• ঢাকা
  • সোমবার, ০৯ জুন, ২০২৫, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১২ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

আম নিয়ে বিপাকে চাষি-ব্যবসায়ীরা


চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুন ৯, ২০২৫, ১০:৫৫ এএম
আম নিয়ে বিপাকে চাষি-ব্যবসায়ীরা

ঈদের টানা ছুটির কারণে আম নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমচাষি, বাগানি ও ব্যবসায়ীরা। কুরিয়ার সার্ভিস বন্ধ থাকায় আম পাঠানো যাচ্ছে না অন্য কোনো জেলায়ও।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, টানা ছুটির কারণে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় আম পাঠানো বন্ধ হয়ে গেছে। এতে স্থানীয় বাজারেও কমছে দাম। আমের বাজার কোরবানির ঈদের ব্যস্ততা আর দীর্ঘ ছুটির প্রভাবে দরপতন ঘটতে শুরু করেছে।

প্রতি মণ আমের দাম ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা কমেছে জানিয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, আম পরিবহন ও বাজারজাতের অন্যতম ব্যবস্থা কুরিয়ার সার্ভিস। ঈদ উপলক্ষে ৫ জুন থেকে ৯ জুন সব ধরনের সরবরাহ বন্ধ। ৪ জুন থেকে বন্ধ হয়ে যায় আমের বুকিং নেওয়া। এতে থমকে গেছে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠানো আমের বিশাল অনলাইন মার্কেটিং।
 
চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, এ বছর আম পাড়ার জন্য নির্দিষ্ট সময় বাধা নেই; অর্থাৎ প্রতিবারের মতো ‘ম্যাংগো ক্যালেন্ডার’ নেই। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাধারণত মে মাসের শেষে অথবা জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে গাছে পাকা আম দেখতে পাওয়া যায়। গাছে পাকা আম দেখা দিলে পরিপক্ব ওই আম বাজারে নামান চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

আমচাষি ফারুক আহমেদ জানান, ৩০ মে আম নামে বাজারে। গত ১ জুন থেকে কানসাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়ে আম বাজার জমে ওঠে। শুরুতে বাজারে উঠে গোপালভোগ আম। বাজার দর ১৮০০ থেকে ৩০০০ টাকা। এদিন ক্ষীরশাপাতি আমও আসে বাজারে। শুরুতেই ক্ষীরশাপাত আম প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছিল ২০০০ টাকার উপরে। দুদিন পর ৩ জুন বিক্রি হয় ২২০০ থেকে ২৮০০ টাকা মণ দরে। আর ল্যাংড়া আম বিক্রি হয় ১৪০০ থেকে ২৪০০ টাকা মণ।
 
তিনি আরও জানান, কোরবানির ঈদমুখী ব্যস্ততা ও অফিস-আদালতের দীর্ঘ ছুটির প্রভাবে আমের দাম কমে যায়। ৮ জুন বাজারে ক্ষীরশাপাতি আম ১৬০০ থেকে ২৪০০ টাকা মণ এবং ল্যাংড়া আম প্রতি মণ ১২০০ থেকে ১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
 
আমচাষি তারেক রহমান জানান, ক্ষিরসাপাত, গোপালভোগ, বিন্দাবনী জাতের এখন ভরা মৌসুম। পুরো গাছে পাঁকা আমে পরিপূর্ণ। কিন্তু ঈদের ছুটির কারণে পাড়তে পারছি না। পড়ে সময় নষ্ট হচ্ছে। কুরিয়ার চালু না হওয়া পর্যন্ত আম পাড়তে পারব না। আগামীকালকে (১০ জুন) থেকে কুরিয়ার চালু হওয়ার কথা আছে।
 
আম উদ্যোক্তা ও শিবগঞ্জ উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শহিদুল হক হায়দারী বলেন, আমের তো ছুটি হয় না; সময় হলে পেকে ঝরে পড়বে। আম, কৃষিপণ্য, কাঁচামাল পরিবহনে ঈদের ছুটিতেও ডাক বিভাগের জরুরি পরিষেবার আওতায় বিশেষ ব্যবস্থায় চালু রাখা দরকার।
 
কনসাট বাজারের ইজারাদার শফিকুল ইসলাম বলেন, বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার সংখ্যা কম, বেচা- বিক্রি কম হচ্ছে। ঈদের আগে দুদিন এবং ঈদের পরে তিন দিন এই ৫-৭ দিন পরে আবার বাজার ঠিক হয়ে যাবে।
 
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. ইয়াছিন আলী বলেন, আম পরিপক্ব হলে বেশিদিন গাছেও রাখা যায় না, আবার সংরক্ষণও করা যায় না। এ কারণে ঈদের ছুটিতে কিছুটা বিপাকে পড়তে হচ্ছে চাষিদের। এ জন্য ছুটির সময়টায় গাছ থেকে আম না পাড়াই ভালো।
 
এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমির আম বাগানে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পৌনে চার লাখ মেট্রিকটন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা কৃষি বিভাগের।

Link copied!