• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০১ জুলাই, ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২, ০৫ মুহররম ১৪৪৬

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কোচিং কি ‘দুধভাত’


অঘোর মন্ডল
প্রকাশিত: আগস্ট ২৬, ২০২২, ০৯:১০ এএম
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কোচিং কি ‘দুধভাত’

ক্রিকেট, ক্রিকেটার, না কোচ—বাংলাদেশ ক্রিকেটে এই মুহূর্তে ‘সাবজেক্ট’ কী? অবশ্যই কোচ। আর তার নাম রাসেল ডমিঙ্গো। তাই রিপোর্টাররা তার সাবজেক্টের সঙ্গে চুইংগামের মতো সেঁটে থাকার চেষ্টা করবেন, এটাই স্বাভাবিক। এবং হচ্ছেও তাই। দুই দিন বাদে এশিয়া কাপ শুরু। তার আগে বাংলাদেশ ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছেন এমন একজন, যিনি দলের সঙ্গেই নেই! অথচ তিনি লেখা না-লেখা এক আখ্যান হয়ে যাচ্ছেন।

তথ্য সত্য, রাসেল ডমিঙ্গো হেড কোচ হিসেবে পদত্যাগ করেছেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত এবং প্রচারিত সংবাদকে বিসিবি বলেছে, ভাষাগত ভুল তথ্য! তিনি পদত্যাগ করেননি। তাকে বাদও দেওয়া হয়নি। তার সঙ্গে চুক্তি আগামী বছরের নভেম্বরের শেষ দিন পর্যন্ত। তবে তিনি পদত্যাগ করলে তিন মাসের নোটিশ দিতে হবে। একইভাবে তাকে বাদ দিতে হলেও তিন মাস সময় দিতে হবে।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট এবং রাসেল ডমিঙ্গো এখন আর এক পথের পথিক নেই। সময়ের সঙ্গে দুই পক্ষের দূরত্বটাই বাড়বে। বাড়তেই থাকবে। দুই পক্ষই যদি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরেও দাঁড়ায়, সেই দূরত্ব কমবে না। প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে কেন আর সময়ক্ষেপণ! উত্তরে যে যা-ই বলুন, এটা আসলে ডমিঙ্গো আখ্যানে স্মৃতির জানালা খুলে রাখা। তারপর সময়ে ঠিকই সেখানে কপাট এঁটে দেওয়া হবে। নতুন কাউকে নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠবে। আর তার মাঝে হারিয়ে যাবে ডমিঙ্গো নামটা! বাংলাদেশ ক্রিকেটে কোচবিষয়ক অতীতচারণ সে কথাই বলে। অনেক ভারী ভারী নাম নীরবে দেশের ফ্লাইট ধরেছেন। হয়তো সেই বিমানে বসে ভাবতে ভাবতে দেশের মাটিতে পা রেখেছেন, ক্রিকেট এমনই। কখনো কখনো নিষ্ঠুর, নির্মম, নির্দয় আচরণ করে!

ডমিঙ্গো আর ফিরবেন কি না, প্রশ্নটা সেখানে। তার পদত্যাগপত্র বিসিবিতে পৌঁছাবে কি ই-মেইলের মাধ্যমে? যদিও বিসিবির ফিসফিসানি কুঞ্জে শোনা যায়, দলে নিজের আধিপত্য এবং কর্তৃত্ব ধরে রাখতে ডমিঙ্গোর রগচটা ভাবের কারণে সিনিয়র ক্রিকেটার-কোচিং স্টাফ প্রায় সবার সঙ্গে শীতল সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। তিনি নিজের জায়গা ঠিক রাখতে দলের গতিপথ নির্ধারণ করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত জিম্বাবুয়েতে টি-টোয়েন্টির পর ওয়ানডেতে মুখ থুবড়ে-পড়া, তাতেই বেজে যায় ডমিঙ্গোর বিদায় ঘণ্টা। তিনি বুঝে ওঠার আগেই একজন কনসালট্যান্ট নিয়োগ দেওয়া হয়। বাদ দেওয়া হয় হেড কোচের পদ।

একসময় ক্রিকেটে কোচেরই দরকার ছিল না। এখন একজন নয়, প্রতি বিভাগে আলাদা আলাদা কোচ। এটাই আধুনিক ক্রিকেটের রীতি, চাহিদা। ক্রিকেট এখন পাল্টে গেছে। যে কারণে একাধিক কোচ নতুন কিছু নয়। তবে এশিয়া কাপ অভিযানে বাংলাদেশ এক নতুন ‘কনসেপ্টের’ জন্ম দিয়ে আমিরাতে গেছে। তাদের নাকি হেড কোচের দরকার নেই। বোর্ড সভাপতি আছেন। টিম ডিরেক্টর আছেন। ক্রিকেট অপারেশনসের চেয়ারম্যান আছেন। সবাই থাকবেন। তারপর আবার হেড কোচ কেন?

এই ‘কেন’-র উত্তর জটিল। না, শুধু জটিল নয়। খুবই জটিল। আবার খুবই সহজ। দল সুপার ফোরে উঠতে না পারলেই বলা হবে, আমরা সবাই ছিলাম। কিন্তু ক্রিকেটাররা খেলতে না পারলে আমরা কী করব! আমরা তো আর বাইশগজে ওদের হয়ে লড়াই করে দিতে পারব না! পারফরম্যান্সটা তো ওদেরই করতে হবে। আমরা এই ফরম্যাটের জন্য নতুন একজন হেড কোচ খুঁজছি। আর সুপার ফোরে পৌঁছালে বলা হবে, দেখলেন! হেড কোচ ছাড়াই তো দলে একটা পরিবর্তন এলো।

আসলে আমরা কখনো কখনো অন্ধকারে একটা ভুল পা ফেলি। ভুল লোকের হাত ধরে ফেলি। তখন সবকিছুকে মনে হয় ‘দুধভাত’। আপাতত বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কোচিংটাও যেন দুধভাত হয়ে গেছে।

লেখক : সিনিয়র জার্নালিস্ট ও কলামিস্ট

Link copied!