ভোলা জেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রোপা আমন আবাদের ধুম চলছে। জমি তৈরি, চাষাবাদ আর চারা রোপণের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। এ বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টির পাশাপাশি আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আমনের ফলন ভালো হবে বলে আশা করেছেন তারা। তবে আশঙ্কা রয়েছে ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে।
সরেজমিন জেলার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শ্রাবণের মাঝামাঝি সময় এসে বৃষ্টি পেয়ে কৃষকরা জমিতে চাষ আর চারা রোপণ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কেউ ধানগাছের আগাছা পরিষ্কার করছেন। আবার কেউ সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করছেন। বিস্তীর্ণ ক্ষেতের সবুজ পাতায় দুলছে কৃষকের স্বপ্ন। বর্তমানে ধান গাছের পরিচর্যায় দম ফেলার সময় নেই কৃষকদের। রোদ, ঝড়, বৃষ্টিতে একমনে কাজ করছেন কৃষকরা। কাজের ফাঁকে মাঠে বসেই খাচ্ছেন সকালে নাশতা আর দুপুরের খাবার।
কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জেলার সাত উপজেলায় ১ লাখ ৭৯ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৯৩২ মেট্রিক টন আমন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২৪ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে ৬৭ হাজার ৭৬ মেট্রিক টন, দৌলতখান উপজেলায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে ৪৫ হাজার ২৮০ মেট্রিক টন, বোরহানউদ্দিন উপজেলায় ১৮ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে ৪৯ হাজার ৪৭৪ মেট্রিক টন, তজুমদ্দিন উপজেলায় ১১ হাজার ৯৯০ হেক্টর জমিতে ৩০ হাজার ১৪১ মেট্রিক টন, লালমোহন উপজেলায় ২৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ৬৪ হাজার ৭৭৪ মেট্রিক টন, চরফ্যাশন উপজেলায় ৭২ হাজার ৮৫ হেক্টর জমিতে ২ লক্ষ ৪৭ হাজার ২৫ মেট্রিক টন ও মনপুরা উপজেলায় ১২ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে ২৮ হাজার ৪৬২ মেট্রিক টন আমন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ভোলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৮০ শতাংশ জমিতে রোপা আমন চাষ হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। শ্রাবণ থেকে শুরু হলেও ভাদ্র মাসজুড়ে চলবে চারা রোপণের কাজ। আবার কার্তিক মাসের শুরু থেকে অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে আমন ধান কাটা এবং মাড়াই করা শেষ হবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গোলায় উঠবে সোনালি ফসল, এমনটাই প্রত্যাশা কৃষকদের।
ভোলা সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের কৃষক আবদুল কাদের জানান, চলতি মৌসুমে তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন। পর্যাপ্ত বৃষ্টির পানি পাওয়ায় চাষাবাদে কোন অসুবিধা হয়নি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ফলনও বেশ ভালো হবে।
উপজেলার ভেলুমিয়া ইউনিয়নের কৃষক কেরামত আলী সুজা ও জামাল হোসেন জানান, পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে কৃষি অফিসের পরামর্শে কীটনাশক প্রয়োগ, সার দেওয়া ও আগাছা পরিষ্কারে ব্যস্ত রয়েছেন কৃষকরা। কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কাঙ্ক্ষিত ফসল ঘরে তুলতে পারবেন।
তবে ধানের ন্যায্য মূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছেন কৃষকরা। তারা বলছেন সরকারের কাছে ধান বিক্রিতে নানা জটিলতার কারণে বাধ্য হয়েই ব্যাপারীদের কাছে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। সরকার সহজ উপায়ে কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনে নিলে কৃষকের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত হত বলে মনে করছেন কৃষকরা।
উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের নবিপুর গ্রামের কৃষক আবদুল আজিজ ও সালাম বেপারী জানান, খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে শুকানো, ফ্যানিং করা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, ময়েশ্চারসহ নানা রকম ঝামেলা পোহাতে হয়। ধান দেওয়ার পরও টাকা উঠাতে গিয়ে ধাপে ধাপে বিড়ম্বনা শিকার হতে হয়। আর খোলা বাজারে ঝামেলা ছাড়াই ধান বিক্রি করা যায়। তাই বাধ্য হয়ে কম দামে তারা খোলা বাজারে ধান বিক্রি করেন। সহজ উপায়ে কৃষকের কাছ থেকে সরকারের ধান কেনার বিষয়টি নিশ্চিত করা না গেলে প্রকৃত প্রান্তিক কৃষকরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হবেন।
ভোলা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার পাশাপাশি কৃষকরা আমন ধানে লাভবান হবে। এবছর জেলার সাত উপজেলায় ১ লাখ ৭৯ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ চাষিদের সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এছাড়া কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে এ বছরও ২৬ টাকা কেজি হারে প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা হবে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তা।