• ঢাকা
  • শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,

সয়াবিনের রাজধানী লক্ষ্মীপুর


মো. আবদুল মালেক, লক্ষ্মীপুর
প্রকাশিত: আগস্ট ৯, ২০২১, ০৮:৩২ এএম
সয়াবিনের রাজধানী লক্ষ্মীপুর

লক্ষ্মীপুরে অর্থনীতিতে গতি এনেছে নারিকেল, সুপারি আর সয়াবিন। এ খাত থেকে প্রতিবছর আয় হচ্ছে প্রায় হাজার কোটি টাকা। জেলায় উৎপাদিত নারিকেল, সুপারি ও সয়াবিন ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রংপুরসহ দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। এতে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এসব অর্থকরী ফসল। এ জেলার মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কৃষকেরা এসব অর্থকরী ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে পরিবর্তন করছেন তাদের জীবনযাত্রা। উপকূলীয় খাতভিত্তিক শিল্পকারখানা স্থাপন হলে পাল্টে যেতে পারে এখানকার অর্থনীতির গতি। সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে ব্যাপক কর্মসংস্থানের। 

বর্তমান সরকারের মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে রূপকল্প-২০২১ এবং একটি সুখী ও সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরের জন্য রূপকল্প-২০৪১ প্রণয়ন করেছে। ওই রূপকল্পসমূহ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন দ্রুত ও ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। এই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনকে ত্বরান্বিত করতে প্রয়োজন সমন্বিত প্রচেষ্টা। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলাই বিভিন্নভাবে স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত ও অর্থনৈতিকভাবে সম্ভাবনাময়। লক্ষ্মীপুর জেলা তার ব্যতিক্রম নয়। এ জেলার একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় পণ্য হলো সয়াবিন। যথাযথ পরিকল্পনা ও অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে এ শিল্পটি আশানুরূপভাবে বিকাশ লাভ করেনি। সম্ভাবনাময় এ শিল্পকে আরও এগিয়ে নিতে দরকার সবার উদ্যোগ। জেলা ব্র্যান্ডিংয়ের আওতায় সয়াবিনকে ব্র্যান্ড করা সম্ভব হলে তা এ শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে লক্ষ্মীপুর তথা দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

এ ছাড়া সম্ভাবনা রয়েছে সুপারি আর নারিকেলে। এ তিনটি খাত থেকে প্রতিবছর আয় হয় হাজার কোটি টাকা।

উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুর জেলার প্রায় শতভাগ কৃষক সয়াবিন আবাদের সঙ্গে জড়িত। অনুকূল আবহাওয়া ও উর্বর মাটির কারণে এ অঞ্চলে সয়াবিনের বাম্পার ফলন হয়। দেশের ৮০ শতাংশ সয়াবিন উৎপাদিত হয় এ জেলায়। এ ফসলের আবাদ ও বাম্পার ফলন হওয়ায় লক্ষ্মীপুর ‘সয়াবিনের রাজধানী’ হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যে কারণে ব্র্যান্ডিং হিসেবে লক্ষ্মীপুরকে ‘সয়াল্যান্ড’ নামকরণও করা হয়। এবার সয়াবিনের আবাদ হয়েছে ৪০ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে। ৭৭ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন সয়াবিন উৎপাদন হয়, যার বাজার মূল্য প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা। 

পাশাপাশি সুপারি ও নারিকেল—এ দুই খাতে অর্থনীতিতে উন্নয়নের চাকা ঘুরে যাচ্ছে। জেলার ৫টি উপজেলায় প্রায় ৭ হাজার ২৬৫ হেক্টর জমিতে সুপারি উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২ হাজার ৮৫০ হেক্টর, রায়পুর ৩ হাজার ১৫০ হেক্টর, রামগঞ্জ ৮৭৫ হেক্টর, রামগতি ৪০ ও কমলনগরে ৩৫০ হেক্টর জমিতে সুপারি চাষ হচ্ছে। এখানে হেক্টরপ্রতি ২ মেট্রিক টন সুপারি উৎপাদন হয়। এবার সাড়ে ১৫ হাজার মেট্রিক টন সুপারি উৎপাদন হয়, যার বাজার মূল্য প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। 


এদিকে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে নারিকেলের আবাদ হচ্ছে। সরকারি হিসাবে বছরে ৪৫ হাজার ৯৬০ মেট্রিক টন নারিকেল উৎপাদন হয় এখানে। বেসরকারি হিসাবে উৎপাদনের পরিমাণ আরও অনেক বেশি, যার বাজার মূল্য ১৫০ কোটি টাকা। সয়াবিন তেলবীজ হলেও আমাদের দেশের উৎপাদিত সয়াবিন থেকে তেল উৎপাদন করা হয় না। এ দেশের সয়াবিন মূলত পোলট্রি খাদ্য, মাছের খাদ্য তৈরি, সয়ানাগেট, সয়া বিস্কুট, সয়ামিট, সাবান, সয়াদুধ, শিশুখাদ্যসহ নানা রকমের ৬১টি পুষ্টিকর খাবার ও পথ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

]পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, খাদ্য হিসেবে সয়াবিনের ব্যাপক ব্যবহারের কারণ হচ্ছে এতে ৪০ শতাংশের বেশি আমিষ এবং ২০-২২ শতাংশ তেল রয়েছে। এ ছাড়া সয়াবিন শর্করা, চর্বি, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এবং ভিটামিন এ, বি এ সি-র উন্নত উৎস হিসেবে কাজ করে। সয়াবিন শুধু কোলস্টেরলমুক্তই নয়, বরং রক্তে কোলস্টেরলের পরিমাণ কমানোর মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। মানুষের সুস্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধে সয়াবিনজাত প্রোটিনের কার্যকর ভূমিকা রয়েছে। এ কারণে স্তন ক্যানসার, অন্ত্রের ক্যানসার ও গ্রন্থির ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে সয়াবিন। সয়াবিন পেশি গঠন এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তা ছাড়া সয়াবিন হজম বৃদ্ধি, কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলস রোগ নিরাময় করে। মেয়েদের মাসিককালীন প্রদাহ, আকস্মিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং অস্বাভাবিকতা নিয়ন্ত্রণ করে।

এদিকে নারিকেল থেকে উৎপাদিত তেল গুণগত মাণ ভালো হওয়ায় সারা দেশে রয়েছে এর ব্যাপক চাহিদা। নারিকেল দিয়ে তৈরি বিভিন্ন রকমের পিঠার তৈরি খাবার খুবই সুস্বাদু। এ ছাড়া নারিকেলের মালা ও ছোবড়া থেকে খাটের জাজিম, সোফার ফোম ও পোশাকশিল্পের বোতাম ও সুতলি তৈরি হয়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. বেলাল হোসেন খানের সঙ্গে আমরা একমত। তিনি বলেছেন, সয়াবিন, নারিকেল ও সুপারি অর্থকরী ফসল। যদি সম্ভাবনাময় এসব খাতকে ধরে রাখতে হয়, তাহলে খাতভিত্তিক শিল্পকারখানার বিকল্প নেই। ব্যক্তি অথবা সরকারি উদ্যোগে এ অঞ্চলে শিল্পকারখানা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে।

Link copied!