• ঢাকা
  • বুধবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৫, ৭ মাঘ ১৪৩০, ২২ রজব ১৪৪৬

টাকায় মিলছে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ সনদ


জামালপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২, ২০২১, ০৪:২৬ পিএম
টাকায় মিলছে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ সনদ

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় সানন্দবাড়ীতে তিন হাজার টাকায় মহান মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী মুক্তিযোদ্ধার সনদ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

‘৭১ এর সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ’ নামের এক সংগঠন এ সনদ বিতরণ করছে বিভিন্ন জনের কাছে। সনদে সংগঠনটির কার্যালয়ের ঠিকানা, মোবাইল নম্বর ও সরকারি নিবন্ধন উল্লেখ নেই। এতেই সন্দেহের দানা বাঁধে সংগঠনটির বৈধতা নিয়ে, প্রশ্ন উঠেছে স্থানীয়দের।

উপজেলার সানন্দবাড়ী চরমাদার গ্রামের কয়েক জনের কাছে ‘সহযোগী মুক্তিযোদ্ধার’ সনদ পাওয়া যায়। সঙ্গে ওই সংগঠনের দেওয়া সহযোগী মুক্তিযোদ্ধার আইডিও পাওয়া যায়। সনদ ও আইডি দেওয়ার বিনিময়ে জনপ্রতি খরচ হয়েছে তিন হাজার টাকা।

সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের নাম, পদবী, স্বাক্ষরসহ সিলমোহর দেওয়া রয়েছে। সনদের ওপরে লেখা রয়েছে ঘরে ঘরে জাগ্রত করতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।

কয়েকটি সনদে দেখা গেছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় বয়স অনুযায়ী ওই ব্যক্তিরা শিশু ছিলেন।

এদের মধ্যে সানন্দবাড়ী চরমাদার গ্রামের মৃত ছমেদ আলীর ছেলে আবু সামা। তার সনদের ক্রমিক নং ৬৬৩০। তার সনদটির ইস্যুর তারিখ ১৪ জুলাই ২০২১, জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার জন্ম ১৬ জুলাই ১৯৬৮।

একই গ্রামের মৃত ইয়ার আলীর স্ত্রী মোছা. জবেদার সনদটি একই দিন ইস্যু করা হয়। তার সনদের ক্রমিক নম্বর ৬৬২৭। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ৮ নভেম্বর ১৯৬৮। এই দুইজন মুক্তিযুদ্ধের সময় বয়স ছিল ৩-৪ বছর। এই বয়সে কি করে সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হয়।

এই বিষয়ে সদনধারীদের সঙ্গে কথা বললে সনদপ্রাপ্ত আবু সামা জানান, এ বিষয়ে তিনি বেশি কিছু জানেন না। স্থানীয় ঘেগাপাড়ার হোসেন আলী তিন হাজার টাকার বিনিময়ে ওই সনদ ও আইডি কার্ড দিয়েছেন। তার মতো বিভিন্ন গ্রামের অনেকেই সহযোগী মুক্তিযোদ্ধার সনদ ও আইডি কার্ড নিয়েছেন। আইডি কার্ড ও সার্টিফিকেটধারীরা সরকার থেকে মাসিক ভাতা পাবে জানান সংগঠনের কর্তারা।

সংগঠনটির স্থানীয় প্রতিনিধি হোসেন আলী বলেন, “ ‘৭১ এর সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ’ সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। স্থানীয় হরিপুর গ্রামের কাশেম আমাকে সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সদস্য করে সার্টিফিটেক দেন। শুনেছি সংগঠনটির হেড অফিস ঢাকায়। হেড অফিসে যাওয়ার জন্য আমি অনেকবার কাশেমকে বলেছি। কিন্তু কাশেম আমাকে হেড অফিসে নিয়ে যায়নি।

ঠিকানা সংগ্রহ করে হেড অফিসে গেলে অফিসের লোকজন আমাকে জানিয়েছেন, সরকারের সঙ্গে তাদের আলোচনা চলছে। খুব শিগগিরই আমাদের কাজ হবে।

সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সরদার গোলাম মোস্তফা মুঠোফোনে বলেন, “আমার সংগঠন সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত। যার নং ২৪৯/১৭। এ সংগঠনের সদস্য হতে বা সার্টিফিকেট নিতে টাকা লাগে ১২৭১ টাকা। আমি স্থানীয় প্রতিনিধিকেও ১৭০০-১৮০০ টাকা নিতে বলেছি। এটা স্থানীয় প্রতিনিধিদের ভুলের কারণে হয়েছে।”

এ বিষয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার মো. খাইরুল ইসলাম বলেন, “ ‘সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা ’ কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। সংগঠনটি একটি ভূঁইফোঁড় সংগঠন।”

জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সুজায়েত আলী ফকির বলেন, “এ ধরনের সংগঠনের কারণে বীর মুক্তিযোদ্ধারা হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছে। তাদের কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। আমি এই ধরনের কর্মকাণ্ডে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম আব্দুল্লাহ বিন রশিদ বলেন, বিষয়টি আমি জানি না। বিষয়টি জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Link copied!