈদের আনন্দ। নদীতে জাল ফেলে দু-এক হালি ইলিশ হাতে নিয়ে হতাশ হয়ে তীরে ফিরছেন জেলেরা। যা বিক্রি করে তেলের খরচও উঠছে না।

এদিকে বিভিন্ন এনজিও থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না পেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেক জেলে। পরিবার-পরিজন নিয়ে কাটছে দুর্বিষহ জীবন।

সরেজমিনে বোরহানউদ্দিনের তেঁতুলিয়া, তজুমদ্দিন, ও লালমোহন উপজেলার মেঘনা নদী ও মাছ ঘাটগুলো ঘুরে দেখা যায়, জেলেরা জাল, নৌকা ও ট্রলার নিয়ে মেঘনা নদী চষে বেড়াচ্ছেন। ভোর থেকে শুরু করে মধ্য রাত পর্যন্ত জাল ফেলেও ইলিশের দেখা পাচ্ছেন না।

এদিকে ভরা মৌসুমে ইলিশ শিকারের আশায় অনেক জেলেই মৎস্য আড়তদার ও বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে নতুন নৌকা, ট্রলার ও জাল কিনেছেন। কেউ আবার পুরোনো নৌকা, ট্রলার ও জাল মেরামত করেছেন। কিন্তু ভরা মৌসুমে নদীতে গিয়ে আশানুরূপ ইলিশ না পেয়ে বিপাকে তারা পড়েছেন।

বোরহানউদ্দিন উপজেলার তেঁতুলিয়া নদীর নয়নের খালের আড়তদার জুয়েল বলেন, “গত কয়েক দিন হলো আমার মহলে কোনো ইলিশ মাছ আসেনি। ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ শিকারের আশায় প্রতিদিনই জাল, নৌকা, ট্রলার ও বরফ নিয়ে দল বেঁধে নদীতে পাঠাচ্ছি জেলেদের। ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নদী চষে বেড়ালেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। ফলে অনেকটা হতাশা নিয়ে তীরে ফিরতে হচ্ছে।“

আড়তদার জাহাঙ্গীর মাঝি, তেঁতুলিয়ার কালাম সরদার, মোশারফ হোসেন বলেন, “লাখ লাখ টাকা দাদন দিয়ে আমরা এখন অসহায়। নদীতে মাছ নেই। আমাদের ব্যবসাও নেই।”

তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের শশীগঞ্জ ও চৌমুহনী মাছঘাটের জেলে, নুরু মাঝি, মফিজ মাঝি, জসিম মাঝি ও জামাল মাঝি জানান, আষাঢ় মাস ইলিশের ভরা মৌসুম হলেও সারা দিন নদীতে জাল ফেললে ছোট-বড় দুই তিন হালি করে ইলিশ মিলে, যা বিক্রি করে ১০-১২ হাজার টাকা পাওয়া যায়। অথচ সাত-আটজন জেলে নিয়ে নদীতে নামলে ডিজেল ও অন্যান্য খরচসহ দৈনিক ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা প্রয়োজন। অথচ গত বছর এই সময়ে প্রতিটি নৌকায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার মাছ পাওয়া যেত।

এদিকে মার্চ, এপ্রিল দুই মাস নদী ও সাগরে নিষেধাজ্ঞার কারণে মাছ ধরতে না পারায় দিন দিন ঋণের বোঝা ভারী হচ্ছে উপকূলীয় জেলেদের। তাই বাধ্য হয়ে পেশা বদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অনেকে। ইতোমধ্যে অনেক জেলে জাল নৌকা ফেলে রেখে ভাড়ায় মোটরসাইকেল ও অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। অনেকে কাজের সন্ধানে চলে গেছেন ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায়।

লালমোহন উপজেলার বাত্তিরখাল মাছঘাটের ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন জানান, অনেকে অফ সিজনে ঢাকা ও চাঁদপুরের পাইকারি আড়ত থেকে মোটা অঙ্কের দাদন এনে জেলেদের দিয়েছেন। কথা ছিল মৌসুম শুরু হলে ইলিশ দিয়ে টাকা পরিশোধ করবেন। কিন্তু এখন ভরা মৌসুমে পর্যাপ্ত ইলিশ না পাওয়ায় সেই আড়তদারদের মাছ না পাঠাতে পেরে চাপে আছেন তারা।

ভোলা-জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি শাহে আলম বলেন, এখন ইলিশের ভরা মৌসুম। তাই সে অনুযায়ী নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মাছ পড়ার কথা। নদীতে চর জাগা, উজানের প্রবাহ কম থাকা এবং বৃষ্টি কম হওয়ায় ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে এখনো কাঙ্ক্ষিত রুপালি ইলিশ ধরা পড়ছে না।

ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা মো. এমদাদুল্লাহ সংবাদ প্রকাশকে জানান, বর্তমানে নদীতে ডুবো চরের কারণে পানির গভীরতা কম থাকায় সাগর থেকে ইলিশ নদীতে আসতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণেই নদীতে ইলিশ সংকট রয়েছে। তবে বৃষ্টিপাত শুরু হলে নদীর পানিবৃদ্ধি পাবে তখন জেলেরা পর্যাপ্ত পরিমাণে ইলিশ পাবেন এবং তাদের দুর্দিন কেটে যাবে। ভোলা জেলায় জেলের সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। এর মধ্যে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১ লাখ ৫৮ হাজার। ইতোমধ্যে এদের সরকার বিশেষ ভিজিএফের আওতায় এনেছে।

Link copied!