বেজোড় শালিক দেখলে দুঃখ, আর জোড় শালিক দেখলে আনন্দ আছে কপালে। এমন প্রচলিত কথা নিয়ে ছোটবেলায় খেলতাম, বিশেষ করে স্কুলের মাঠে তখন প্রচুর শালিকের আনাগোনা দেখতাম। দোয়েলের দেখাও মিলত। আজকাল জাতীয় পাখির দেখা তো মেলেই না, শালিকের সুন্দর হলুদ ঠ্যাংও চোখে পড়ে না।
আগে সবুজ গাছের আড়ালে টিয়া পাখির লেজ ঝুলতে দেখতাম অহরহ। এখন নগরে গাছগাছালি কাটা পড়েছে, জলাশয় হয়েছে ভরাট। আকাশে ইদানীং শুনি শুধু চিলের তীক্ষ্ণ চিৎকার। আজকাল এরা জানালার কার্নিশে এসেও বসে। আগে যেমন দেখতাম কাক বা চড়ুইকে। মানুষের কাছে তারা আসত খাবার খেতে। এখন কোথায় গেছে তারা জানি না। ওদের পরিবর্তে চিলের মতো শিকারি পাখি ভয়ডর ভুলে মানুষের কাছাকাছি আসছে। দুদিন পরে শকুনও লোকালয়ে ঢুকে যাবে।
আলফ্রেড হিচককের ‘দ্য বার্ডস’ সিনেমার মতো দশা হলেও অবাক হব না। বনাঞ্চল নেই, জলাশয় নেই, খাদ্যাভাবে এই পক্ষীকুল আজ দিশাহারা। এরই ভেতর মৌমাছিরা চায়ের দোকানের ডিব্বায় রাখা চিনি থেকে মধু সংগ্রহ করছে। এর কারণও ওই একটাই, ফুল-ফলের গাছ কমে গেছে। ছাদ বাগান করে, বিচ্ছিন্ন দু-একটা গাছ লাগিয়ে এই অভাব বা সংকটের সুরাহা করা যাবে না। প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ও জলাশয় রক্ষা ও বর্ধনের কোনো বিকল্প নেই। আমরা এসব জানি, তারপরও প্রকৃতিকে আমরা পুঁজির ভোগে যেতে দিচ্ছি, নিজেদের সুযোগ-সুবিধার কারণে।
স্বল্পমেয়াদি সুবিধার জন্য আমরা ধ্বংস করছি ভবিষ্যতের সবকিছু। এই লেখাটি যখন লিখব বলে ভাবছি, তখন খেয়াল করলাম আজ বিশ্ব ধরিত্রী দিবস। এটা দেখে মনে হলো গোটা মানবজাতি কি ভণ্ডামিটাই না করছে। একদিকে প্রকৃতিকে ধ্বংস করার সকল আয়োজন টিকিয়ে রেখে, অন্যদিকে লোকদেখানো ধরিত্রী দিবস পালন করাটা সত্যিই হাস্যকর। বাংলাদেশের জন্য তো এটা শুধু হাস্যকর নয়, নির্লজ্জতার প্রকট প্রদর্শনও বটে।








































