দেশের সবচেয়ে সফল ও জনপ্রিয় ক্রিকেটার হিসেবে সাকিব আল হাসানের নামই ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের মুখপাত্র। তবে সময়ের স্রোতে সেই জনপ্রিয়তা এখন ইতিহাসের পাতায় স্থান নিয়েছে।
গত এক বছরে বদলে গেছে অনেক কিছু। রাজনৈতিক বিতর্ক, সমালোচনা, মামলার জট—সব মিলিয়ে দেশের ক্রিকেটে সাকিবের অধ্যায় যেন ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে যাচ্ছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় নীরব অবস্থান নেওয়ায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন সাকিব। এর পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্টে বাংলাদেশের ক্ষমতা পরিবর্তনের পর থেকে কার্যত দেশে ফেরা বন্ধ হয়ে যায় তার। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি, আর সেই সূত্রেই আন্দোলনের পর তার বিরুদ্ধে দেশে একাধিক মামলা হয়—যার মধ্যে একটি হত্যা মামলা বলেও জানা গেছে। ফলে দেশে ফেরার পথ আপাতত বন্ধই রয়ে গেছে তার।
এই প্রেক্ষাপটে জাতীয় দলেও তার ফেরার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
জুলাই আন্দোলনের সময় কানাডায় এক ভক্তের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। একই সময়ে পরিবারের সঙ্গে কানাডায় সময় কাটানোর ছবি ভাইরাল হলে ক্ষুব্ধ হন সমর্থকরা।
সেই সময় সাকিব দাবি করেছিলেন, তিনি দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। সম্প্রতি ক্রিকবাজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি একই কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
তার ভাষায়, “এটা এমন এক সময় ছিল যখন ঘটনাটা আমার বিপক্ষে চলে যায়। ভক্তরা ভিন্ন কিছু আশা করেছিল। আমি তখন বাড়ি থেকে অনেক দূরে ছিলাম, আর পরিস্থিতি সম্পর্কেও জানতাম না। তাদের প্রতিক্রিয়া আমি বুঝি এবং শ্রদ্ধা করি, তবে এজন্য আমার কোনো অনুশোচনা নেই। সময়ের সঙ্গে মানুষ বিষয়টা বুঝতে শুরু করেছে।”
ক্যারিয়ারের শেষভাগে এসে সাকিবকে ঘিরে নানা ট্রোলও হয়—কখনো বাণিজ্যিক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া, কখনো শো-রুম উদ্বোধনে অংশ নেওয়া নিয়ে। এমনকি একসময় মজার ছলে তার নাম হয়ে যায় ‘শো-রুম আল হাসান।’
তবে সাকিব এসব নিয়ে তেমন পাত্তা দিতে নারাজ। তার ভাষায়, “এসব আসলে মিডিয়ার বানানো গল্প। আমি যেসব কাজ করেছি, সেগুলো বাংলাদেশে তখন নতুন ছিল। মানুষ অভ্যস্ত ছিল না, তাই হজম করতে পারেনি। এখন অন্য কেউ করলে ততটা সমালোচনা হয় না। আমি প্রথম ছিলাম—ভালো বা খারাপ—দুটোই আমার ভাগে এসেছে।”
সমালোচনা নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে তিনি বলেন, “মানুষের নিজস্ব মতামত থাকতেই পারে। তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। কে কী ভাবলো তাতে আমার কিছু যায় আসে না, কারণ আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমার কাছের মানুষরা আমার সম্পর্কে কী ভাবে। তারা কেউ এমনভাবে ভাবে বলে আমার মনে হয় না।”
সাকিবের পরিবার আগেই যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হয়েছেন। দেশে ফেরা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তিনিও এখন পরিবারের সঙ্গে মার্কিন মুলুকে রয়েছেন। জাতীয় দলের বাইরে থাকলেও থেমে নেই তার ক্রিকেট। খেলছেন বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে; সম্প্রতি অংশ নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের মাইনর লিগ ক্রিকেটে, যেখানে তিনি ছিলেন সবচেয়ে বড় তারকা।
সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে সাকিব বলেন, “সত্যি বলতে দারুণ উপভোগ করেছি। অনেক স্থানীয় ক্রিকেটারের সঙ্গে দেখা হয়েছে, যাদের ক্যারিয়ারের শুরু দেখেছিলাম। অনূর্ধ্ব–১৯ সময়ের কথা মনে পড়ে গেছে। ছোটবেলার মতো এমন পরিবেশে খেলতে পেরে অসাধারণ লেগেছে, যেন পুরনো দিনে ফিরে গিয়েছি।”