• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২০ মুহররম ১৪৪৫

মাত্র ৫ জনের গ্রাম ‘শ্রীমুখ’


সিলেট প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ২৪, ২০২১, ০৯:২০ পিএম
মাত্র ৫ জনের গ্রাম ‘শ্রীমুখ’

গ্রামটির নাম শ্রীমুখ। এর অবস্থান সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার তেলিকুনা ও পশ্চিম নোয়াগাঁও নামের দুই গ্রামের মাঝখানে। গ্রামটিতে একটি পরিবারের বসবাস। সেই পরিবারের সদস্যসংখ্যা মাত্র পাঁচজন। সিলেট থেকে বিশ্বনাথ উপজেলা সদর, এরপর মাত্র ২০ মিনিটের রাস্তা গেলেই শ্রীমুখ গ্রাম। মধ্যখানে পড়ে যায় রামপাশা এলাকায় অবস্থিত মরম কবি হাছন রাজার বাড়ি।

মাত্র ৬০ শতক জায়গা নিয়ে থাকা শ্রীমুখ গ্রামের বাসিন্দা আফতাব আলীর পাঁচ সদস্যের একটি পরিবার। এই পাঁচজনের মধ্যে ১ জন পুরুষ, ৩ জন নারী এবং ১ জন শিশু। ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী এ গ্রামের ভোটার সংখ্যা মাত্র তিনজন। আর স্থানীয়দের দাবি, এই শ্রীমুখ বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গ্রাম।

জানা যায়, দেশভাগের আগে একসময় শ্রীমুখ গ্রামটিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের বসবাস ছিল। কালের বিবর্তনে গ্রামটি ছোট হতে থাকে। একসময় টিকে থাকে এক টুকরো ভূমি আর সেখানে রয়ে যায় একটিমাত্র পরিবার। পার্শ্ববর্তী গ্রামবাসীর মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৬৪ সালে শ্রীমুখ গ্রামে একটি হিন্দু পরিবার বসবাস করত। বসবাস করা হিন্দু পরিবারটি অন্যত্র চলে যাওয়ার সময় বর্তমান বাসিন্দা আফতাব আলীর আপন মামা প্রতিবেশী পশ্চিম নোয়াগাঁও গ্রামের হাবিব উল্লাহর কাছে শ্রীমুখ গ্রামের বাড়িটি বিক্রি করে যায় তারা। হাবিব উল্লাহ মারা যাওয়ার আগে বর্তমান বাসিন্দা আফতাব আলীর মা কটাই বিবিকে দান করেন বাড়িটি। তখন থেকে ওই বাড়িতে বসবাস করছেন আফতাব আলীর পরিবারের লোকজন।

গ্রামটিতে আসা-যাওয়ার জন্য নিজস্ব বা নির্দিষ্ট কোনো রাস্তা নেই। প্রতিবেশী গ্রামের ক্ষেতের জমির আলের ওপর দিয়েই আসা-যাওয়া করতে হয় শ্রীমুখের বাসিন্দাদের। এমনকি সুপেয় পানিরও সংকট রয়েছে এ গ্রামে। বর্ষায় চলতে হয় নৌকায়।

পরিবারের একমাত্র কর্তা আফতাব আলী বর্তমানে প্রবাসে আছেন।

বাড়িতে থাকা তার স্ত্রীর রাহিমা বেগম বলেন, “সরকার অনেক উন্নয়ন করেছে, কিন্তু আমাদের গ্রামটি সরকারের নজরে পড়েনি। গ্রামের নিজস্ব কোনো রাস্তা নেই। অন্যের জমির ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। বাচ্চাদের স্কুলে যেতেও নানা সমস্যায় পড়তে হয়। একমাত্র টিউবওয়েলটিও বর্তমানে প্রায় নষ্ট। সরকারিভাবে কোনো ডিপ টিউবওয়েল না পাওয়ার কারণে পুকুরের পানি পান করতে হয়।”

এ ব্যাপারে বিশ্বনাথ উপজেলার চেয়ারম্যান নুনু মিয়া বলেন, “আমি পরিকল্পনামন্ত্রীর সঙ্গে এ গ্রামটি নিয়ে কথা বলেছি। শ্রীমুখ গ্রামটিকে কিভাবে বিশ্বের বুকে একটি স্বীকৃতি আদায় করে দেওয়া যায় এটি নিয়ে পরিকল্পনা চলছে। আপাতত বিশ্ব স্বীকৃতি, রাস্তা, গ্রামের সৌন্দর্য, পানি এবং স্বাস্থ্য এ বিষয়গুলো নিয়ে আমি কাজ শুরু করেছি।”

বিশ্বনাথ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র দাশ বলেন, “সম্প্রতি বিশ্বনাথের সহকারী কমিশনার (ভূমি) গ্রামটি পরিদর্শন করেছেন। আমরা বিভিন্ন নথিপত্র জোগাড় করছি। তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলে সবচেয়ে ছোট গ্রাম হিসেবে শ্রীমুখের স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা করব।”

এটি কি সত্যিই বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গ্রাম? স্থান পাবে গিনেস রেকর্ডে?

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল বলেন, “দাগ, খতিয়ান এবং মৌজা সবকিছুতেই এটি শ্রীমুখ গ্রাম হিসেবে লিপিবদ্ধ রয়েছে। এ গ্রামের সদস্যসংখ্যা মাত্র ৫ জন। তাই ধরেই নেওয়া যায় এটি বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গ্রাম। কারণ ইতোমধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গ্রাম যেটি সেটি হচ্ছে ক্রোয়েশিয়ার হাম নামের একটি গ্রাম। সেটির জনসংখ্যা ৩০ জন এবং আকারে শ্রীমুখ গ্রাম থেকে অনেক বড়। সে হিসেবে বিশ্ব স্বীকৃতির জন্য এই শ্রীমুখ গ্রাম নিয়ে সরকারের কাজ করা উচিত।”

Link copied!