আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী দীর্ঘদিন রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি নিজের নির্বাচনী এলাকা টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে গণসংযোগ শুরু করেছেন। সম্প্রতি লতিফ সিদ্দিকী তার ভাই কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে দলটির সভা-সমাবেশে অংশ নেওয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে আলোচনা।
২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে একটি সভায় হজ, তাবলিগ জামাত ও প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করে মন্ত্রিত্ব হারান লতিফ সিদ্দিকী। তখন তাকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। জেলায় জেলায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। দেশে ফেরার পর তাকে কারাগারে যেতে হয়। পরে তিনি সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। নির্বাচনী প্রচারণার সময় তার গাড়িতে হামলার ঘটনাও ঘটে।
পাঁচ বছর নিষ্ক্রিয় থাকার পর ২০ সেপ্টেম্বর ২০-২৫টি গাড়ি ও শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে দেলদুয়ারে শাহান শাহ আদম কাশ্মীরির মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে গণসংযোগ শুরু করেন তিনি। ২৫ সেপ্টেম্বর ২৫-৩০টি প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসের বহর নিয়ে ঢাকা থেকে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে লতিফ সিদ্দিকী টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কবর জেয়ারত করেন। এসময় কাদের সিদ্দিকীর স্ত্রী নাসরিন সিদ্দিকী, ছোট ভাই মুনসুর আল মামুন আজাদ সিদ্দিকী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান খোকা বীরপ্রতীক, সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ অংশ নিয়েছিলেন।
ইতোমধ্যে তিনি কালিহাতীতে সাত থেকে আটটি সভা করেছেন। টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, কালিহাতীসহ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সব সভায় তাকে গলায় গামছা জড়িয়ে যোগ দিতে দেখা গেছে। লতিফ সিদ্দিকী কি কৃষক শ্রমিক জনতা লীগে যোগ দিচ্ছেন, এমন প্রশ্ন টাঙ্গাইলের রাজনৈতিক-সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। তার ভাই কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন যে জোট হতে যাচ্ছে, সেখানে তিনি প্রার্থী হতে পারেন, এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ছোট ভাই কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে আমি এক মঞ্চে তখনই বসেছি, যখন তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটা আলোচনা হয়েছে। আমি বুঝতে পারছি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে। আগামী নির্বাচনে কাদের সিদ্দিকী শেখ হাসিনাকে অকুণ্ঠ সমর্থন করবে, এ শর্তেই তার পাশে আমি আছি। আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করি, আমি আওয়ামী লীগার। আমি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটভুক্ত যে কোনো দলের সভায় যেতে পারি।
হঠাৎ তিনি আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন। আওয়ামী লীগে ফেরার কোনো ইঙ্গিত পেয়েছেন কিনা–এমন প্রশ্নে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, না, এ রকম কোনো ইঙ্গিত আমি পাইনি। দলে ফেরা নিয়ে আওয়ামী লীগের কারও সঙ্গে আমার আলোচনা হয়নি।
নির্বাচন সামনে রেখে হঠাৎ করে আবার কেন রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হয়েছেন—এমন প্রশ্নের তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আমাকে বাদ দিলেও আমি এখনও মনেপ্রাণে আওয়ামী লীগার। বর্তমান সরকারের প্রতি বিএনপি-জামায়াতের হুমকির বিরুদ্ধে আমি মাঠে এসেছি। নির্বাচন করার জন্য আসিনি। বিএনপি ঘোষণা দিয়েছে, তারা শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করবে। আমি মনে করি, এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা আমার দায়িত্ব। সেই দায়িত্ববোধ থেকেই আমি এসেছি। আমি নির্বাচন করতে আসিনি।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল লতিফ সিদ্দিকী আরও বলেন, কালিহাতীতে যারাই আওয়ামী লীগের লোক, স্বাধীনতার পক্ষের লোক, তাদের বলতে এসেছি, তোমরা সতর্ক হও, তোমরা ঐক্যবদ্ধ হও। আমি নির্বাচন করতে আসিনি। আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি। পরবর্তীতে সামরিক শাসনবিরোধী গণতন্ত্র হত্যাকারী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। সেটাকে যদি সমুন্নত রাখতে চাই, তাহলে আমাকে তৎপর হতে হবে। তাই আমার এই তৎপরতা। বর্তমানে স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি আঘাত হানার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের সহযোগিতা করছে আন্তর্জাতিক কিছু শক্তি। যারা একাত্তর সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিরোধিতা করেছে, তারা বাংলাদেশে তাদের মনমতো একটি পুতুল সরকার গঠন করতে চাচ্ছে। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আনতে চাচ্ছে। তারা গণতান্ত্রিক একটি সরকারকে উৎখাত করতে চায়।
আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ভোট কারচুপি সবসময় ছিল। বিএনপিইতো ভোট কারচুপির পথ দেখিয়েছে। বিএনপি যদি অপতৎপরতা দেখায় সেই অপতৎপরতা বন্ধ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ অনেক কিছুই করবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে তিনি বলেন, সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক লিুপ্ত হয়েছে। হ্যাঁ জনগণ যদি আন্দোলন করে এই সরকারকে হটিয়ে তত্ত্ববধায়ক সরকার চায় তাহলে হবে। তবে বিএনপির সাথে জনগণ কোথায় এমন এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি। একটি কথা রয়েছে আন্দোলনে যে জিতে নির্বাচনেও সে জিতে। আন্দোলনে হারলে ভোটেও সে হারে। তাই আন্দোলনে আওয়ামী লীগকে পরাস্ত করা এত সোজা কথা নয়। তাই আগামীতে সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে স্বাধীনতার পরাজিত শক্তিকে ভোটের মাধ্যমে পরাজিত করে আওয়ামী লীগ আবারও সরকার গঠন করবে।
আবদুল লতিফ সিদ্দিকী টাঙ্গাইল-৪ আসন থেকে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রথমবারের মতো প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ১৯৭৩, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে তাঁকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী করা হয়। পরে ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন। সে সময় তিনি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পান।