কুড়িগ্রামে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে পানি কমলেও বানভাসীদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে পানিবাহিত নানা রোগ। অনিরাপদ পানি পান করা, অস্বাস্থ্যকর বাথরুম ব্যবহার ও বন্যার পানিতে হাটা-চলার কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বানভাসীরা।
সরেজমিনে উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকার পোড়ার চর, চর খেয়ার আলগা, চর ইয়ুথনেট, চিড়া খাওয়ার চর,পার্বতীপুর চরসহ আশপাশের গ্রামগুলো ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ ঘর-বাড়ি থেকে পানি নেমে গেলেও অনেকের আঙিনায় এখনো বন্যার পানি রয়েছে। লোকজন কাদা-পানিতে চলাচল করায় বানভাসী এসব মানুষদের হাত-পায়ে চুলকানি ও সাদা ঘা দেখা দিয়েছে।
অনেকে পেটের পীড়া, চর্মরোগ, জ্বর ও ডায়রিয়ায় ভুগছেন। অনেক বাড়ির বাথরুম ও টিউবওয়েল এখনো পানির নিচে তলিয়ে আছে। চলাচলের রাস্তায় পানি থাকায় লোকজন নৌকা নিয়ে যাতায়াত করছেন। পানি ওঠার কারণে অনেকের ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রান্নার চুলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় রান্না করা খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।
এদিকে বন্যার কারণে মানুষের পাশাপাশি দুর্ভোগে আছে গবাদিপশুরাও। চরাঞ্চলগুলোর চারণভূমি বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকায় দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের তীব্র সংকট। মানুষজন নিজেদের নিরাপত্তার চেয়ে গবাদিপশুর চিন্তায় বেশি দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রাণি সম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বর্ষা মৌসুমে গরু, ভেড়া, ছাগল মিলে মোট আড়াই লাখ গবাদি পশু এবারের বন্যায় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। বন্যার পানিতে ৪২৫ একর চারণভূমি তলিয়ে যাওয়ায় গবাদিপশুর খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।
জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোশারফ হোসেন বলেন, “বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের গবাদি পশুর খাদ্য যোগান দিতে আমরা ২৫ মেট্রিকটন তৈরি খাবারের চাহিদা পাঠিয়েছি। বরাদ্দ পাওয়া গেলে তা কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হবে।”
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, বন্যার শুরু থেকে ৮৩টি মেডিকেল টিম বানভাসীদের চিকিৎসা সেবা দিতে কাজ করছে। প্রতিটি টিমে ৩ জন করে স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন। চলতি বন্যায় ৫০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও ১০ হাজার খাবার স্যালাইন বিতরণের জন্য ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রগুলোতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।