• ঢাকা
  • শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

সূর্যমুখী চাষে সোরহাবের সাফল্য


হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল
প্রকাশিত: মার্চ ১৭, ২০২৩, ০৮:৪৫ এএম
সূর্যমুখী চাষে সোরহাবের সাফল্য

সূর্যমুখী চাষে আশার আলো দেখছেন টাঙ্গাইলের চাষিরা। দিন দিন বাড়ছে এর চাহিদা। কৃষি বিভাগ মনে করছে, সূর্যমুখী চাষে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি পূরণ হবে তেলের চাহিদা। কয়েক বছর ধরে সরকারিভাবে পরীক্ষামূলক শুরু হলেও এবার অনেক কৃষক বাণিজ্যিক ও নিজ উদ্যোগে সূর্যমুখী চাষ করেছেন।

এমনই একজন চাষি টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর দক্ষিণ পাড়া গ্রামের সোরহাব মিয়া। সরকারের প্রণোদনা হিসেবে গত বছর ১ বিঘা জমিতে ১ কেজি সূর্যমুখী ফুলের বীজ দিয়ে তিনি চাষ শুরু করেন। সাফল্য পাওয়ায় এবার নিজ উদ্যোগে প্রায় ২ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন সূর্যমুখীর।

সোরহাব মিয়া বলেন, “আমি সৌদি আরব ফুলের বাগানে কাজ করেছি। ওখানে অনেক ধরনের ফুল গাছের চারা রোপণ করেছি। সৌদি আরব সূর্যমুখীর আবাদ বেশি হয় চাহিদাও অনেক। তখন আমি চিন্তা করি দেশে যেয়ে কিছু করবো। করোনার মধ্যে দেশে চলে আসি আর বিদেশ যাওয়া হয়নি। পরে চিন্তা করলাম বসে না থেকে কিছু একটা করি। তারপর বাসাইল কৃষি অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করি। তাদের পরামর্শে গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে এক বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করি। এক বিঘা জমিতে চাষ করতে খরচ হয়েছে ৬-৭ হাজার টাকা। সূর্যমুখীর বীজ বিক্রি করে ৩৫-৪০ হাজার টাকা লাভ হয়। এ বছর প্রায় ২ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। খরচ হয়েছে ১২-১৪ হাজার টাকা। ফলনও অনেক ভালো হয়েছে আশা করছি ৭০-৮০ হাজার টাকা লাভ থাকবে।”

এই চাষি আরও বলেন, সূর্যমুখী সরিষার থেকে তিন-চারগুণ বেশি আবাদ হয়, খরচ প্রায় সমান হয়। সূর্যমুখী চাষ করতে চার-সাড়ে চার মাস সময় লাগে ও দুইটা সেচ দিতে হয়। চাহিদা ও লাভ অনেক বেশি।

টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর ২৩০ হেক্টর সূর্যমুখীর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কার্যক্রম শুরু করা হয়। এ পর্যন্ত অর্জন করা হয় ২৪২ হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় ১৪ হেক্টর বেশি আবাদ হয়। যে আবাদ হয়েছে তা থেকে ৪৪২ মেট্রিকটন সূর্যমুখীর বীজ পাওয়া যাবে। জেলায় এ বছর ৬২৫ জন কৃষককে সূর্যমুখীর এক কেজি বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এওপি সার প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বিতরণ করা হয়েছে।

কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের আদাজান গ্রামের অর্ণব আল আমিন বলেন, “গত বছর সোরহাব মিয়ার সূর্যমুখী ক্ষেতে ঘুরতে এসে অনেক ভালো লাগে। এ বছর আমিও বাড়ির উঠানে সূর্যমুখী চাষ করেছি। একদিকে সৌন্দর্য বাড়ছে, আরেক দিকে তেলের চাহিদা পূরণ হবে।”

টাঙ্গাইল থেকে ঘুরতে আসা একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাজীব মিয়া বলেন, “সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি দেখেছি। তাই বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে আসলাম। সূর্যমুখী ফুলের দিকে শুধু তাকিয়ে থাকতেই ইচ্ছে করে।”

কৃষক লিয়াকত আলী খান বলেন, “সোরহাব মিয়ার সূর্যমুখীর চাষ করেছে দেখে অনেক ভালো লেগেছে। সূর্যমুখী সরিষার থেকে তিনগুণ-চারগুণ বেশি লাভ হয়। এটার চাহিদা ও দাম অনেক বেশি। আমারও ইচ্ছে আছে আগামী বছর নিজ উদ্যোগে সূর্যমুখীর চাষ করার।”

টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আহসানুল বাসার বলেন, “ভোজ্যতেলের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষে সরিষার আবাদ যেভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেভাবে সূর্যমুখীর আবাদও বৃদ্ধি করা হচ্ছে। আমরা সরিষার পাশাপাশি সূর্যমুখীর বড় ধরনে প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি। সূর্যমুখী বীজ থেকে একদিকে তেলের চাহিদা পূরণ হবে। অন্যদিকে সৌন্দর্য বাড়ছে দর্শকরা সূর্যমুখীর ছবি তুলার জন্য ক্ষেতগুলোতে ভিড় করছে।”

আহসানুল বাসার আরও বলেন, “আমরা কৃষকদের সূর্যমুখীর আবাদ বৃদ্ধির জন্য যেমন উৎসাহ দিচ্ছি। তেমনি তাদের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা করছি প্রতিনিয়তই তাদের পাশে থেকে। সূর্যমুখীর আবাদ কৌশল সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ভাবে ধারণা দিচ্ছি। রোগ-বালাই থেকে কীভাবে রক্ষা করা যায় সেজন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রণোদনার পাশাপাশি কৃষকদের পাশে থেকে উৎসাহ প্রদান করছি। এজন্য টাঙ্গাইলে দিনদিন সূর্যমুখীর আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।”

Link copied!