চলমান বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে দুর্দান্ত জয়ের পর দ্বিতীয় ম্যাচেই যেন মুদ্রার উল্টো পিঠ দেখলো বাংলাদেশ দল। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের কাছে ব্যাটারদের চরম ব্যর্থতায় ১৩৭ রানের পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে সাকিবের দল। ইংল্যান্ডের দেয়া ৩৬৫ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে ২২৭ রানেই গুটিয়ে যায় টাইগাররা। ম্যাচ সেরা হয়েছেন ডেভিড মালান।
টস জিতে আগে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু তার এ সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল তা প্রথম পাওয়ার প্লেতেই টের পায় বাংলাদেশ। ইংলিশদের দুই উদ্বোধনী ব্যাটার দেখেশুনে উইকেটের চারপাশ থেকে রান আদায় করে নিয়েছে। বোলিং পরিবর্তন করেও যখন ব্রেক থ্রু আনতে পারছিলেন না তখন বল হাতে তুলে নেন সাকিব। এতে সফল হন তিনি।
দলীয় ১১৫ রানের সময় বেয়ারেস্টোকে বোল্ড করেন সাকিব। তার আগে বেয়ারেস্টো ৫৯ বলে ৮ চারের সাহায্যে ৫২ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন। এটি ছিল তার ক্যারিয়ারের ১৬তম হাফ সেঞ্চুরি। আর আজকের ম্যাচটি ছিল ওয়ানডেতে তার শততম ম্যাচ।
অন্যদিকে, শরিফুল, সাকিব, মুস্তাফিজদের তুলোধুনো করে মালান তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ শতক তুলে নেন। এরপরও এগিয়ে যাচ্ছিলেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। তবে শেষ পর্যন্ত শেষ মেহেদীর বলে বোল্ড হয়ে ১৪০ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন মালান। মালান, বেয়ারস্টো ছাড়াও ফিফটির দেখা পেয়েছেন জো রুট। ৬৮ বলে ৮ চার এবং এক ছক্কার মারে ৮২ রান করেছেন রুট।
পরের গল্পটা শরিফুল ইসলাম ও শেখ মেহেদির। এমনিতে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জশ বাটলারকে ফিরিয়েছিলেন তিনি। পরে জাগিয়ে তোলেন হ্যাটট্রিক সম্ভাবনাও। টপ এজ হয়ে জো রুট ক্যাচ দেন মুশফিকুর রহিম, ততক্ষণে তিনি করেছেন ৬৮ বলে ৮২ রান। পরের বলেই লিয়াম লিভিংস্টোনকে গোল্ডেন ডাক উপহার দেন শরিফুল। হ্যাটট্রিকটা অবশ্য শেষ অবধি পূরণ করতে পারেননি তিনি।
অন্যপ্রান্তে থাকা হ্যারি ব্রুক এরপর হাত খুলতে শুরু করেছিলেন। তবে ৪৫তম ওভারে তাকে লিটন দাসের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান শেখ মেহেদি হাসান। বিদায়ের আগে ১৫ বলে ২০ রান করেন ব্রুক। এরপর স্যাম কারানকেও (১১) ফেরান মেহেদি। কারান উড়িয়ে মারেন লং অফের দিকে। সেখানে থাকা শান্ত দৌড়ে গিয়ে লাফিয়ে দারুণ এক দিৃষ্টি নন্দন ক্যাচ। এরপর আদিল রশিদ (১১)কে ফেরান এই স্পিনার এবং ১৪ রান করা ক্রিস ওকসকে বিদায় করেন তাসকিন আহমেদ। তবে ইংল্যান্ডকে অলআউট করা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশের হয়ে ৮ ওভারে ৭১ রান দিয়ে ৪ উইকেট পেয়েছেন শেখ মেহেদী। আর শরিফুলের ঝুলিতে গেছে ৩ উইকেট। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও তাসকিন আহমেদ পেয়েছেন একটি করে উইকেট।
৩৬৫ রানের জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারে লিটন দাস ভালো শুরু এনে দেন। কিন্তু পরের ওভারেই স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন আরেক ওপেনার তানজিদ তামিম। রিস টপলির বল ঠিকমতো ব্যাটে নিতে না পারায় স্লিপে ক্যাচ উঠে যায় এবং সেই সুযোগ লুফে নেন জনি রেয়ারেস্টো।
তামিম আউট হওয়ার পরের বলেই পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এ দিন রানের খাতা খুলতেই পারেননি তিনি। দ্বিতীয় ওভারে টানা দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। এরপরে উইকেটে এসে টপলিকে হ্যাটট্রিকের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেন টাইগার দলপতি সাকিব আল হাসান। কিন্তু তিনিও ১ রানের বেশি করতে পারেননি। টপলির করা ৫.৪ ওভারে সাকিব ফিরেছেন সরাসরি বোল্ড হয়ে।
বাংলাদেশি ৩ ব্যাটসম্যানকে টপলি তুলে নেয়ার পরে দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন ওকস। তিনি ফেরান মিরাজকে। ৭ বলে ৮ রান করে সাজঘরে ফেরেন মিরাজ। ৪৯ রানে ৪ উইকেট হারানোর পরে লিটনকে সঙ্গ দিতে উইকেটে আসেন মুশফিকুর রহিম। লিটন-মুশফিক ৭৫ বলে ৭২ রানের জুটি গড়েন। এরপরে ক্রিস ওকসের অফ কাটারের ফাঁদে পড়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেন লিটন। তিনি ৬৬ বলে ৭৬ রানের ইনিংস খেলে সেঞ্চুরির আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়েন।
তখনও বাংলাদেশের জয়ের আশা ছিল। কিন্তু দলীয় ১৬৪ রানে মুশফিক আউট হলে সে আশা ক্ষীণ হয়ে আসতে থাকে। বাংলাদেশি উইকেটরক্ষক ফিরেছেন টপলির বলেই। ডিপ থার্ডে থাকা আদিল রশিদের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ৬৪ বলে ৫১ রান করেছেন তিনি।
মুশফিকের পরে তাওহীদ হৃদয় ৬১ বলে ৩৯ ও শেখ মেহেদী ৩২ বলে ১৪ রান করে আউট হলে রান ব্যবধান কমানোর সম্ভাবনাও শেষ হয়ে যায়। শেষ দিকে তাসকিনের২৫ বলে ১৫, শরীফুলের ১২ এবং মুস্তাফিজের ৯ বলে অপরাজিত ৩ রানশুধু ব্যবধান কমায় আর কিছু না। বাংলাদেশের ইনিংস থামে ২২৭ রানে।